#পাহাড়ী_ডাকিনী
লেখা : নীলা মনি গোস্বামী
পর্ব -২
চক্র ধরনের কিছু একটা দেখা যাচ্ছে দূরে। সে চক্র ঘিরে নাচানাচি করছে কতগুলো যুবতী মেয়ে।কিংবা বৃদ্ধা মহিলা। শরীরটা যুবতী মেয়েদের মতো শক্ত সমর্থ। শরীরের চামড়াও হয়তো উজ্জ্বল, মসৃন এবং প্রাণবন্ত। অন্তত দূর থেকে দেখে তো সেটাই মনে হচ্ছে। তবে মুখটা একদম থুরথুরে বৃদ্ধা নারীদের মতো। কেমন যেনো আদিম একটা প্রাচীন ধরনের সঙ্গীত এর সুরে সুরে তাল মিলিয়ে পাগলের মতো নেচে বেড়াচ্ছে তারা। নাচের তালে তালে দুলছে ওদের পরনের উগ্র পোশাক। প্রত্যেকের ডান হাতে ধারালো নকশা করা ছুরি ধরা। আর বামহাতে ধরা কালো কুচকুচে পাখি। বোধহয় কাক পাখি এগুলো!
হঠাৎ একটা অদ্ভূত ব্যাপার ঘটলো। নাচের তালে তালে হঠাৎ করে একসাথে ওদের উদ্যত ছুরি নেমে গেলো বাম হাতে ধরা পাখিগুলোর গলার উপর। ছটফট করতে করতে মারা গেলো কালো কুচকুচে পাখিগুলো। ঝর্নার মতো একগাদা রক্ত বের হয়ে এলো ওদের কাটাগলা থেকে। আতঙ্কিত আমরা স্পষ্ট দেখলাম ঝর্নার মতো বের হয়ে যাওয়া রক্তগুলো চেটেপুটে খাচ্ছে ওরা। ভাবখানা এমন - যেনো সুস্বাদু কোন ফলের জুস কিংবা চকলেট এসব!
রক্তপান শেষে পাখির মাংস আর হাড্ডিগুলো ছড়িয়ে দিলো ওরা চারপাশে। ঝোপের আড়াল থেকে হঠাৎ বের হয়ে এলো ডজনখানেক বিড়াল।ওরা দ্রুতগতিতে চেটেপুটে সাবাড় করে ফেলতে লাগলো মাটিতে পড়ে থাকা হাড্ডি -মাংস।
রসগোল্লার মতো চোখদু'টো বড় বড় করে দেখছিলাম এসব। আহাদকে দেখলাম অতি সাবধানে রেকর্ড করে ফেলছে সবকিছু। মনে মনে খুশি হলাম বেশ! ছেলেটা ভীষন তড়িৎকর্মা!!কি যেনো বলতে যাচ্ছিলো আহাদ আমাকে। থেমে গেলো মাঝপথে। হতভম্ব আমরা দেখলাম কোথা থেকে যেনো টেনে টেনে যুবতী একটা মেয়ে আর ছোট্ট একটা বাচ্চাকে নিয়ে আসা হয়েছে চক্রের ভেতর। মেয়েটার হাত পা বাঁধা । অসহায় চোখদুটো মেলে চেয়ে চেয়ে দেখছে সবকিছু।
আর বাচ্চাটা অনবরত কেঁদে চলেছে। নির্জন এলাকায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তার কান্নার ধ্বনি।
নৃত্যরত একজনের উদ্যত ছুরি হঠাৎ নেমে গেলো বাচ্চাটার গলা লক্ষ্য করে। চোখের নিমিষেই গলাটা আলাদা হয়ে পড়ে গেলো মাটিতে। রক্তে ভেসে গেলো চারপাশ.....আর সহ্য করতে পারলাম না আমি। চিৎকার করে উঠলাম ভীষনভাবে।
টের পেলাম হঠাৎ করেই স্তব্ধ হয়ে গেছে চারপাশ। থেমে গেছে অদ্ভূত সঙ্গীত।বন্ধ হয়ে গেছে আদীম নৃত্য। এবং....চোখের নিমেষে হঠাৎ করেই ভোজবাজির মতো উধাও হয়ে গেলো সবকিছু। কেবল পড়ে রইলো ওদের চক্রটা।
থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে গেলাম আমরা চক্রটার দিকে।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম চক্রটা।
চক্রভর্তি একগাদা ছাই। তার ঠিক মাঝ বরাবর বিশাল এক স্টার আঁকা।স্টারের পাঁচমাথায় পাঁচটি নরমুন্ড। কাঁচা মাংস, হাড্ডিগুড্ডি আর রক্ত ছড়িয়ে আছে চক্রের চারিদিকে।
" পেন্টাগ্রাম।" ফিসফিস করে বলে উঠলো তন্দ্রা।
"শয়তানের পূজারী ওরা। ঐ দেখ তারকা চিহ্নটার পাঁচটা কোণের একটা কোণ দক্ষিনমুখী। এ ধরনের প্যান্টাগ্রাম গুলোকে স্যাটানিক প্যান্টাগ্রাম বলা হয়। " পাশ থেকে বলে উঠলো আহাদ।
ধীরে ধীরে চক্রের ভেতর ঢুকে গেলাম আমরা তিনজন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুলে ফেললাম বেশ কিছু ছবি। ঠিক তখনি দেখলাম কোথা থেকে যেনো আচমকা দৌড়ে এলেন মতিন কাকা।তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। আমাদের দেখে কেমন যেনো হাহাকার করে উঠলেন তিনি।
করুন কন্ঠে বললেন - " সর্বনাশ!! একি করলেন আপনারা!! ডাকিনীদের অনুষ্ঠানে বাঁধা দিয়ে ফেলেছেন!! ঢুকে পড়েছেন তাদের চক্রে!! নষ্ট করে দিয়েছেন ওদের সাধনা! ছাড়বে না ওরা আপনাদের! মেরে ফেলবে সবাইকে!"( চলবে)