#পাহাড়ী ডাকিনী
পর্ব -৪
লেখা : নীলা মনি গোস্বামী" সত্যিকারের হরর মুভির মতো মনে হচ্ছে সবকিছু। " পাশ থেকে ফিসফিস করে বলে উঠলো তন্দ্রা।
চোখ কটমট করে তাকালাম ওর দিকে। বিরক্ত হয়ে বললাম - " এই মূহুর্তেও মজা করতে ইচ্ছে হচ্ছে তোর? "
কিছু বললো না তন্দ্রা। লজ্জিত ভঙ্গিতে তাকালো আমার দিকে। এবং...ঠিক তখনি দেখলাম জানালার ধারের ঐ জিনিসটা দ্রুতবেগে ঢুকে গেছে ঘরের ভেতর। হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। ভয়ের একটা শীতল স্রোত নেমে গেলো শিড়দাঁড়া বেয়ে।দ্রুত দৌড়ে বের হয়ে যেতে চাইলাম ঘর থেকে। কিন্তু পারলাম না। কিছু একটা আষ্টেপৃষ্টে চেপে ধরেছে আমাকে পেছন থেকে। ওটার হীম শীতল স্পর্শে কেঁপে উঠলাম আমি ভীষনভাবে। টের পেলাম সূঁচালো নখ দিয়ে হাত বুলাচ্ছে ওটা আমার সমস্ত শরীর জুড়ে। ঘাড়ের নরম চামড়া ভেদ করে ধীরে ধীরে শরীরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে ওটার ধারালো নখগুলো। বুঝলাম মৃত্যু আসন্ন। ভয়ের চোটে বন্ধ করে ফেললাম আমার চোখদুটো।
কতক্ষন এভাবে ছিলাম জানি না। একসময় টের পেলাম স্বাভাবিক হয়ে গেছে সবকিছু। চারিদিকের গুমোট ভাবটা আর নেই। বিটঘুটে ঐ জিনিসটারও অস্তিত্ব নেই চারপাশে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালাম। অবাক হয়ে দেখলাম দক্ষিনের জানালাটা আগের মতোই বন্ধ হয়ে আছে সুন্দরভাবে।মাথার উপরের বাল্বটাও অক্ষত!একটু আগে যে ঘরের ভেতর একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেছে, চারপাশের পরিবেশ দেখে তা বুঝা যাচ্ছে না একদমই। বরং সমস্ত জিনিসটাই ভয়ঙ্কর একটা দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে এখন। আহাদ আর তন্দ্রার দিকে তাকালাম। ভয়ার্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে ওরা ঘরের এক কোনে । মৃদুভাবে কাঁপছে ।
" মনে হয় হ্যালুসিনেশন হয়েছে আমাদের। " ব্যাখা দেয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠলো তন্দ্রা।
" এক সাথে সবার? "
" হয়তো খাবারের সাথে নেশাজাতীয় কিছু একটা মিশিয়ে দেয়া হয়েছিলো।তাই এমনটা হয়েছে। "
" কিন্তু.... আমার ঘাড়ের পাশে নখ বসালো কে তাহলে? " চিন চিন করে জ্বলতে থাকা ঘাড়ের ক্ষতটা হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে উঠলাম আমি।
একমূহুর্তের জন্য চুপ হয়ে গেলো তন্দ্রা। ঠোঁট কামড়ে কি যেনো ভাবলো সে। তারপর ধীরে ধীরে বললো - " ভয়ের চোটে মনে হয় নিজের ঘাড়ে নিজেই খামছি মেরে বসেছিস তুই। "
এবার চুপ মেরে গেলাম আমি। এই মেয়ের সাথে কথায় পেরে উঠার সাধ্য আমার নেই। সব কিছুর ব্যাখ্যা হাজির থাকে সব সময় ওর কাছে!
কয়েক ঘন্টা পর.....
এখন প্রায় মাঝরাত। ঝি ঝি পোকার ডাকে মুখরিত চারপাশ। রাত জাগা কিছু অচিন পাখি ডেকে উঠছে মাঝে মাঝে। দূরে কোথাও শব্দ করে ছুটে যাচ্ছে দৈত্যাকার ট্রেন। ঘুম আসছে না একদমই।
পাশের ঘরে বিকট শব্দে অনবরত হাঁচি দিচ্ছে তন্দ্রা। বেচারির আবার ডাস্ট এ্যালার্জি। সামন্য একটু ধুলো ময়লা নাকে গেলেই ঠান্ডা লেগে অবস্থা কাহিল হয়ে যায়। বিকটা শব্দে হাঁচি দিতে দিতে পাগল করে ফেলে চারপাশের সবাইকে। মাঝে মাঝে আবার হাঁচির সাথে বের হয়ে আসে জেলির মতো তরল সূত্রাকার রস। সহজ ভাষায় যাকে বলা হয় নাকের ময়লা কিংবা সর্দি। আশেপাশে তখন রুমাল কিংবা টিস্যু না থাকলে ঘটে যায় বিচ্ছিরি কেলেঙ্কারি।
চলবে......!