অসম্ভব ভালোবাসার গল্প

176 2 0
                                    

কত রাত মোবাইল স্ক্রিনে মুখ গুঁজে কেটে গেছে আমাদের-কত আলতু-ফালতু কথার স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে হাঃ ক্লান্ত হয়ে যেতাম বিশ্বাস কর। ওই রাত তিনটে অবধি 'ভালোবাসি', 'ভালোবাসি' বলা মেয়েটা আমি না-একদম আমি না।
বরং পুরো ব্যাপারটাই ছিল বড্ড 'দমবন্ধ করা'।

আমার ভীষণ ভিজতে ইচ্ছে করত-আষাঢ়ের বৃষ্টিতে এক হাঁটুজল রাস্তায় হাঁটতে ইচ্ছে করত।তোর 'কি করছিস সোনা?'-শুনলে ভারী অস্বস্তি হত, আমি চেয়েছি হেঁটে যাওয়া কোনো পুরনো কলকাতার গলিপথ-একদম চুপ দুজন, দূরে কোথাও সেতার বাজাচ্ছেন রবিশঙ্কর।

আমি চেয়েছি এমন মন কষাকষি বিকেল-কলেজ স্কোয়্যারে বসে আছি দুজন দুদিকে মুখ ফিরিয়ে-একটা মিছিল চলে গেল-'চলছে না চলবে না,মানছি না মানব না'-তোর আর আমার মনের কথাই কি বলে গেল না!

অথচ কত কথা কাটাকাটি-হোয়্যাটসঅ্যাপ, ফেসবুক-সারাদিন অনলাইন শুধু ঝগড়া করব বলে!

একদিনের জন্য একলা পালাতে চেয়েছিলাম-সব ছেড়ে-সেই অনেক দূরে রূপনারায়ণের ধারে বসে থেকে চেয়েছিলাম সময় গড়িয়ে যাক। হয়নি সেসব, প্রতি মূহুর্তের গতিবিধি রিলে করতে হত যে তোকে।

ধর দেখা নেই কতদিন, খবর নেই কতদিন-কথাও নেই- তারপর হঠাত্ দেখা শুশুনিয়া পাহাড়ের নীচে মন্দিরটার কাছে-তুই বললি "চল, বিয়ে করে নিই।" আমি বললাম "আমি আবার পালাব!"
তুই বললি "তোকে ধরে রাখছে কে?-তুই পালাস, আমি আবার খুঁজে নেব। কিছু মুহূর্ত পাশাপাশি হাঁটব পথ-ব্যস। তারপর আবার হারিয়ে যাস।"

তারপর একদিন টুপটাপ বৃষ্টি ঝরবে গুরুপল্লির রাস্তায়, তুই সাইকেল চালিয়ে চলে যাবি আমাকে খেয়াল না করে একদম। আমার অভিমানী চোখ কান্না-কান্না, টলটল দীঘি জল-তুই হঠাত্ আমার মেঘলা চোখে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলবি "পাগলী!" আমি বলব-"আজ তেতাল্লিশ দিন পরে এলি বাঁদর।"

 যাক, এসব তো কিচ্ছু হয়নি, তবু ভেবে ভেবে বসে থাকি- হবে এসব। আছে কেউ এমন- এতোটা পাগল, ক্ষ্যাপামি যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আমি আছি যখন সেও আছে নিশ্চয়। তুইও ভালো থাকিস, তোর মতো- মনের মতো কাউকে নিয়ে।
আর আমিও থাকি অপেক্ষায় সেই ছেলেটার যে লিখেছে-
"দু'এক পশলা বৃষ্টি নামুক মাঝেমধ্যে,
ঘর বাঁধবার অন্তরঙ্গতা বড় দমবন্ধ করা।"

আমি তাকে বলব "আচ্ছা, আমি চাইলে তুই আমার 'শোভনলাল' হবি?" সে বলবে "তোর ওই গোপন প্রেমিক হতে আমার বয়েই গেছে"- তারপর হঠাত্ উদাস হয়ে চশমাটা খুলে চুপ হয়ে যাবে কিছুক্ষণ , তারপর কেমন একটা মনখারাপের স্বরে বলবে-"আমি নাহয়, দুয়ারের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একদিন 'যতীন' হয়ে যাব, সেও তো তোর খুব প্রিয়।" আমি বলব "না,না একদম না, তুই জানিস না, 'শেষের রাত্রি' শেষ হলেই আমার কান্না পায় ভীষণ!" সে বলবে "ধুর পাগলী কান্নাকাটি রাখ, চল দুজনে ঘুরে আসি।"

এরপর আমাদের রুকস্যাকে বাঁধা স্রোতস্বিনী জীবন আর বিপ্রতীপে দুজনের বুকেই একটু একটু করতে জমাট বাঁধতে থাকা 'বাসা' খোঁজার আকুলতা-কোনো এক হেমন্তের বিকেলে আমাদের দিয়ে ঠিকই বলিয়ে নেবে "ভালোবাসিস?"
কিছুক্ষণ চুপ।
-এই অ্যাত্তো.......টা।

অন্তহীনWhere stories live. Discover now