- আচ্ছা, তোর একটাও গল্প হ্যাপি এন্ডিং হয়না কেন বলতো?
-এ আবার কেমন প্রশ্ন! জানিসই তো কেন হয়না।
-মানে যদি ধর হতো তো কেমন হতো? মানে ভরা শিয়ালদা স্টেশনে নায়িকা ছুটতে ছুটতে গিয়ে নায়ককে জড়িয়ে ধরতো? আর ধ্যানত্যানানা করে একদল অদৃশ্য লোক বাজনা বাজাতে শুরু করে দিতো?
-হা, হা, হা। না রে, সব মোটামুটি ঠিকই আছে কিন্তু ভরা শিয়ালদা স্টেশনে হবে না! আমার নায়িকা লজ্জা পেয়ে যাবে রে খুব আর এত লোককে পাশ কাটিয়ে ছুটতেও অসুবিধে হবে ওর-তার বদলে ওটা একটা মফস্সলের একটু শান্তশিষ্ট একটা স্টেশনের গল্প করে দিলেই হবে।
-অ্যাঁ তুই সিরিয়াস! না না, যাহ। ঠাট্টা করছিস।
-না রে সিরিয়াস।
-তাহলে তো তোর এতদিনে হয়ে যাওয়ার কথা।
-হুম।
-প্রবলেমটা কি?
-জানি না তো।
-ভাবিসনি কোনোদিন?
-হুম
-আরে কি হুম হুম করিস!
-হুম
-ধুর শালা। আমি কাটছি।
-এটাই সমস্যা।
-মানে?
-আমি হুম হুম করেছি আর তারা 'ধুর শালা' বলে কেটেছে।
-এত কমপ্লিকেটেড কেন রে তুই?
-না রে, কই জটিল আমি।
-নিজে জানিস, কি চাস?
-পালাতে।
-কিসের থেকে আর কোথায়?
-হুম
-আবার শুরু হল।
-হুম
-ধুত্তেরি!
-হা, হা, হা! ওই মাঝে মাঝেই হারিয়ে যেতে, কোথাও একটা, এই পৃথিবী থেকে একটু দুরে-বেশ বনবন করে ঘুরছে লাট্টুটা। আমি ওখানেই আছি আবার ঠিক ওখানেই নেই।
-বিশ্বাস কর আমার মাথাটাই এবার বনবন ঘুরছে।
-আমিও চাই না বিশ্বাস কর, আমার জন্য কারো মাথাটা বনবন করুক।
-মানে বলছিস যে এখনো তার দেখা পাসনি?
-বললাম নাকি একবারও এরকম কিছু?
-তার মানে পেয়েছিস?
-সেটা তো জানি না।
-তবে জানিস কি?
-কিচ্ছু না।
-তোর হবে না কোনোদিন বিশ্বাস কর। হোপলেস।
-হুম, জানি।
-তুই বরং ট্রাজেডি রচনা কর বসে বসে। ওসবই হবে।
-লিখবো তো, নেক্সট আরেকটা দারুণ প্লট ঘুরছে মাথায়। বেশ একটা চোখের জলে, নাকের জলে ব্যাপার। আহা।
-ন্যাকামি রাখ তো, ওই ছেলেটাকে কবে বলবি?
-কোন ছেলে আবার?
-তোর আবার কটা ছেলে আছে! ওই বারো বছরের কেসটা।
-ওহহহ।
-তুইও কি ওরম ভাবিস নাকি ছেলেটাকেই প্রোপোজ করতে হবে?
-হে ঈশ্বর, প্রোপোজ এলো কোথা থেকে এরমধ্যে। হা হা হা, হাসালি আমায়।
-দেখ, দুনিয়া কোথায় চলে গেছে-ভাই প্লিজ এবার তো বলে দে, নাহয় পাঁজি দেখে একটা শুভদিন দেখে নে কিন্তু বলে দে ভাই।
-তারপর?
-তারপর হ্যাঁ বা না। ব্যস। হ্যাঁ হলে কপাল খুলে গেল, না হলে চ্যাপ্টার খতম। এমনিই তোর একটা গিনেস ওর্য়াল্ড রেকর্ড হয়ে গেছে। দেন ইউ ক্যান স্টার্ট অ্যাফ্রেশ।
-হুম
-তুই মর।
-মাঝে মাঝে মনে হয় বটে, মরেই আছি।
-কি সর্বনাশ। কাকু-কাকিমাকে বলতে হচ্ছে।
-হুম।
জানিস তো একটা তীব্র পাগলামির ইচ্ছে ছুঁয়ে থাকে সবসময়, না ঠিক সবসময় না কিন্তু অনেকটা সময়ে। বিশ্বাস কর আমার ভয় হয়- আমি একজনকে ভালোবাসি, সেটা একটা আদি অকৃত্রিম সত্যি, সে আমায় বাসতেও পারে নাও পারে-সহজ সরল প্রোব্যাবিলিটি। কিন্তু ভয়টা কিসের জানিস, ডিপেন্ডিবিলিটির। আমার প্রতি ওর আর ওর প্রতি আমার ভালোবাসা যদি পরস্পর মৌলিক হয় তবেই সত্যি। নাহলে যেটুকু যেমন আছে, সেটুকুই পারফেক্ট। এর বেশির প্রয়োজন হয় না, তাই নেই। ভয় ওটাই, যদি ধরা পড়ে যায়, প্রয়োজন নেই!
-কি জটিল ব্যাপার-স্যাপার।
-একদম না, জলের মতো।
-এসব ভাবলে হবে না বিশ্বাস কর, এটুকু শুনেই মাথা ঝা ঝা করছে, আর বলিস না প্লিজ।
-হুম, তাই তো বেশির ভাগ সময় 'হুম' দিয়ে চালিয়ে দিই। ওইটুকুই প্রয়োজন ওখানে।
কে হবে, কি হবে জানি না, কিন্তু দিনের শেষে একটা ঘরে ফিরতে চাই-সব মানুষের একটা ঘর থাকে, হাইরাইজের টপ ফ্লোরে হোক কি ফুটপাথের পাশে ঝুপড়িতে। ও তো আমার ওই ঘরটা।
-হুম
-হি হি এবার তুই হুম হুম শুরু করলি যে!
-একজন বেশি বলে ফেললে আরেক জনকে একটু কমিয়ে দিতে হয় কি করা! টোটালটা কন্সট্যান্ট তো।
-বাহ্, চুমু চুমু কথা বলছিস তো তুই।
-ভাবাচ্ছিস বড়।
-এই তো ভাবিয়ে দিলুম তোকে, এবার আমি পাগলামি করব। চল্লিশটা ফুচকা খাব তারপর পেটখারাপ হবে তারপর স্বপ্ন দেখব একটা ছেলে আমায় খুব বকাবকি করছে।
তারপর ওই ছেলেটার নম্বরে গুনে গুনে একশো পঁচিশটা মিসড কল দেব।
তারপর ব্লক করে দেব ফেবুতে।
মানে আমি একা না, সেও করবে আমায়।
আমিও তাকে খুব বকব, বেশি সিগারেট খেলে।
টানা তিনদিন সে আমার কল রিসিভ করবে না কোনো কারণ ছাড়াই।
-এই পাগলি চুপ কর তো! বকবক বকবক।
-হুম, আর সে আমায় পাগলি বলে ডাকবে।
-এমা তুই কাঁদছিস কেন?
-(চুপ)
-অ্যাই পাগলি অ্যাই, কাঁদিস না, প্লিজ।
-(চুপ)
-শশশশ্।
-অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলে অনেক ব্যথারা ঘুমিয়ে যাবে রে, ব্যথাদের ঘুম পাড়িয়ে দেবে সে একটা চুপচাপ চাহনিতে।
-তোর সাথে থাকলে তো সেও পাগল হয়ে যাবে রে, তখন? দুজনের প্রেমকাহিনী তো তখন পাগলাগারদে লিখতে হবে!
-না না, ইস্, এটা তো আমার নেক্সট গল্পটার খসড়া হল, এটা কি পুরো সত্যি নাকি!
-ওমা, এতক্ষণ এতকিছু করে মেয়ে বলে সবটা নাকি সত্যি না।
-নাহ্, আবার পুরোটা গল্পও না, মানে কন্ট্রোল রেখে যতটা পাগলি হওয়া যায় আর কি!
-বলবি না ছেলেটাকে? মানে ইন রিয়েলিটি।
-বলব,বলব। এবছরই বলব ভাবছি।
বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকাটা বাবা যেন কোথায় রেখেছে! হি হি।
-তুই না পুরো পাগলি।
-হুম!
YOU ARE READING
অন্তহীন
Short Storyজীবন সমান্তরালে চলতে চলতে হঠাত্ মিলিয়ে দেয়, কখনো বা মিলনের প্রত্যাশাতেই কেটে যায় সময়। ছোট্ট একগুচ্ছ গল্প। একটু অন্যস্বাদের ভালোবাসার গল্প লেখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা। ● সূচিপত্র ♡ চুয়ান্ন সেকেন্ড ♡ ম্যাজিক অপেক্ষা ♡ অসম্ভব ভালোবাসার গল্প ♡ শুভারম্ভ ♡...