রাতে তিনভাই একসাথে বসে আডডা দিচ্ছিল ।মিশু এসে হাজির!
মিশুকে দেখেই মর্ম বলল,ওই যে রানী এলিজাবেথ এসে গেছেন।
মিশু কোনো প্রত্যুত্তর না দিয়ে সোফায় বসে পড়ল।
তিনভাই অবাক হয়ে তাকাচ্ছে।মিশু তো এত চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে নয়।কি হলো মেয়েটার?
মিশু মুখ কালো করে বসে আছে।
মর্ম বলল,what's up mishu?
- up নয়,down...
- what's down mishu?
বলেই মর্ম দাত বের করে হাসতে লাগল।
মিশু বলল,তোমাদের কাজের মেয়ে হিমু আমাকে বান্দর বলেছে।শুধু বান্দর নয়,মহিলা বান্দর!
তিন জনেই হেসে উঠল।
মর্ম বলল,ঠিক ই বলেছে।তুমি তো খুব চঞ্চল, তাই বলেছে।রাগ করছ কেন?
- খরগোশ বলতে পারত,হরিনী বলতে পারত।কিন্তু মহিলা বান্দর বলবে?
- আচ্ছা আমি ওকে বকে দিবো। এবার মন ভালো করো।
মিশু কিছু বলল না।মর্ম আবারো বলল,মিশু মনি,তুমি চুপচাপ থাকলে ভালো দেখায় না।বাচাল রা চুপ করে থাকলে ভয় লাগে।
মিশু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল,আমি বাচাল?
- হুম।এইবার ঠিক আছে।
- আপনি খুব পচা লোক।
- ১০০%
- আপনি একটা রামছাগল।
- অতি উত্তম কথা।
-চুপ করুন।বেশি কথা বললে আমার ওয়াশরুমে যা যা ত্যাগ করেছেন, তুলে ফেলে দিয়ে আসতে বলব।
মৈত্রী এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল।এবার ও বলল,তুই ওর ওয়াশরুমে কি করেছিস?
- মলমুত্র ত্যাগ করেছি ভাইয়া।
- ওর ওয়াশরুমে করেছিস কেন? আমি হলে তো ওর বিছানায় করতাম।
বলেই ওরা হাসতে লাগল।মিশু রাগে ফুসছে।এদের সাথে তো কথায় পারা যায়না।নাহ আর ঝগড়া করা যাবেনা।এখন সমঝোতায় আসতে হবে।ওরা আমার বন্ধু হয়ে গেলে তখন কথার প্যাচে ফেলাটা সহজ হবে।আর খুব সহজেই বোকা বানানোও যাবে।
কথাগুলো ভেবে মিশু শান্ত হয়ে গেল।
মিষ্টি স্বরে বলল,আচ্ছা মৈত্রী ভাইয়া একটা কথা বলি?
মৈত্রী অবাক হয়ে বলল,ভুতের মুখে রাম নাম!! আমাকে ভাইয়া বলছ ব্যাপার টা অবিশ্বাস্য।
মর্ম বলল,নিশ্চয় ই রানী এলিজাবেথ মনে মনে কোনো ষড়যন্ত্র করছে।
মিশুর খুব রাগ হচ্ছিল।কিন্তু রাগ প্রকাশ করল না।
বলল,আমি যাই এখন। কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।
বলেই মিশু বেড়িয়ে গেল।
.
মর্ম ও মৈত্রী একে অপরকে বলল,ব্যাপার টা কি? কি যেন ভেবে মিশু হঠাত শান্ত হয়ে গেল।
মর্ম বলল,হয়ত মহিলা বান্দর কথা টা মনে পড়ে গেছে।
দুভাই হেসে উঠল।
মৈত্রি বলল,তবে যাই বল,মেয়েটা পাগলী কিন্তু।
- হুম।খুব সহজ সরল।বাচাল কিন্তু সুন্দর একটা মন আছে।
- হুম।সিম্পল ডেঞ্জারাস মাইয়া।
দুজনে আবারো হেসে উঠল।
.
মিশু রুমে এসে ভাবতে লাগল কিভাবে ওদের সাথে সন্ধিতে আসা যায়?
ভাবতে ভাবতে আয়নার সামনে দারিয়ে দাত কেলিয়ে বলল,আমার দাত গুলা তরমুজের বিচির মত।হা হা হা...
.
পরদিন ঘুম থেকে উঠেই মিশু সাজগোজ শুরু করে দিলো। আজ স্পেশাল দেখানো চাই।
কিন্তু চোখের কাজল এবড়ো থেবড়ো হয়ে গেল,লিপস্টিক ঠোটের বাইরে চলে আসল।মিশু রেগে মুখ ধুয়ে এসে আবারো সাজতে লাগল।এবার মেকাপ টা বেশি হয়ে গেল।মনে হচ্ছে গালে শেওলার মত আস্তরণ পড়েছে।
মিশু আবারো ভালভাবে মুখ ধুয়ে এসে বসে রইল।আর সাজুগুজু করবে না।সাজলেই পেত্নী পেত্নী দেখাচ্ছে।তারচেয়ে না সাজাই ভালো।
.
মিশু বাইরে আসতেই মর্ম বলল,ওহ মিশু,আই লাইক দিছু।
- থাংকু।
- মিশু একদম Angel baby লাগছে!
- আপনাকে খাটাশের বাচ্চার মত লাগছে।
- কিহ!
- আপনি আমাকে angel baby বললেন কেন?
- সুন্দর দেখাচ্ছে তাই....
- আর আপনাকে গিরগিটির মত দেখাচ্ছে।বহুব্রীহি....
কথা টা বলেই মিশু জিহ্বায় কামড় দিলো। ওদের সাথে তো সন্ধিতে আসার কথা কিন্তু সন্ধি বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে।
মিশু বলল,আসলে আপনাকে রাগাচ্ছিলাম। সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে।handsome handsome. আমার বান্ধবী রা দেখলে লাইন লাগবে আপনার পিছনে।
মর্ম হাসল।মিশু মনে মনে ভাবল,যাক প্রশংসায় কাজ হয়েছে।
তারপর থেকে আর ঝগড়া না করে মর্ম'র সাথে ঘুরতে লাগল।
.
সারাদিন একসাথে ঘোরাফেরা,খাওয়া দাওয়া,গল্প সবমিলিয়ে দিন টা বেশ ভালো কাটল।
পরদিন আবারো সবাই মিলে ঘুরতে গেল।সারাদিন আনন্দে মেতে রইলো ওদের সবার সাথে।মিশুর কেবলই মনে হচ্ছিল,দিনগুলো এত ভালো কাটছে কেন?
.
ধীরে ধীরে ছয়দিন হয়ে গেল।
আজ অতিথিরা চলে যাবেন। মিশুর খুব মন খারাপ। কারও সাথেই কোনো কথা বলছে না।
মৈত্রী এসে মিশুর পাশে বসে বলল,ছোট আপুনি আমরা চলে যাচ্ছি।বিদায় দাও।
মিশু চোখ তুলে তাকাল।ওর কিছুই ভালো লাগছে না।
বলল,আপ্নারা আসলেন আবার চলে যাচ্ছেন কেন?
- হা হা।যেতেই তো হবে আপু।কয়দিন থাকবো বলো?
- অনেকদিন। যতদিন পর গেলে আমার কান্না পাবে না।
- সে কি! তোমার কান্না পাচ্ছে?
- হুম।খুউউব কান্না পাচ্ছে।মায়া হয়ে গেছে একটা।এভাবে হুট করে এসে মায়া বাড়িয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
- পাগলী মেয়ে,যেতেই তো হবে।আসো বিদায় দাও সবাইকে।তুমিও বেড়াতে যেও।
- যাবই তো। আমিও আপনাদের মায়া বারিয়ে দিয়ে চলে আসবো।
- হা হা হা।তোমাকে আমরা রেখে দিবো।
মিশু কিছু বলল না।
মর্ম এসে পাশে বসল- কি হইছে মিশু ম্যাম?
মিশুকে অনেক চেষ্টা করেও কেউ কথা বলাতে পারল না।
অবশেষে অতিথি রা চলে গেল।
.
মিশু বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে। কারও কি খারাপ লাগছে না? অতিথি রা এসেই চলে গেল।রেখে গেল শুধু কিছু স্মৃতি আর মায়া!
চলবে