পার্ট - ২

632 17 0
                                    

দরজায় খুট করে শব্দ হলো। সাথে সাথে আমি সামনে তাকালাম। ফর্সা ধরনের একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা দরজা খুললেন।। উনাকে দেখে মনে হলো যৌবনে অনেক সুন্দরি ছিলেন। উনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম
.
---- আসসালামু আলাইকুম। জি.... আমাকে কে ফোন করা হয়েছিল। এখানে আসতে বলা হয়েছিল।
.
ভদ্রমহিলা বললেন
.
----- ওয়ালাইকুম আসসালাম। জি... মা আস.. আস। আমিই ফোন করেছিলাম তোমাকে।

ছোটবেলা থেকেই এদের নাম শুনেছি কিন্তু দেখার সৌভাগ্য কখনো হয়নি। টিচার হওয়ার সুবাদে আজ স্বচক্ষে দেখার ভাগ্য হল।
.
ভদ্রমহিলা আমাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন। ঘর দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ছিমছাম সাজানো গোছানো ঘর। তিনি একটা রুমে নিয়ে গিয়ে আমাকে সোফায় বসতে দিলেন। ভিতরে কাউকে ডেকে আমাকে চা দেওয়ার কথা বললেন চুলায়। 
আমি বললাম
----- না না চা লাগবেনা। আমি এখনই চলে যাব।
----- খেয়ে যাও দেরী হবে না। আমি তোমাকে ফোন করেছিলাম। আমার মেয়ের জন্য। তার টিচার এর বিয়ে হয়ে গেছে কয়েক সপ্তাহ আগে। তাই টিচার এর খোজ নিচ্ছিলাম। স্কুলে কেউ একজন বলল তোমার কথা। 
----- আপনার মেয়ের নাম কি?
----- মারোয়া!
----- কোন ক্লাসে পড়ে?
------সিক্সে! তবে ফাইব থেকে এ প্লাস পেয়ে উঠছে। সিক্সে ও প্রথম।
.
অামি মনে মনে বললাম "খারাপ হবেনা" কিন্তু মুখে বললাম 
------মারোয়া কোথায়?
------ ও স্কুলে। 
ভদ্রমহিলা বলতে লাগলেন, 
------ আসলে আগের ম্যাম মারোয়া কে পছন্দ করত। রিয়া নাম। এখন বিয়ে হয়েছে। তাই পড়াতে পারছেনা। আর এখানে কোন পুরুষ টিচার আনতে চাচ্ছিলাম না। আমার মেয়ে একটা বড় হয়েছে তাই।
----- কার কথা বলছেন?
------ আমার বড় মেয়ে মুক্তা। ও এবার এসএসসি পরিক্ষার্থী।
মারোয়ার আম্মু বলতে লাগলেন এভাবে। বুঝতে পারলাম গল্প প্রিয় মানুষ। একাকিত্ব কাটেনা এখানে থেকে। তিনি তার পরিবার এর আদ্যপান্ত সব বললেন। মারোয়ার আব্বুর মৃত্যু নিয়ে, দেবর-ভাসুর দের জায়গা নিয়ে বিরোধ, অবাধ্য বড় ছেলে মামুন কে নিয়ে। 
আমি কিছুতেই বসা থেকে উঠতে পারছিলাম না। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে এসেছিল। কিছুক্ষণ পর আযান দিবে। কিন্তু মারোয়ার আম্মু অনর্গল কথা বলেতই লাগলেন। আমি উঠার কথা বললেই তিনি হাত ধরে বসায় দেন। মারোয়া ও চলে এসেছিল। আমাকে এসে সালাম দিয়েছিল। ভারী মিষ্টি মেয়ে। এখন আমি এখান থেকে উঠার উপায় খুজতেছিলাম। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। আস্তে আস্তে ফোন নিয়ে রিংটোন বাজাই দিলাম। আর এমন ভাব করলাম যেন আমার কল আসছে। আর মারোয়ার আম্মু কথা থামিয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমি তাড়াতাড়ি ফোন কানে লাগালাম। আর বললাম
----- জি জি আমি এক্ষুনি আসছি। 
এই বলে ফোন রেখে উঠে দাড়ালাম। মারোয়ার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম 
-----আমাকে এক্ষুনি উঠতে হবে। কাল থেকে মারোয়া কে আমি পড়াতে আসব। আজ আসি।
.
তিনি আর বাধা দিলেন না। বের হতে যাব তখন আবার ডাকলেন। বললেন
----- এত মাটি কোথ থেকে?
আমি এবার নিজের দিকে তাকালাম। সত্যি তো অনেক কাদা লেগে আছে। এখন অবশ্য শুকিয়ে গেছে। 
----- বাইরে রাস্তায় বৃষ্টি পড়ে কাদা হয়েছিল। ওই খান থেকে লাগছে।
ফের মারোয়ার আম্মু আমাকে পরিষ্কার হতে সাহায্য করলেন। কাটা জায়গায় মলম লাগিয়ে দিলেন। শেষে যখন বের হতে লাগলাম তিনি জিজ্ঞেস করলেন
----- তোমার নাম তো জানা হল না। কি নাম তোমার?
----- আমার নাম রেহনুমা.... রেহনুমা হাসান।
----- বাহ্! খুব সুন্দর! আনোয়ার হাসানের মেয়ে নাকি তুমি?
---- জি!
---- বাহ্ ভালো! তোমার আব্বুর সাথে পরিচয় আছে আমাদের। সালাম জানায়ো আমার তোমার আব্বুকে।
----- হুম
জবাবে আমি একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে ঘর থেকে বের হলাম। মনটা ভালো হয়ে গেল। মারোয়ার আম্মুর প্রতি আমার শ্রদ্ধা টা বেড়ে গেল। এমন সময় ঘর থেকে ফোন আসল। আমার ভাই রিফাত ফোন করছে। 
----- কিরে রিফাত... কি হয়ছে?
----- কি হয়ছে আমারে জিগাস? কয়টা বাজে খেয়াল আছে? আম্মু এদিকে আমার মাথা খেয়ে ফেলতেছে।
----- ওকে ওকে আমি আসছি।
ফোন কেটে দিলাম। রিফাত আমার ছোট ভাই। আমরা দু বোন, এক ভাই। আমার বড় বোনের বিয়ে হয়ছে এক বছর আগে। তার নাম রেহনুবা হাসান। আর ভাইয়ের নাম রিফাত হাসান।
ঘরে পৌছেয় আম্মু চেঁচামেচি শুরু করল। আম্মুর এমনিতেই অল্প ব্যাপারে হই হই রই রই করা অভ্যাস। দেরী হওয়ায় আজকে আরো বেশি বকা বর্ষন করতে লাগলেন। আমি কানে আঙ্গুল দিয়ে কলের পাড়ে গিয়ে অযু বানিয়ে নামায পড়ে নিলাম। নামায শেষ হলে দেখলাম নুবা আপু ফোন করছে। সামনের সপ্তাহে দুলাভাই বিদেশ চলে যাবে। তাই চলে যাওয়ার আগের দিন জামাই কে শ্বশুর বাড়ি মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য বানিয়ে পাঠাতে হয়। আপুকে সেটা পাঠানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। হায়রে মানুষ!
.
রান্না ঘরে গিয়ে ডেকচির ঢাকনা উল্টিয়ে দেখলাম আম্মু কি রান্না করছে। একটাতে ভাত, একটাতে ডাল, একটাতে শুকনা তরকারি। মাকে ডাক দিলাম
----- আম্মু... আম্মু
----- কি হয়েছে?
----- তরকারি আর নাই?
----- মা... তোর আব্বু এখনো আসে নাই। আসলে আলু কিনে ভর্তা বানায় দিব।
----- লাগবেনা মা। 
----- তোর লাগবেনা কিন্তু তোর লাট সাহেব বাপ ভাইয়ের লাগবে।
.
আমি আর কিছু বললাম না। পড়তে বসলাম। আমার বি.এ ফাইনাল পরিক্ষা বেশি দূরে না। বই এখনো অর্ধেক কেনা হয়নি। বাকি গুলা নিয়ে পড়তে বসলাম। কিন্তু পড়ায় মন বসছে না। বাম চোখের পাতা টা ভীষন ভাবে কাপছে।চোখের পাতা কাপলেই আমার কোনো না কোনো অঘটন ঘটেই। ছোট বেলায় একবার ভীষন চোখ লাফিয়েছিল। তখন আব্বুর সাথে সাইকেলে বাজারে যাচ্ছিলাম। চোখ লাফাতেই কেমন করে যেন আব্বু আর আমি সাইকেল থেকে পড়ে যাই। কিন্তু আব্বুর কারনে কোনো ক্ষতি হয়নি।। এরপর ক্লাস টেনে থাকতে টেস্ট পরিক্ষার রেজাল্ট দেয়ার আগেই চোখ লাফিয়ে ছিল, তো সেই পরিক্ষার রেজাল্টে এক সাবজেক্টে খারাপ করেছিলাম। তখন থেকে আমার বদ্ধমূল বিশ্বাস চোখ লাফালেই আমার বিপদ আসবে। 

এখনো কোন ভাবে থামাতে পারছিনা। আমার মেরুদণ্ড বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। কি হতে যাচ্ছে??

(চলবে)

মোহিনীWhere stories live. Discover now