#পাহাড়ী ডাকিনী
পর্ব-৭
লেখা : নীলা মনি গোস্বামী
ঘন কালো অন্ধকারে ছেয়ে আছে ট্যানেলের ভেতরটা। ভয়ে ভয়ে আমরা হেঁটে চলেছি সামনের দিকে। এবড়ো থেবড়ো পথ। পায়ের নিচে পিচ্ছিল রাস্তা।আর চারিদিকে বিচ্ছিরি গন্ধ। ভয়াবহ সে দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার। কোনমতে নাকটা চেপে ধরে হেঁটে যেতে লাগলাম সামনের দিকে ।
একসময় শেষ হয়ে গেলো দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর সে রাস্তা। ধীরে ধীরে বের হয়ে এলাম বাইরে এবং চমকে গেলাম ভীষনভাবে।
অবাক বিস্মিত নয়নে দেখলাম সম্পূর্ন ভিন্ন এক জগতে চলে এসেছি আমরা। চারিদিক ভেসে বেড়াচ্ছে নীলচে আলোর বন্যায়। নীলচে সোনালী রঙা বিশাল চাঁদটা মিষ্টি আলো ছড়াচ্ছে মাথার উপর।তার আলোতে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক।মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। কেমন যেনো অতিপ্রাকৃত ধরনের একটা পরিবেশ।হঠাৎ দূরে কোথাও ভয়ঙ্কর কন্ঠে ডেকে উঠলো একপাল নেকড়ে। চমকে উঠলাম আমি। শক্ত করে চেপে ধরলাম আহাদের হাত।
" ভয় পাচ্ছিস? " ফিসফিস করে কথা বলে উঠলো আহাদ।
" হু।" কাতর কন্ঠে জবাব দিলাম আমি।
" ভয় পাসনে! আমি আছি তো। আমি থাকতে কিসের ভয় পাগল মেয়ে। " আমার হাতটা চেপে ধরে মিষ্টি হেসে ভরসা দিলো আহাদ।
হঠাৎ করেই টের পেলাম দূর হয়ে গেছে আমার সমস্ত ভয়। ভয়ের জায়গাটা দখল করে নিয়েছে একরাশ মুগ্ধটা। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠলো বুকের ভেতরটা।অদ্ভূত একটা অনুভূতি এসে জেঁকে ধরলো সমস্ত দেহমন জুড়ে।এবং... টের পেলাম আমি গভীরভাবে প্রেমে পরে গেছি এই ছেলেটার। হাবুডুবু খাচ্ছি তার প্রেমের সাগরে। সে সাগরে গলা সমান পানি। উঠার কোনো উপায় নেই। সাঁতার জানলেও লাভ হবে না একদমই। এক সময় না এক সময় ডুবে যেতে হবেই এ অথৈ সাগরে।
হা করে তাকিয়ে ছিলাম আহাদের দিকে। হেসে ফেললো সে। তারপর চোখ মটকে বললো, " কিরে, এমন ভ্যাবলার মতো হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? হাসি পাচ্ছে তোকে দেখে। মুখ বন্ধ কর গোল আলু। "
ওর কথার ধরন দেখে আমারও হাসি পেয়ে গেলো। খিলখিল করে হেসে ফেললাম আমি। আর ঠিক তখনি কানে এলো অদ্ভূত একটা শব্দ। ভয়ঙ্কর রকমের গা শিড়শিড় করা এক ধরনের ভৌতিক সঙ্গীত। দূরে দেখলাম দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুনের শিখা।আর সে শিখার সাথে তাল মিলিয়ে নেচে চলেছে কতগুলো ছায়ামূর্তি!!!
" ঐ তো... দেখা যাচ্ছে ওদের। চল আর একটু কাছে আগাই।তন্দ্রাকে বাঁচানোর একটা পথ খুজতে হবে। " উত্তেজনায় প্রায় চিৎকার করে উঠলো আহাদ।
বড় বড় পা ফেলে সতর্ক দৃষ্টি মেলে আমরা এগিয়ে যেতে লাগলাম সামনের দিকে। অজানা আশঙ্কায় থরথর করে কাঁপছি আমি রীতিমতো। সামনে অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর কিছু অশরীরী অস্তিত্ব কিংবা শয়তানের পূজারী । তারা নিষ্ঠুর। তারা ভয়ঙ্কর। তাদের আছে অসীম শক্তি। আর আমরা হলাম তুচ্ছ দু'টো নর নারী। আমাদের কোন শক্তি নেই। কেবল আছে বুকভরা সাহস আর বন্ধুকে বাঁচানো তীব্র ইচ্ছা। হয়তো মারা যাবো আমরা। অথবা ঘটে যাবে ভয়াবহ কিছু ঘটনা। তবু কেনো যেনো খুব একটা ভয় করছে না আমাদের। মাথার ভেতর কেবল একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে - " যে করেই হোক বাঁচাতে হবে তন্দ্রাকে। বাঁচলে একসাথে বাঁচবো।নাহয় মরে যাবো আজ সবাই একই সঙ্গে।"
( চলবে)