চ্যাপ্টার ১৩

262 19 0
                                    

সন্ধ্যা পার হয়েছে ঘন্টা দুয়েক আগেই, অবান্তর রকমের ক্লান্তি আরঅবসাদ আইদাদকে জেঁকে ধরেছে। লক খুলে ঘরে ঢুকে দেখে গোটা ঘর অন্ধকারে, দাদীও টিভিরুমে নেই। ইলেকট্রিসিটি লাইন ঠিক করতে এখন ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাছে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আইদাদের নেই। ঘরের সবগুলো জানালা খুলে রেখে দাদী যেন অন্ধকার ঘরে চোরদেরকে নিমন্ত্রণ দিয়ে রেখেছে। অবশ্য এই কয় বছরে কোন চোর-ডাকু এই বাসার দিকে আসার সাহস করেনি; হাস্যকরভাবেই!
বিরক্ত হয়ে দাদীর রুমে গেল ও, সাদা পর্দা উড়িয়ে হিহি করে বাতাস ঢুকছে ঘরে। আর বিছানার উপর কাঁত হয়ে অন্যদিকে মুখে করে দাদী শুয়ে। ঠান্ডা বাতাসে গুটিশুটি মেরে গেছে, তবুও চাদর টেনে গায়ে দেয়নি। পুরো দৃশ্যটাতে কেমন যেন অসহায় একটা ভাব।
মুহূর্তেই আইদাদের শরীরের সবগুলো লোম খাড়া হয়ে গেল। হঠাৎ করেই ওর কেমন যেন ভয় লাগছে।
ভয়!
শেষ কবে অশরীরী কিছুতে আইদাদ ভয় পেয়েছে ওর মনে পড়ে না। ভূত-প্রেতে ভয় পাওয়া মানুষের খুব সহজাত প্রবৃত্তি হলেও আইদাদ বহু আগেই এই প্রবৃত্তির ঊর্ধ্বে চলে এসেছে। অদ্ভুত রকমের অস্বস্তি করতে লাগলো ওর, আসলে কিসের ভয় পাচ্ছে ও? ভূত-প্রেতে আইদাদের কখনও বিশ্বাস ছিল না। প্রেত বলতে কিছু থাকলে এতদিনে বাবার হত্যা করা রমণীরা একবার হলেও দেখা দিত। প্রেত যখন নেই, ভূত থাকার প্রশ্নই আসে না।
জোরে মাথা ঝাঁকাল আইদাদ। কী সব ভাবছে ও! আজ ঐ লোকটার সাথে দেখা করতে যাওয়াটাই কাল হয়েছে। নিজের উপর বিরক্ত হয়ে চোখমুখ কুঁচকে জানালা লাগাতে গেল আইদাদ। জানালা লাগিয়ে পিছন ফিরবে ঠিক তখনই অনুভব করলো ওর পিছনে এসে কেউ দাঁড়িয়েছে। আরো অনুভব করলো একটা ধাতব নল খুব শক্তভাবে ওর পেলভিসে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। আইদাদ আস্তে করে মাথা নামিয়ে আবছা আলোতেই দেখতে পেল, নিছক একটা ধাতব নল না; পিস্তল ওটা। হয়তো গালভরা একটা নামও আছে পিস্তলটার।
"অন ইয়োর নীস!"
একটা ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠের কড়া নির্দেশ। অপরিচিত গলার স্বর। অথচ কিছুক্ষনের জন্য হলেও আইদাদ চেয়েছিল লোকটা সাংবাদিক মশিউর আহমেদ হোক কিংবা অন্য কেউ-কিন্তু পরিচিত কেউ একজন হোক।
আইদাদ একটা নিঃশ্বাস ফেলে চুপচাপ হাঁটু গেঁড়ে ফ্লোরে বসে।

উত্তরাধিকার Where stories live. Discover now