Faran loves mohini forever ever and ever....
এই লাইন টা আমার কানে বাজতে লাগল।। খুব গরম লাগছিল। সহ্য করতে না পেরে চোখ মেলে তাকালাম। একি আমি কোথায়?? বেহেশতে নাকি?? কিন্তু বেহেশতের চাল টিনের নাকি?? আমার কেন যেন চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথায় যেন দেখেছি। আরে হা!! এটাতো আমার ঘর। তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম। আমি তো আমার ঘরে শুয়ে আছি। আমি বিছানা থেকে উঠতে আম্মু দৌড়ে এলো কোথ থেকে। আমাকে মানা করল বিছানা থেকে না উঠতে। আমি বললাম
..... আম্মু কি হয়ছে?? আমি এখানে কেনো??
...... চুপ থাক। এখন ঘুমা একটু।
...... আমি তো স্কুলে ছিলাম। কিভাবে আসলাম??
..... শরীর খারাপ করেকরেছিল তাই বোধ হয় সাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলি।
আমি ভাবতে লাগলাম কি হয়েছিল???
Faran loves mohini forever ever and ever....
এই লাইনটা মনে আসতেই সব মনে পড়ে গেল। আম্মুকে তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করলাম
..... আম্মু আমার মোবাইল কই??
..... মোবাইল?? সিমটা রেখে মোবাইল ফেলে দিসি। মোবাইল বেশি ভেঙে গেছে তাই।
..... সিমটা কই?? আমাকে দাও।
..... এখন সিম দিয়ে কি করবি? পড়ে নিস। এখন ঘুমা।
অগত্য আবার শুয়ে পড়লাম। তবে সিমটা নষ্ট করে ফেলবো। যে করে হোক আমার শান্তি চায়।
আজকেও কোন টিউশনিতে গেলাম না।
নাহ খিদা লেগেছে। খেয়ে নিই আগে।
রাতে আম্মু সিম টা দিল। আমি কেউ না জানে মত সিমটা চৌদ্দ টুকরা করে পাশের পুকুরে ফেলে দিলাম। যাক বাবা। নো সিম তো, নো মেসেজ তো, নো টেনশন!!!♥
কয়েকদিন স্বাভাবিক ভাবে গেল। তবে মারোয়ার আম্মু আমাকে ডেকে একদিন ফারানের ব্যাপার টা বলল। উনি বললেন যেই দিন আমি চলে আসছিলাম ওই দিন সবাই মিলে ওকে ইনজেকশন দেয় যাতে বিয়েটা নির্বিঘ্নে হতে পারে। সেজন্য ওকে একটা ফার্ম হাউসে রেখে আসা হয়। পরের দিন জ্ঞান ফিরতেই ও সবার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেই এই বলে যে সে কখনো এরকম আর করবেনা। এবং এর পর থেকে সবার সাথে ভালো আচরন করে। মারোয়ার আম্মু বললেন যে ফারানের আর উল্টা পাল্টা কাজের খবর তিনি পান নি।
আমার খানিকটা অস্বস্তি লাগতে লাগল। মারোয়ার আম্মুকে বলব কি বলব না ভেবেই কুল পাচ্ছিলাম না। মারোয়ার আম্মু বলছে যখন তখন নিশ্চই সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। এই বলে নিজেকে প্রবোধ দিতে লাগলাম। কিন্তু আসলে আমি জানতাম না যে আমি মিথ্যা প্রবোধ দিচ্ছি।
আজ প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে যাচ্ছে মোবাইল ভাঙার পর থেকে। আর মোবাইল কিনি নাই আমি। অবশ্য আব্বু একটা সেকেন্ড হ্যান্ড কিনে দিতে চেয়েছিল। আমি মানা করে দিয়ে ছিলাম। মোবাইল ছাড়া আমি টেনশন ফ্রী থাকতে পারি। অবশ্য একটু সমস্যা হচ্ছিল মোবাইল না থাকায়। কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলনা। তাই আমার কাজে একটু ব্যাঘাত ঘটল না তা নই।
আমার দিন গুলো আগের মত স্বাভাবিক হয়ে উঠল। স্কুল, পড়ালেখা, টিউশনি ইত্যাদি নিয়ে ডুবে রইলাম। ফারানের কথা মনে উঠলে দুঃস্বপ্ন ভেবে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতাম।
একদিন মারোয়া দের আগে পড়ানোর কথা।
তাই মারোয়াদের ঘরে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আজ ওদের গেইটের গোলাপি গেইট ফুল গুলো খুব সুন্দর লাগছে। মন ভাল হয়ে গেল ফুল গুলো দেখে। খুশি মনে গেইটের ভিতরে ঢুকলাম। তারপর আমার মনে হল কেউ যেন আমার একদম পিছনে দাড়িয়ে আছে। ঝট করে পিছনে ফিরলাম। আমার অনুমান মিথ্যা না। আমার সামনে এখন দাড়িয়ে আছে ফারান। আমি এখন কি করব? এ কেন আমার পিছু ছাড়েনা। আমি কোন সুন্দরী না। আমার শরীর থর থর করে কাপছে। দৌড় দিয়ে মারোয়া দের ঘরে যাওয়া যাই। কিন্তু ফারান যেন বুঝে গেল আমি কি করতে চাচ্ছি। সে বলে উঠল
..... কোন লাভ নেই মোহিনী। ওরা কেউ আজকে বাড়িতে নাই।
আরে কি বলে লোকটা?? এখন আমার কি হবে?? আমার কান্না চলে আসতেছে। ফারান এক পা এক পা করে আমার কাছে আসছিল আর আমি দূরত্ব বাড়ানোর জন্য পিছনে যাচ্ছিলাম। আমার প্রচুন্ড কান্না আসছিল আর পিছন দিকে হাটার কারনে হোচট খাচ্ছিলাম। এরকম মারোয়াদের বারান্দা আসতেই আমি হোচট খেলাম। সাথে সাথে পাকা কনক্রিটে পড়তাম কিন্তু তার আগেই ফারান ধরে ফেলল। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম ভয়ে। কিন্তু কার বাহুতে আছি এটা মনে হতেই চোখ খুললাম। দেখলাম যে ফারান আমার তাকায় আছে আর ওর ঠোটের কোনে মুচকি হাসি। ওর হাসি প্রথম দেখলাম। আমি সাথে সাথে উঠে দাড়ালাম। আমার প্রচুন্ড ঘৃণা হচ্ছিল। আমি যে স্থানে ওর স্পর্শ লেগেছিল তা শুধু মুচছিলাম। আর তা দেখে মনে হচ্ছিল ওর চোখ মুখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি মারোয়াদের দরজায় গিয়ে করাঘাত করতে লাগলাম আর ফারান আমার দিকে এগুচ্ছিল। আমি আরো জোরে করাঘাত করতে লাগলাম। আমি এতটাই নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম যে দরজা খুলে গিয়েছে সেটা আমার হুশে নেই। হঠাৎ করে মনে হল দরজায় করাঘাত করছি আওয়াজ হচ্ছে না কেন?? আমি তাকালাম দরজার দিকে। দরজা খুলছে ঠিকই তবে ওই খানে মামুন দাড়িয়ে আছে আর আমি দরজা ভেবে ওর পেটে বুকে করাঘাত করছিলাম। কিন্তু এই নিয়ে মামুন কে চিন্তিত দেখলাম না। সে ফারান দিকে তাকিয়ে আছে রাগি আর কিছুটা বিস্মিত চোখে।।। ফারানের কথা বলা বাহুল্য। সে পারলে এখন দুনিয়া জ্বালিয়ে দেয়। মামুন কে দেখে আমার কলিজায় পানি আসল। মামুন দুই হাত দরজার দুই পাশে দিয়ে দাড়িয়ে ছিল। আমি তাড়াতাড়ি মামুনের হাতের নিচ দিয়ে ঢুকে ওর পিছনে গিয়ে দাড়ালাম। আজ মামুন একটা থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট আর হাফহাতা গেন্জি পড়ছিল। কিন্তু আজকে আমার ওই দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। আমি শুধু ফারানের নজর থেকে বাচতে চাই। মামুনের পিছনে লুকিয়ে আছি। প্রথমে ফারানের রাগী কন্ঠ পাওয়া গেল।
...... মামুন তুমি এখানে কি করছ?? তোমার না বেড়াতে যাওয়ার কথা??
..... আমি যাব কিনা যাব না সেটা আমার ব্যপার। কিন্তু আপনি এখানে কি করতেছেন?? এখানে আপনার কি কাজ??
..... আমার কাজ জানোই। ভালোই ভালোই মোহিনী কে দিয়ে দাও।
এই কথার পর মামুন আমার দিকে এক মুহুর্ত তাকাল। আমি নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম আমি যাব না। কিন্তু মামুন ফারানের দিকে তাকিয়ে বলল
..... ঠিক আছে নিয়ে যান।
আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না মামুন এ কথা বলছিল। আমি ঝাপটিয়ে মামুনের পেছনের গেন্জি শক্ত করে ধরলাম। আমার হাত পা মৃগী রোগির মত কাপছে। আমি যাব না, কখনোই যাব না।
.
(চলবে)