#পাহাড়ী_ডাকিনী
লেখা : নীলা মনি গোস্বামী
পর্ব -১
" জায়গাটা ভীষন সুন্দর। তাই নাহ? " মুগ্ধ ভরাট কন্ঠে বলে উঠলো তন্দ্রা।
" হু। তবে চারিদিকে বিড়াল অনেক।অসহ্য লাগে এ জিনিসটা। " বিরক্ত কন্ঠে চোখ ছোট ছোট করে জবাব দিলাম আমি।
" আর একটা অদ্ভূত জিনিস খেয়াল করেছো? "
" কি? "
" এ এলাকার লোকজনের লাল মরিচ আর লেবু জিনিসটা বেশ পছন্দ। চারিদিকে মরিচ লেবুর ছড়াছড়ি। ঘরবাড়ি - রাস্তাঘাট সব জায়গায় দেখা যায় এসব। অনেকেই মালার মতো করে বানিয়ে পরে রাখে। হাতে নিয়ে ঘুরে। কারন জিজ্ঞেস করলে কেমন যেনো ভয়ে মুষড়ে যায়। অদ্ভূত না ব্যাপারটা? "
" হু। " চিন্তিত ভঙ্গিতে জবাব দিলাম আমি।
" বোধহয় এ গ্রামে ডাকিনী থাকে। " হাসতে হাসতে পেছন থেকে বলে উঠলো আহাদ।
একযোগে ওর দিকে ঘুরে তাকালাম আমরা। তাকানোর ভঙ্গি দেখে হেসে একেবারে খুন হয়ে গেলো আহাদ। তারপর কোনমতে সামলে নিয়ে বলল - " শুনেছি লাল মরিচ আর লেবু জিনিসটাকে ডাকিনীরা ভয় পায় ভীষন। তাই যে এলাকায় ডাইনির উপদ্রব থাকে, সে এলাকার মানুষজন নিজেদের সুরক্ষার জন্য লাল মরিচ আর লেবু নিয়ে ঘুরে বেড়ায় সব সময়। আর কালো বিড়াল ডাইনিদের বিশেষ পছন্দের। গুরুজন বলেন বিড়াল সাথে নিয়ে কোন জাদু টোনা করলে নাকি সে মন্ত্রের শক্তি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। "
কেমন যেনো রেগে গেলো তন্দ্রা। দাঁত কিড়মিড় করে বলল - " ফালতু মজা বন্ধ কর। "
গম্ভীর হয়ে গেলো আহাদের মুখ। কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলল - " আর একটা ব্যাপার কি জানো তোমরা? "
" কি?"
" প্রতি রোববার কিন্তু এ গ্রাম থেকে হঠাৎ করেই হারিয়ে যায় একটি করে যুবতী মেয়ে। তাদের কিন্তু আর খুঁজে পাওয়া যায় না কখনোই। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস যুবতী মেয়েদের বলি দিয়ে নিজের শক্তি বাড়ায় ডাকিনীরা। তাই আজকাল ভয়ে কেউ ঘর থেকে তেমন বের হয় না। মা বাবারা সযতনে আগলে রাখে তাদের আদরের যুবতী সন্তানদের।তবুও মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায় কিছু মেয়ে।খালি হয়ে যায় অসহায় মা বাবার বুক। গত সপ্তাহে শুনলাম পাশের গ্রাম থেকেও উধাও হয়ে গেছে দু'তিনজন। "
" আমার মনে হয় এটা কোন নারী পাঁচারকারী দল। ডাকিনীদের নাম দিয়ে নিজেদের কুকীর্তি ঢাকছে। সহজ সরল গ্রামবাসীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এসব কাজ করে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে ওরা। যে করেই হোক এদের উচিত শাস্তি দিতেই হবে আমাদের। আর ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের একটা প্রতিবেদন বানাতে হবে আজই। " দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলাম আমি।
" আমি তাহলে তথ্য কালেক্ট করার কাজে নেমে পড়ি? " উৎসাহিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো তন্দ্রা।
" সাবধান তন্দ্র! খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নিজেই খবর হয়ে যেয়ো না আবার!" মুচকি হেসে ফোঁড়ন কাটলে আহাদ।
কটমট করে আহাদের দিকে তাকালো তন্দ্রা। তারপর অগ্নি দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে গটগট করে হেটে সামনের দিকে চলে গেলো সে। এবং....কয়েক মূহুর্ত পরেই দেখলাম অদ্ভূত একটি ব্যাপার ঘটে গেছে। দৌড়াতে দৌড়াতে ছুটে এলো তন্দ্রা আমাদের দিকে। টেনে নিয়ে গেলো সামনের দিকে।
এবং....তারপর যা দেখলাম, তা দেখার জন্য হয়তো প্রস্তুত ছিলাম না আমরা একদমই। উত্তেজনায় রীতিমতো থরথর করে কেঁপে উঠলাম আমি।
চলবে।