"আমার আসল নাম রুহিকা,জলপাইগুড়ির মেয়ে আমি।আমার বাড়িতে আর পাঁচটা বাড়ির মতন মা ছিল,বাবা ছিল আর বোন ছিল।আমিও সাধারণ একটা মেয়ে ছিলাম।স্কুল পাশ করে কলেছে ভর্তি হলাম।তারপর দেখা হল জয়ের সাথে।ও জলপাইগুড়িতে কাজের সূত্রে থাকত আর মা বাবা নাকি কলকাতায়।একবছর প্রেম করার পর একদিন ধরা পরলাম বাবার কাছে।তারপর বকা মার।তারপর ভাবলাম পালাবো।পালালাম জয়ের হাত ধরে।একটা মন্দিরে বিয়ে করলাম।জয়ের মা বাবা ঘরে তুলল না। বস্তিতে ঠাই পেলাম।বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যে ও হাত তুলল আমার উপর আর তারপর থেকে রোজ তুলত।খেতে দিতনা ঠিকঠাক আমাকে,রাত হলে উগ্র গন্ধে ভরা জিনিসগুলো খেয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পরত আমার উপর।সারারাত আমার শরীরটাকে নিঙড়ে নিঙড়ে যৌনতা উপভোগ করত আর আমি মুখ বুজে এই অত্যাচার সহ্য করতাম কারণ আমার কোনো উপায় ছিলনা।তারপর আমাকে বেঁচে দিল তাঁরার হাঁটে।এখানে এসে জানলাম ওর মা বাবা নেই।বিয়ের পর হয়তো তাই আমি অত জোর করা সত্বেও আমাকে ওর মা বাবার সাথে দেখা করাতে নিয়ে যায়নি,একাই গেছিল।আমাকে নিয়ে গেলে কাকে দেখাতো অবশ্য?ও নাকি এই ধরনের অপরাধমূলক কাজ করে বেরায়।তবে ওর পারমানেন্ট মালিক নেই।যখন যার সাথে যেখানে ইচ্ছে কাজ করে বেরায়।তারপর তাঁরার হাঁটে চাবুকের বারি,চুলিমুটি ধরে মার,খেতে না দেওয়া এইসব সহ্য করার পর শেষে দেহ বেচতে রাজি হই।রোজ রাতে কেউ না কেউ আসে আমার শরীরটাকে ঝাঁঝড়া করে টাকা ছুঁড়ে দিয়ে চলে যায়।এই চলছে ছয়মাস ধরে!" একবারে বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শেষ করে চুমকি।যতটা ছোট সম্ভব ততটা ছোট করে বলে ফেলে সে।কারণ তার আর কোনো ইচ্ছে নেই, যেই সমস্ত কষ্টগুলোর মধ্যে দিয়ে সে গেছে বা যাচ্ছে তা আবারো ফিরিয়ে নিয়ে আসা একরাতের জন্য।কারণ ভোর হলেইতো আবার তাকে এই মরণযন্ত্রণা বয়ে বেরাতে হবে।
এতক্ষন নিশান্ত রুহিকার দিকে তাকিয়ে সমস্ত শুনছিল।রুহিকার বুকে জমা দুঃখের তাপ নিশান্তোর মনটাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে।এই অল্পবয়সি মেয়েটার যন্ত্রণাটা যে কতটা বেশি তা কোনো মানুষের ভাবনারও বাইরে।নিশান্তো তার কবিতা,কথা,লেখা দিয়ে বহু মানুষের কষ্ট মিটিয়েছে।অনেককে শান্তনা দিয়েছে কিন্তু চুমকি, না এটা চুমকি নয় এটা রুহিকা।তাকে শান্তনা দেওয়ার ক্ষমতা নিশান্তোর নেই।শান্তনাতে মানুষের দুঃখ আদৌ মেটেনা।শুধু বেদনার তীব্রতাটা সাময়িক কমে যায়। কিন্তু পরের ক্ষণে যখন আর শান্তনা দেবার কেউ থাকে না তখন আবার একটা নতুন আঘাত বইতে হয়,যেটা পূর্বের যন্ত্রণাটাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
YOU ARE READING
গণিকা
Short Storyচুমকি ভাগ্যচক্রে একজন দেহব্যবসায়ী হতে বাধ্য হয়েছে।একদিন তাদের কোঠায় চুমকির ছাত্রাবস্থার প্রিয় লেখক নিশান্ত ঘোষ এসে পৌঁছায় তার পরবর্তী লেখার জন্য তথ্য যোগার করতে... এরপর কি হল?তা জানতে হলে পড়তে হবে।