#অতিপ্রাকৃত_গল্প
#ত্রয়ী
#লেখা : নীলা মনি গোস্বামী
#পর্ব-৫দ্বীপের ভেতর ছোট্ট একটা গ্রাম ছিলো। গ্রামের নাম ছিলো সুখগ্রাম।ছোট্ট একটা বসতি ছিলো সে গ্রামে। গ্রামের আকাশে বাতাসে সারাদিন খালি সুখ ভেসে বেড়াতো। বাচ্চাদের কলরবে মেতে উঠতো পুরো এলাকা।জেলেরা মাছ ধরে রাতে ঘরে ফিরতো। বউ ঝিরা মেহেদি পড়া হাতে মাছ ভেজে তাদের পাতে খাবার বেড়ে দিতো। দ্বিপের চারপাশে সব সময় উৎসব লেগে থাকতো। পিঠা পুলির গন্ধে মেতে থাকতো পুরো এলাকা।
তারপর একদিন এক দূর্ঘটনা ঘটে যায়। কারা যেনো হানা দেয় দ্বীপের ভেতর। ধরে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো গ্রামের বউ,ঝি আর ছোট বাচ্চাদের।সুখী মানুষগুলোর জীবনে হঠাৎ একঝাঁক দুঃখ নেমে আসে।খারাপ মানুষগুলোর প্রতি বুকভরা ঘৃনা নিয়ে তারা সবাই হঠাৎ কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।বিষ মেশানো ফলের রস খেয়ে আত্নহত্যা করে ফেলে গোটা গ্রামের মানুষ।সেদিনের পর থেকেই অভিশাপটা লেগেছিলো। কেউ আর বেঁচে ফিরতো না সে গ্রামের আশেপাশে গিয়ে।একদল পুলিশ গিয়েছিলো তদন্ত করার জন্য। তারা আর কখনও ফিরে আসেনি। কদিন আগে এক দম্পতি বেড়াতে গিয়েছিলো তাদের বাচ্চাকাচ্চা সহ। কেউ বেঁচে ফিরেনি। শুধু ছোট বাচ্চাটা ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় সাঁতরে তীরে ফিরেছিলো। তার গালের একপাশের মাংস উধাও। নাকের হাঁড় ভাঙ্গা। কানদুটোর জায়গায় ছিলো শুধু রক্তাত্ব গর্ত। বিভৎস সে দৃশ্য। আতঙ্কিত আহত বাচ্চাটা দুদিন পরই মারা যায়।দ্বীপটাকে ঘিরে আরও অনেক কেচ্ছাকাহিনী বলছিলো ওরা। হা করে গিলছিলাম সব।
"ব্রো, আই থিঙ্ক আমাদের এখানে যাওয়া উচিত। " পাশ থেকে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো নিশান।
- হু, থিক বলেছিস। এটার ওপর একটা রিসার্চ ভিডিও বের করতে পারি আমরা। নাড়া পড়ে যাবে পুরো দুনিয়াতে।
আনন্দে চকচক করে উঠলো নিশানের চোখদুটো।দৌড়ে চলে গেলো ওদের কাছে। তড়িৎকর্মা নিশান চোখের নিমিষেই সব তথ্য যোগাড় করে ফেললো। অতঃপর ছোটখাটো একটা লঞ্চ ভাড়া করে সব জিনিসপাতি সাজিয়ে গুছিয়ে টিম মেম্বার্সদের নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম সেই দ্বিপের উদ্দেশ্যে।
বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিলো।পিরাইন নদীর স্বচ্ছ পানি বেয়ে লঞ্চ তখন ধীরে ধীরে চিকন নারাপথে ঢুকে পড়লো।চারিদিকে বেত,মোতা,হিজল,কড়স গাছে ভরপুর। মৃদুমন্দ বাতাস। পাখির কলকাকলিতে সরগরম চারিদিক। পানির রাজ্য দিয়ে ছুটে চলেছে আমাদের ছোট্ট যানবাহনটি। নিতিশারা তখন সেলফি তোলায় ব্যাস্ত। আর রিয়ানা ছিপ বরশি নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। মাছ ধরবে সে।
পাশেই রিকি, নিশান আর সুজানা একগাদা চালভাজা - ধনেপাতা আর কাঁচামরিচ নিয়ে বসে আছে। আগ্রহভরে তাকালাম সেদিকে । সুজানা খুব যত্ন করে সরিষার তেল মাখাচ্ছে । লবন মেশাচ্ছে। রিকি তার ওপর কচি চা পাতা কুচি কুচি করে কেটে ছরিয়ে দিলো।দ্রুত হাতে মেখে নিতে লাগলো।হঠাৎ থমকে গেলো মাঝপথে।তারপর মুখ বাঁকা করে বললো," একটুখানি নাগা মরিচ হলে বেশ ভালো হতো ভর্তাটা.! "
" কিচেনে আছে।" কথাটা বলেই নিশান দৌড়ে চলে গেলো। তারপর ফিরে এলো একগাদা নাগা মরিচ হাতে।দুটো মরিচ কেটে মিশিয়ে দিলো সেই মিশ্রনের সাথে। জিভে পানি চলে আসছিলো আমার। হাতের মুঠোয় একটুখানি ভর্তা নিয়ে চেটেচেটে খেতে লাগলাম। আর মন ভরে প্রকৃতি দেখতে লাগলাম। বড় সুন্দর আমাদের এ প্রকৃতি। মায়াময় রূপ।
হঠাৎ কার যেনো চিৎকারে চমকে উঠলাম। দৌড়ে ঢুকে গেলাম কেবিনে ।
চলবে...............!!!