চ্যাপ্টার ১৪

286 19 0
                                    

‘কী করতে যাচ্ছিলাম আমি!’
আইদাদ মনে মনে ভাবে। থরথর করে হাত কাঁপছে। আরেকটু হলেই মস্ত বড় ভুল করা হত। ভুল না; পাপ! সেলিনা আন্টি বারান্দা থেকেই জিজ্ঞেস করে,
“কে ছিল ওটা?”
-“চোর!”
তাৎক্ষণিকভাবে মিথ্যের আশ্রয় নেয় আইদাদ। ফ্লোর থেকে উঠে আন্টির কাছে যায়,
“ধরার আগেই পালিয়ে গেল।“
আইনজীবী মহিলা হয়তো খুব ভালোভাবেই আইদাদের মিথ্যে ধরতে পারে। খুনী আজমের বাসায় চোর আসার কথা হয়তো তার বিশ্বাসযোগ্য হয় না। কিন্তু ঊনি চোরের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন করেন না। আইদাদ কথা না বাড়িয়ে বাইরে রুমের ভেতরে চলে আসে,
“ডাক্তার ডাকা দরকার। দাদীকে কিছু খাইয়েছে বোধহয়।“
মেইন সুইচ অন করে দেয়া মাত্র এক তলা বাসাটি যেন প্রাণ ফিরে পায়। ডাক্তার বিদেয় দিয়েও সেলিনা আন্টি চলে যান না।
“নতুন বুয়ার রান্না কিরকম?”
-“হ্যাঁ। ভালোই।“
দাদীর পাগলামির জন্য হোক কিংবা বাড়ির কর্তার ইতিহাস; এই বাসায় কোন বুয়াই কাজ করতে চায় না। সেলিনা আন্টি কীভাবে যে ম্যানেজ করেন, উনিই জানেন।
“আইদাদ, তুমি চাইলে এখনও আমার বাসায় চলে আসতে পার।“
একেবারে শুরু থেকেই এই মহিলা আইদাদের সকল দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে রেখেছে। এমনকি বেশ কয়েকবার চেয়েছেও ওকে নিজের সাথে রাখতে। বরাবরের মতই আইদাদ মাথা নাড়ে,
-“দাদীকে রেখে যাওয়া উচিৎ হবে না।“
অজুহাতটা কি ঠুনকো হয়ে গেল না? আইদাদ নিজে নিজেই ভাবে। এক ঘন্টা আগেও বৃদ্ধাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিল ও।
“ভালো কোন বৃদ্ধাশ্রমে উনার ব্যাবস্থা করা যাবে। এখন তোমার আরেকজনের দায়িত্ব নেয়ার বয়স না।“
মোরশেদ আংকেলের সাথে যে সেলিনা আন্টির এই ব্যাপারে আলাপ হয়েছে তা আইদাদ বুঝতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে সেই ব্যাপারে মাথা ঘামাতে ওর মোটেও ইচ্ছা করছে না। যেই লোকটা এসেছিল সেই যে খুনী তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এত কিছু সে জানে কীভাবে?
মাহবুব আজমের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্যগুলো কখনও ওয়েবসাইটে আসেনি। আইদাদের মত মিডিয়াও জানে ওর মা পালিয়ে গিয়েছেন, আত্মগোপনে আছেন। কিন্তু এই লোক সত্যটা জানে।
ঠান্ডা মাথায় কিছুক্ষণ চুপচাপ চিন্তা করতে ভালো হত। সেলিনা আন্টি তা দিচ্ছেন না। শেষমেশ আইদাদ বলেই বসলো,
“আমি কি আপনাকে বাসায় দিয়ে আসবো?”
এতক্ষণ ধরে বলা কথাগুলোর একটিও আইদাদের কানে ঢুকেনিবু ঝতে পেরে সেলিনা আহমেদ একটা নিঃশ্বাস ফেললেন,
“মাহফুজকে বলেছি। একটু পর আসবে।“
সাংবাদিকের পর যদি কারো উপর সন্দেহ করা যায় সেটা হল এই মাহফুজ। জয়েন দেয়ার পর থেকেই যেন আইদাদের পিছনে লেগে আছেন। এখন আবার দেখা যাচ্ছে ওর আইনজীবীর সাথেও ভালো খাতির। আচ্ছা, ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠ ওকে মিসলীড করার জন্যও তো হতে পারে।
বাবা থাকলে ভালো হত।
চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দেয় আইদাদ।
প্যাঁচ খুলতে টানাটানি করা যাবে না। তাতে গিট্টু লেগে যাবে, কাজের কাজ কিছু হবে না। ধীরে সুস্থে খুলতে হবে। একদম ঠান্ডা মাথায়।

উত্তরাধিকার Where stories live. Discover now