মেয়েটা শুনেছে চৈত্রের এমন চড়চড় রোদে হৃদয় কেঁপে যায় অনেকসময়। মেয়েটা এখন ষোলো, ঠিক সেইরকমটি বুক ধুকপুক সে শোনেনি কখনো। তার কাছে তেমন সময়ও নেই সেসব শোনার।
●
একটা ছেলে ঠিক বিকেল চারটেয় টিউশনে যায়, সাইকেল নিয়ে নন্দীদের মাঠ পেরিয়ে বাবলাতলা, বড়পুকুরের পাশের শর্টকাট ধরলে ষ্টেশন রোড ঠিক সাত মিনিটের পথ।
●
ঠিক তিনটে চল্লিশের লোকাল হেলতে দুলতে কুসুমপুর ছোঁয় তিনটে পঞ্চান্ন এ। প্রতি শনিবার দুটো বেণীর ক্লাস ইলেভেন যখন ষ্টেশন রোড ক্রস করে যায় তার ঠিক চুয়ান্ন সেকেন্ড পর ষ্টেশন রোডের ধারে সতেরো নম্বর বাড়িটার রংচটা সবুজ দরজাটার সামনে সাইকেল ষ্ট্যান্ড করে ছেলেটা।
●
এই ক'মাসে আমাদের সেই ছেলে- ফার্ষ্ট ইয়ার, বাংলা অনার্স অনেকবার দূর থেকে দেখেছে খয়েরি স্কুলব্যাগ, কখনো দু'টো বেণী, কখনো বা লাল ওড়না কিংবা হলুদ-সবুজ ফুলছাপ স্কার্ট। দেখেছে কিন্তু দেখেনি তেমনভাবে। মানে মনে লাগেনি, চোখে ধরেনি সে দেখা।
মেয়েটার অঙ্কের দিদিমণি থাকেন বাবলাতলার পরেই। ঘন্টাদুয়েক ক্যালকুলাস বুঝতেই আসা।
●
ইলেভেন একটু আত্মমগ্ন ধরনের, দুচোখ স্বপ্নে আবিল-উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট-কলকাতার নামজাদা কলেজে অঙ্ক অনার্স-তারপর আরো বড়, আরো...নাম্বার থিয়োরিতে বুঁদ হয়ে স্বপ্ন দেখে আকাশ ছোঁয়ার।
●
বাংলা অনার্স টুকটাক লিখেছে খাতার পিছনে-
"দু-চার পা হাঁটলে পরেই দেশ,
ভালোবাসা উড়ছে অনিঃশেষ।"
...কিন্তু অনেক পা হেঁটেও তেমন দেশ পাওয়া যায়নি, আসলে ছেলেটা জানে ভালোবাসা অনিঃশেষে ওড়ানোর মেয়েটার দেখা সে এখনো পায়নি।
●
মাস কেটেছে হয়তো ঘুরেছে বছরও, তবু চুয়ান্ন সেকেন্ডের ব্যবধান ঘোচেনি। চুয়ান্ন কখনো হয়েছে চুয়াল্লিশ কখনো চৌষট্টি-
আর ষ্টেশন রোডের ধারের সুপ্রাচীন অশ্বত্থ গাছটা, ঘন্টার চায়ের দোকানের বেঞ্চদুটো, রাস্তার ধারে বসে থাকা মতি পাগলী এমনকী বাংলা স্যরের বাড়ির রংচটা সবুজ দরজাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করছে সময়ের ব্যবধান ঘোচার।
●
হয়তো সেদিন হঠাত ছেলেটার সাইকেলের চেন গেল পরে-মেয়েটাও খাতা কিনতে দু'মিনিট দাঁড়িয়ে গেল ষ্টেশনের দোকানটায়। সেদিন মেয়েটা আকাশি চুড়িদার, ছেলেটা সবুজ টি-শার্ট...
●
দেখা হল দুজনের-
থমকে যাবে সময়? দু'জন কী নামিয়ে নেবে চোখ? কী ভাববে নাম্বার থিয়োরি? নীরা নাকি বনলতা, কার কথা মনে পড়বে ছেলেটার?
নাকি হবেই না কিচ্ছুটি? মেয়েটা অঙ্কের ক্লাসে আর ছেলেটা বাংলার ক্লাসেই চলে যাবে যেমন যায়!
●
কিংবা কখনো হলই না এমন কিছু! চুয়ান্ন সেকেন্ড বাড়তে বাড়তে শহর কি দেশের গন্ডি টপকে ফেলল!
●
উত্তরটা কুসুমপুরের স্কুলবাড়িটা জানে না, মতি পাগলীও জানে না-জানি না আমরাও। হয়তো জানে সময়। আমরা শুধু অনিঃশেষে অপেক্ষা করতে পারি আর বলতে পারি- দেখা হোক, ওদের দেখা হোক! চোখে নয় শুধু, মনেও।
●
আর হৃদয়দুটো বলুক-"অনেক দেখি
অনেক দেখি
তারমধ্যেই একটা-দুটো মুহূর্ত লীন,
বাকিরা সব হারিয়ে যাওয়া সময়।
অনেক চাওয়া
অনেক চাওয়া
তারমধ্যেই হঠাত কোনও প্রকৃত সঞ্চয়।"
●
ততদিন শুধু অপেক্ষা অপেক্ষা আর অন্তহীন অপেক্ষা...●কবিতা- নীলাঞ্জন বন্দোপাধ্যায়।
YOU ARE READING
অন্তহীন
Short Storyজীবন সমান্তরালে চলতে চলতে হঠাত্ মিলিয়ে দেয়, কখনো বা মিলনের প্রত্যাশাতেই কেটে যায় সময়। ছোট্ট একগুচ্ছ গল্প। একটু অন্যস্বাদের ভালোবাসার গল্প লেখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা। ● সূচিপত্র ♡ চুয়ান্ন সেকেন্ড ♡ ম্যাজিক অপেক্ষা ♡ অসম্ভব ভালোবাসার গল্প ♡ শুভারম্ভ ♡...