387 18 1
                                    

আজকে অবন্তীর ভীষণ মন খারাপ। কারন সে এই প্রথম এক নির্মম সত্যের মুখোমুখি হয়েছে। এতোদিন যাকে ও বাবা বলে জেনে এসেছে তিনি অবন্তীর নিজের বাবা নন। সৎ বাবা। মানুষটা ওকে বুঝতেই দেয় নি। কিন্তু নিজের বাবা একমাত্র মেয়েকে দেখতে আসে নি কোনদিন। আকাশে হঠাৎ মেঘের ঘনঘটা। একটু পরেই বৃষ্টি শুরু হলো। অবন্তীর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। হঠাৎ মনে হলো ওর মাথার উপর কেউ একজন ছাতা ধরেছে। পাশ ফিরে দেখে সাজিদ দাড়িয়ে।

---তুমি এখানে।

---এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। দেখলাম তুমি বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছো। যাইহোক এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে তোমার। এভাবে ভিজে কেউ??

---আসলে হঠাৎ ছাতাটা আনতে ভুলে গেছি।

বৃষ্টির তীব্রতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অবন্তী সাজিদ দুজনেই ভিজে যাচ্ছে। ওরা একটা ওভার ব্রীজে এসে দাড়ালো। দুজনেই চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। নীরবতা ভেঙে সাজিদ বলল---

---অবন্তী একটা কবিতা শুনবে??

---হুম বলো..।

"বৃষ্টি,
হুম বলো...
আজ আর কবিতা লিখব না।
ইট পাথরের শহরে তুমি বড্ড বেমানান।
এইতো দেখো না ওভার ব্রীজের উপর দাড়িয়ে আছি কিন্তু কবিতা ভাবতে পারছি না।
আচ্ছা তুমি জানো?
এই শহরে জীবন ভাসে।
তুমি হয়তো আমার কাছে কবিতা।
কিন্তু ওদের কাছে তুমি অসামাজিক,
তুমি নিকৃষ্ট...।।"

অবন্তী পাশ ফিরে দেখে একজন মা তার দুজন সন্তান নিয়ে হয়তো ওভার ব্রীজে বসে ছিল। কিন্তু এই বৃষ্টিতে নিজে ভিজে সন্তানদের শুকনো জায়গায় রাখার চেষ্টা করছেন।
অবন্তীর অতীতের কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যায়। ওর মা ওকে অনেক আদর করতো আর অবন্তী ওর মা কে খুব ভালোবাসতো। ওরা তখন ওদের নানু বাড়ি থাকে। অবন্তীকে কখনো বাবার অভাবটা বুঝতে দেয় নি।

অবন্তীর  মা বাবার বিয়েটা ছিল প্রেমের। অবন্তীর দাদুবাড়ি থেকে যখন বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয় তখন নানাভাই এতে রাজি হন নি। এতে না কি তারা অপমানিত বোধ করছিলেন। কিন্তু অবন্তীর আম্মু সব কিছু ছেড়ে ওর বাবার হাত ধরে চলে আসেন। এর পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ তেমন একটা সুখের হয় নি। তিনি শশুড় বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসেন। সেখানেই বড় হতে থাকে অবন্তী। কিন্তু শেষ ছায়া তার মা ও একদিন চলে গেল না ফেরার দেশে। ব্যাপারগুলো অবন্তীর মনে দাগ কেটে গেছে। অবন্তীর কাছে প্রেম ভালোবাসা নিছক অর্থহীন একটা বিষয়। তবুও আজকে কেন জানি না অবন্তীর সাজিদকে ভালোবাসতে খুব ইচ্ছা করছে।

অপেক্ষার প্রহর [Completed]Where stories live. Discover now