পর্ব-৬

89 3 0
                                    


#পাহাড়ী_ডাকিনী

পর্ব-৬
লেখা: নীলা মনি গোস্বামী

" রাতের বেলা এসবের নাম নিয়েন না। এগুলা খারাপ জিনিস। " বিড়বিড় করে বলে উঠলো ফুলী ।

" আরেহ, কিছু হবে না। আমরা আছি। তুমি কি জানো,খুলে বলো আমাদের। " পাশ থেকে বলে উঠলো আহাদ।

একমূহুর্তের জন্য আহাদের দিকে তাকালো ফুলী। কি যেনো ভাবলো সে। খেয়াল করে দেখলাম কেমন যেনো শিউড়ে উঠছে মেয়েটা। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো সে। কিন্তু থেমে গেলো মাঝপথে। শুনতে পেলাম পাশের ঘর থেকে তাড়স্বরে চিৎকার করছে তন্দ্রা। আতঙ্ক মেশানো ভয়াবহ সে চিৎকারে কেমনে যেনো চমকে উঠলাম আমরা। দৌড়ে চলে গেলাম তন্দ্রার ঘরে।

তন্দ্রার ঘরটা একেবারে লন্ডভন্ড করে ফেলেছে কে যেনো। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অবিন্যস্ত আসবাবপত্র। মেঝে ভেসে যাচ্ছে রক্তে।পশ্চিমের বিশাল জানালাটা খুলে রেখেছে কে যেনো। কারা যেনো জানালা দিয়ে টেনে টেনে বাইরে জঙ্গলের দিকে নিয়ে গেছে তন্দ্রাকে। ঘষটানো রক্তের ছাপ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সবকিছু।

" ওরা আজ রাতে মাইরা ফেলবে আফাকে।" থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে কথা বলে উঠলো ফুলী।

" কারা?"

" ঐ যে ডাইনীগুলা। যুবতী মাইয়া মানুষের রক্ত মাংস খায় ওরা। কলিজা খায় চপচপ কইরা। তারপর কিডনি গুলান ভিজায় রাখে পানির ভেতর। মাথা দিয়া শয়তানের পূজা করে। আর বাদবাকি দেহটা নদীতে ফালায় দেয়। ওরা খারাফ অনেক। তন্দ্রা আফাকেও মাইরা ফেলবে আজকে। " হড়হড় করে কথা বলে উঠলো ফুলি।

" আমার মনে হয় এখনও সময় আছে।তন্দ্রাকে বাঁচাতে পারবো হয়তো আমরা।।" চিন্তিত ভঙ্গিতে কথা বলে উঠলো আহাদ।

" না, বাই.. এমুন কথা মাথায় আইন্নেন না। তন্দ্রা আফার চিন্তা বাদ দেন।আমনের জান বাঁচান।ওরা ভয়াবহ। " ভয়ার্ত স্বরে সাবধান করলো ফুলি।

চোখ মটকে ফুলির দিকে তাকালাম আমি। তারপর ধমক দিয়ে বললাম - " ভয় দেখানো বন্ধ করো ফুলী। আর রান্নাঘর থেকে বটি নিয়ে আসো। আর কুড়াল - শাবল - হাতুড়ি থাকলে সেটাও নিয়ে আসো। "

চোখ কপালে উঠে গেলো ফুলীর। রসগোল্লার মতো বড় বড় দু'টো চোখ মেলে সে তাকালো আমার দিকে । তারপর বিড়বিড় করে বললো," ঐসব দিয়া কি করবেন আফা? "

" ভূতের কল্লা ফেলে দিবো। " ভ্রু নাচিয়ে জবাব দিলাম আমি।

কেমন যেনো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ফুলী। রাগে গজগজ করতে করতে ঘরের বাইরে চলে গেলো । ফিরে এলো মাছ কাটার বটি আর মাটি কাটার কোদাল হাতে নিয়ে। জিনিস গুলো আমাদের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে আরও একবার সাবধান করে দিলো ফুলি।পাত্তা দিলাম না তার কথায়। টর্চ হাতে নিয়ে বের হয়ে এলাম বাইরে।

বাইরে তখন ঘনকালো অন্ধকার। মৃত্যুপুরির নিস্তব্ধতায় ডুবে আছে চারপাশ। রক্তের ছাপ গুলো অনুসরন করতে করতে আমি আর আহাদ এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে। ক্রমশ ঘন জঙ্গলের ভেতর চলে যাচ্ছি আমরা। এবং...একসময় সরু একটি ট্যানেলের সামনে এসে থেমে গেলাম আমরা। রক্তের ছাপগুলো ধীরে ধীরে চলে গেছে ট্যানেলটার ভেতর।

" ভেতরের যাওয়াটা কি ঠিক হবে আহাদ? "

" এতদূর যখন চলে এসেছি তখন মনে হয় এভাবে ফিরে যাওয়াটা ঠিক হবে না। যা হবার হবে। চল ভেতরে যাই। " কথাটা বলেই শক্ত করে আমার হাতটা চেপে ধরলো আহাদ। তারপর ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে চললো ট্যানেলের ভেতর।

(চলবে)

পাহাড়ী ডাকিনী Where stories live. Discover now