638 21 9
                                    

বৈশাখ মাস। উত্তর দিগন্তের হালকা মেঘটা ঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে। তবুও মাথার উপর সূর্যটা নির্লিপ্তভাবে তাপ দিয়েই চলেছে। শহুরে যান্ত্রিক জীবনে পরিবেশের এমন পরিবর্তন কারো যেন খেয়াল করার সময় নেই। যে যার মত হারিয়ে গিয়েছে শহুরে যান্ত্রিকতার ভীড়ে। রাস্তার চারপাশে মানুষের কোলাহল আর গাড়ি ঘোড়ার ভীড় গ্রীষ্মের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে।
অবন্তীর ইউনিভার্সিটির ক্লাস আজকে দুপুরের মধ্যেই শেষ। চোখে চশমা। চশমার ওপাশে একজোড়া মায়াবী চোখ। বুদ্ধিদীপ্ত একটা চেহারা। গ্রীষ্মের প্রখর তাপে রাস্তার পাশের কুকুরটার ছাতি ফেটে যাওয়ার দশা। কুকুরটা অর্ধ জিহ্বা বের করে গোল গোল চোখে অবন্তীর দিকে তাকিয়ে আছে। অবন্তী ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে রাস্তায় ঢেলে দেয়। কুকুরটা তৃষ্ণা নিবারণে ব্যস্ত। অবন্তী অপেক্ষা না করে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে হাটা দেয়।

অবন্তী বাসার সামনে দাড়িয়ে। কলিং বেল চাপছে। ভেতর থেকে ইমন দরজা খুলে দিল। ইমন অবন্তীর খালাত ভাই। অবন্তীর মা মারা যাওয়ার পর অবন্তী খালামণির বাসায় থাকে। এটাই এখন ওর পরিবার। ইমনের বয়সে অবন্তীর থেকে অনেক ছোট।  মাত্র ক্লাস টু তে পড়ে। তবে এমন ভাব নেয় যেন ও অবন্তীর বড় ভাই। দুইভাইবোনের মধ্যে বেশ ভাব। ইমন অবন্তীর খালাত ভাই হলেও অবন্তীর মনে ইমনের জায়গা আপন ভাইয়ের মতোই। আর ইমনের ক্ষেত্রেও তাই। অবন্তী হাতটা মুঠো করে ইমনের দিকে বাড়িয়ে ধরে। ও ভাবে আপু হয়তো ওর জন্য চকলেট এনেছে। বেশ আগ্রহ নিয়ে ইমন অবন্তীর মুঠোটা খুলে। অবন্তীর খালি মুঠো দেখে ইমনের হাসিটা মিলিয়ে যায়। অভিমান করে সে। ছোট্ট ভাইয়ের এমন অভিমান দেখে বেশ মজা পায় অবন্তী। ও ব্যাগের পাশের পকেট থেকে দুটা চকলেট বের করে ইমনের হাতে দেয়। পরক্ষণেই ওর সমস্ত অভিমান গলে জল।

---কীরে পিচ্চি খাইছিস দুপুরে??
---দ্যাখো আপু আমি মোটেও পিচ্চি না। আমি এখন ক্লাস টু তে পড়ি। So আমাকে পিচ্চি বলবা না বুঝছো?? Btw আমি খাবারটা খেয়ে নিছি।

ইমনের মুখে এমন বড়দের মতো কথা শুনে হাসি পায় অবন্তীর। ছোট ভাইকে আরেকটু রাগিয়ে দিতে অবন্তী বলে উঠলো---

---তুই পিচ্চি না তো কি?? যা ভাগ। এই বলে অবন্তী ওর ঘরের দিকে চলে যায়।

ইমন হাতের তালুতে চকলেট দুটো নিয়ে অভিমানের দৃষ্টিতে অবন্তীর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

অপেক্ষার প্রহর [Completed]Where stories live. Discover now