চ্যাপ্টার ০৬

332 13 0
                                    

চিত্রকর ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে সিগ্রেট ধরালো। দাঁতে কামড়ে ধরে মোবাইল ফোনে সময় দেখলো, হাতে এখনও ঘন্টা তিনেক আছে। কাজ সারতে তো বিশ মিনিটও লাগবে না।
রাস্তার ওপাশের বাসাটার লাইট নেভানো। ছেলেটা কি ঘুমুচ্ছে? একরাশ ধোঁয়া ঠোঁট ফাঁক করে চিত্রকর বের করে দেয়। একটা আল্পনা গড়ে উঠে মুখমন্ডলের চারিদিকে। কিভাবে ঘুমুতে পারে ছেলেটা? ওর তো ঘুম আসার কথা না। বের হচ্ছে না কেন?
হুট করেই রুমের লাইট জ্বলে উঠে। বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে চিত্রকরের হাসি বিস্তৃত হয় রাস্তায় সেই লাইটের আলো পড়তে দেখে।
চিত্রকর সিগ্রেট শেষ না করেই পায়ের জুতা দিয়ে মাড়িয়ে দেয়। ঠিকঠাক ভাবেই এগোচ্ছে ও, এটা জানার পর নিজের ভেতরে একটা তৃপ্তি কাজ করে।
গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে হাঁটা শুরু দিল। হেঁটে যেতে যেতেই সময়টা পার হয়ে যাবে। এরকম জ্যোৎস্নামুখর রাতে সুনসান রাস্তায় হাঁটতে চিত্রকরের ভালোই লাগে।

--*--

“তিনটার আগে ফিরতে পারলেই হয়। আম্মু ঐ সময় পানি খাইতে উঠে।”
সাইকেলের পিছনে বসে তানভীর হিসেব করছে কতক্ষণ লাগতে পারে ওদের। ইচ্ছে করেই আইদাদ গাড়ি আনেনি। যেই রাস্তা দিয়ে ওর যাবে সেখানে মটরসাইকেলও বাগড়া দিতে পারে।
“তিনটার আগেই চলে আসবো। অতক্ষন লাগবে না।”
শর্টকাট দিয়ে আধঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে গেল কাংখিত স্পটে। ভাগ্যিস রক্তশুন্যতার রোগী তানভীরের ওজন বেশি না। তানভীরের সাইকেল তানভীরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে টর্চ হাতে আইদাদ সামনে এগোয়। জ্যোৎস্না রাতে খোলা মাঠে টর্চ জ্বালালো না।
“পায়ের ছাপ?”
তানভীর সাইকেল স্ট্যান্ড করিয়ে রেখে মাথা নিচু করে মাটিতে তাকায়।
“পুলিশ খুঁজেছে, পায়নি”
রাতের ঠান্ডায় মাটি শক্ত হয়ে আছে। দিনের বেলায় কয়েকজন অসতর্ক পুলিশের বুটের ছাপ যা রয়ে গেছে।
“আমরা তাহলে কী খুঁজছি?”
এই রাতের বেলা শুধুমাত্র অ্যাডভেঞ্চার হবে বলেই তানভীর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেড়িয়েছে। জীবনের ঝুঁকিই তো, একবার আম্মা টের পেলে আব্বা ইউকে থেকে এসেও রক্ষা করতে পারবে না।
“মাঝে মাঝে কিলাররা স্পটে ফিরে আসে, কিছু রেখে গেলে সেটা ফেরত নিতে।”
আইদাদ চারিদিকে তাকায়। সে নিজেও জানেনা কি জন্য এখানে এসেছে। কিন্তু সেটা এখন তানভীরকে বলার মানে হয়না।
“তার মানে তুইও কিলার হতে পারোস!”
তানভীরের কথায় আইদাদ আস্তে করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে।
“হ। তোরে মারার জন্য এখানে ডেকে আনছি।”
-“ধরা পড়ে যাবি। আমি বাসায় না ফিরলে সবার আগে পুলিশ তোকেই ধরবে।”
“আচ্ছা, খুনী লাশটা কোন দিক দিয়ে আনসে এখানে?”
-“আমরা যেইদিক দিয়ে আসলাম?”
“আমরা এখানকার লোকাল। লোকাল নাহলে এই শর্টকাট জানার কথা না।”
-“আমার মনে হয়না খুনী লোকাল কেউ।”
একটু আগেও আইদাদকে খুনী বানাতে তৎপর হয়ে উঠা তানভীর যুক্তি দেখালো,
“এক এলাকা থেকে কয়টা সিরিয়াল কিলার বের হবে, বাপ? গুগল ম্যাপ ইউজ করসে মে বি।”
আইদাদ উঁচু শালবনের দিকে তাকালো, দিনের বেলা যেখান থেকে নজরদারি করছিল।
“কষ্ট হবে, হউক। সহজে কোন কিছু অ্যাচিভ করা যায় না। এটা কিন্তু বিশাল একটা অ্যাচিভমেন্ট!”
বাবার কন্ঠ মাথার ভেতরে প্রতিধ্বনিত হয়। আইদাদ শালবনটার দিকে এগোতে থাকে। তানভীর পেছন থেকে বলে,
“সত্যিই যদি খুনীটা ফেরত আসে?”
“চিন্তা করিস না। আমার বাপের নাম শুনলেই ছেড়ে দিবে।”
“আচ্ছা ...?”
তানভীর বুঝে উঠেনা প্রশ্নটা করবে কি না। সাধারনত কোন কিছু বলার আগে ইতস্তত করা ওর স্বভাবে পড়ে না, আইদাদ সরকারি বনায়ন প্রকল্পের অংশ কৃত্রিম শালবনে ঢুকে জিজ্ঞেস করল।
-“কী?”
“ইয়ে ... তুই কি কখনো কাউকে মারসোস?”
-“নাহ।”
আইদাদ জানে তানভীরকে কোন প্রমান দিতে হবে না। আইদাদ যখন বলেছে মারেনি, তখন অবশ্যই মারেনি।
“পেপারে পড়লাম মহিলারে রেইপ করা হইসিলো।”
তানভীর এইবারের প্রশ্নটা করতে গিয়েও করে না। টর্চের আলোতে দুইজন কি যে খুঁজে নিজেরাও জানে না। বিরক্তি কাটাতেই একাই অহেতুক কথা বলতে থাকে।
“এত্ত মশা! লোশন মেখে আসা লাগতো।”
-“হুঁ। এদিক দিয়েই বডি নিয়ে আসছে।”
এতক্ষণে আইদাদের মুখ দিয়ে শব্দ বের হয়। ওর নিজেকে কষে একটা লাত্থি মারতে মন চাইছে। দিনের বেলা এখানে দাঁড়িয়ে পুলিশের মুড়িভাজা না দেখে যদি সার্চ করতো তাহলে কিছু না কিছু এভিডেন্স অবশ্যই পেয়ে যেতো।
“একটা লাশ নিয়ে এত উঁচুতে উঠবে কেন?”
-“তোর এই প্রশ্নটাই যেন কোন পুলিশ ভাবে আর এখানে কিছু না খুঁজে, সেজন্য।”
আইদাদের কথায় তানভীর কি বুঝলো কে জানে,
“তাহলে রাস্তার পাশের ঐ খাড়ি দিয়ে আনলেই পারতো, কেউ সন্দেহ করতো না।”
-“তুই ব্যাটা একটা জিনিয়াস!”
আইদাদ একটু উঁচু গলাতেই বলে জোরে হাঁটা শুরু করে। তানভীর বুঝে এটা কোন সারকাজম ছিল না। নতুন উদ্দ্যমে সেও এগিয়ে যায়। তবে খাড়ির সামনে গিয়ে উদ্দ্যম হারিয়ে যেতে সময় নেয় না,
“সিরিয়াসলি দোস্ত, এই দিক দিয়ে একটা আস্ত লাশ তুলবে কেউ?”
খাড়িটা মিটার পাঁচেক নিচ দিয়ে যাচ্ছে। আইদাদ ঠোঁট কামড়ায়। সিক্সথ সেন্স বলছে এখান দিয়ে আনা হয়েছে বডিটা। ও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেও অবিশ্বাস নিয়েই তানভীর টর্চের আলোয় ‘কিছু একটা’ খুঁজে থাকে। আইদাদ ঘড়ি থেকে, কেবল সাড়ে এগারোটা।
“এইটা কী?”
তানভীরের কাছে দৌড়ে যায় আইদাদ, মানা করার আগেই তানভীর জিনিসটা হাতে নিয়ে নেয়। ওরই বা কী দোষ? অনেক পুলিশ কর্মকর্তাও উত্তেজনায় এই সময়ে গ্লভস পড়ার কথা মাথায় রাখতে পারেনা।
“আংটি একটা!”
ওরা জানে না এটা কার আংটি, শুধু মাত্র আন্দাজের বসেই নতুন চকচকে করতে থাকা আংটিকে এভিডেন্স হিসেবেই ধরে নেয়।
“খুনী ইচ্ছে করেই এভিডেন্স রেখে যায়। অনেক এভিডেন্স। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে অনেক এভিডেন্স রেখে যেতে হয়।”
আইদাদ বিড়বিড় করে। তানভীরের কানে ওসব যায় না। টর্চের আলোতে ভালো করে দেখে আংটিটা,
“কি জানি লেখা।”
আইদাদ ঝুঁকে দেখে,
“আরে নাহ, লেখা না। পায়ের আংটি, ব্যাটা। এমনেই ডিজাইন করা।”
“ইসস ...ছিহ!”
একটা লাশের পায়ের আংটি হাতে নিয়ে আছে ভাবতেই তানভীরে গা গুলিয়ে উঠে। সাথে সাথে আইদাদের হাতে ধরিয়ে দেয় ওটা। আইদাদ ঠোঁট টিপে হেসে জিন্সের পকেটে ঢুকায় ওটা।
“আরো কিছু পেতে পারি, চল খুঁজি।”
এইবার আইদাদ নিজেও এভিডেন্স খোঁজায় মন দেয়। অনেক এভিডেন্স রেখে গেছে খুনী, অনেক।

উত্তরাধিকার Where stories live. Discover now