চ্যাপ্টার ০৫

334 19 0
                                    

বাসায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা দাদীর দেখভাল করার কাজটা আইদাদকেই করতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই খুনীর বাড়িতে কাজ করার লোকের খুব অভাব। দুপুরের খাবার খাইয়ে দিয়ে দাদীকে টিভির সামনে একটা পুরান টেডি বিয়ার ধরিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হল ও। নিজের রুমে ঢুকেই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলো। প্রথম ভুল হয়েছে এতো তাড়াতাড়ি মোরশেদ আংকেলের কাছে যাওয়া। পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা দেখতে পেলে ভালো হত। যেটা এখন আর হাতে পাওয়া সম্ভব না।
“তাড়াহুড়ো কখনও করবেনা। মনে রাখবে, আমাদের কাজ একটা শিল্প। শিল্প তাড়াহুড়ো করে হয় না।”
“আমাকে চিন্তা করতে দাও!”
আইদাদ চোখ বন্ধ করে ফেলে। লাশের দুইটা আঙুল কেটে নিয়েছে খুনী। একটা আবার রেখে গেছে ক্রাইম সীনে। বাবার থিওরী অনুযায়ী, চ্যালেঞ্জ দিয়ে গেছে ঐ আঙুল দিয়ে। স্যুভেনির হিসেবে আঙুল, খারাপনাহ!
এইবার কম্প্যুটার টেবিলে রাখা মোবাইলের রিংটোন বিরক্ত করে। হাতে নিতেই রামিসার ছবি দেখে একটা বড়নিঃশ্বাস নিল,
“হু, বল।”
“সকালে থানায় গেসিলি ক্যান?”
“তুইও আমার উপর স্পাইগিরি শুরু করছিস?”
“নাহ। বাবা বলল।”
বলা বাহুল্য তানভীরের আম্মুর মত রামিসার বাবা-মাও আইদাদকে সহ্য করতে পারেন না।
“কোন ঝামেলা?”
রামিসার চিন্তিত কন্ঠের প্রশ্নে আইদাদ সেলফোন কানে মাথা নাড়ে,
“না ...”
অনাবশ্যক একটা টান দিয়ে ‘না’ বলায় রামিসা যা বোঝার বুঝে নেয়। আইদাদ যেন সেটা ঢাকতেই আবার বলে,
“আংকেলের সাথে অনেকদিন দেখা হয় না...তাই গিয়েছিলাম ...। তোর কী খবর বল?”
“এই তো যাচ্ছে, আজকে স্কুলে গিয়েছিলাম।”
“কেন?”
“ম্যাডাম ডেকেছিল, কোন টিভি চ্যানেল নাকি প্রোগ্রাম করবে স্কুলে, তাই বাচ্চাদের নাচের রিহারসেল করাতে।”
“বাহ ভালো তো। স্কুলের ঐ দিকে অনেক দিন যাওয়া হয় না।”
“কাল সকালে ফ্রী আছো?”
তুই থেকে তুমিতে যেতে সময় লাগেনা এই মেয়ের।
“হু, আছি তো।”
কাল আবার ওর সাথে স্কুলে যেতে বলবে না তো? আইদাদ মনে মনে অজুহাত দাঁড় করায়। অজুহাত ব্যবহারের আর দরকার হয় না,
“দেখা করিস। আর হ্যাঁ,তানভীরের সাথে কথা হইসে আমার। উল্টাপাল্টা বুঝ আমাকে না দিলেও পারতি।”
কোথায় কিংবা কখন-সেগুলো কিছু বলে দিতে হল না। যেদিন থেকে দুই বন্ধু ভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে সেদিন থেকেই কফি শপটা ওদের আড্ডাফাইং এর জন্য স্থায়ী স্থান হয়ে গেছে।
মোবাইল ফোনটা রেখে আইদাদ আবার চোখ বুজলো।
“কোথায় যেন ছিলাম?”
নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলেছে হঠাৎ করেই,তাই খুঁজে ফিরছে।
“নিখুঁত খুনী বলতে কিছু নেই, কেউ নেই। একেকজন খুনী অসংখ্য এভিডেন্স পিছনে রেখে যায়, অসংখ্য। পুলিশখুঁজে পায়না কেন জানো?”
-“কেন?”
“কারণ পুলিশ জানে না খুনী কতগুলো এভিডেন্স রেখে গেছে।”
খুনী আজম কথাটি বলেই শব্দ করে হেসে উঠলো। ঘর কাঁপিয়ে দেয়া প্রাণ খোলা হাসি। চোখের মত করে যদি কানটাও বন্ধ করা যেত ভালো হত। আইদাদ নিজের মুখের উপর বালিশ চাপা দেয়।
একটা গন্ধ, মিষ্টি একটা গন্ধ। আর দশ জনের রক্তের মত নোনতা গন্ধ না ওটা।
সিংকের পানি লাল হয়েগেছে। ছুরিটা হাতে নিলও।
-সাবাস বেটা। এই তো হচ্ছে।-
মাংসের ছোট ছোট টুকরা। পাশে দাঁড়িয়ে গুরু মহাশয় উৎসাহ দিয়েই যাচ্ছে।
-হচ্ছে হচ্ছে ...এভাবেই... একদম মুরগীর মাংসের মত-
-আস্তে আস্তে... যত্ন নিয়ে... হ্যাঁ, হচ্ছে-
-গুড বয়-
-হ্যাঁ, এভাবেই। চিকেন যেভাবে কাটে। হাড় ছাড়াও। গুড বয়-
সিংকের পানি লাল। মাংস ধোয়া রক্তে লাল। হাতে ধারালো ছুরি।
-সাবাস বেটা!-
শরীর একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায়। আরো একবার দেখা পুরনো স্বপ্নের রেশ মাথায় তবুও থেকে যায়। কী কাটছিল তা নিয়ে আইদাদের কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কাকে কাটছিল?
কম্প্যুটারের পিছনের দেয়ালে সাটিয়ে রাখা একশ চৌদ্দটা ছবির দিকে চোখ যায়।
নাহ। এদের কেউ ছিল না।
অন্য কেউ। মিষ্টি গন্ধঅলা রক্তের কেউ।
মাত্র দুই ঘন্টা ঘুমিয়েছে ও। কিন্তু মনে হচ্ছে রাতটাই বুঝি পার হয়ে গেল। রাত পার হওয়ার আগেই কাজটা সেরে ফেলতে হবে। দাদীকে ঘুম পাড়িয়েই বের হয়ে পড়তে হবে। দেরী করা যাবেনা।
খুনীর রেখে যাওয়া অনেকগুলো এভিডেন্স যে অপেক্ষা করছে।

উত্তরাধিকার Donde viven las historias. Descúbrelo ahora