শীতুলের ঘুম আসছে না। খুব ছটফট লাগছে। বিষণ্ণ মনে ছাদে এসে দাঁড়ালো। চমকে উঠলো যখন একটা মেয়ের কান্নার শব্দ কানে এলো। কেউ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। পাশ ফিরে দেখলো কিছুটা দূরে একটা মেয়ে ছাদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। খানিক বাদেই বুঝতে পারলো ওটা শ্রবণা। শীতুল কাছে এগিয়ে এসে গলা খাকারি দিলো।
শ্রবণা কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে শীতুলের দিকে তাকালো। জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে রইলো শীতুলের দিকে। শীতুল অপ্রস্তুত হয়ে বলল, 'সরি, আপনার কি অনেক দুঃখ?'
শ্রবণা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, 'কেন?'
- 'রাতে খাবার খাননি আবার এখন কাঁদছেন। আমার মনেহচ্ছে আপনার অনেক দুঃখ।'শ্রবণা চোখ মুছে বললো, 'আমার দুঃখ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। তখন খুব তো অপমান করে তাড়িয়ে দিলেন। এখন আবার কেন এসেছেন?'
- 'এত রাতে ছাদে একা একটা মেয়ে কাঁদছে। তাও আবার একটা নির্জন আইল্যান্ডে। আমি পাশে দাঁড়িয়ে চুপচাপ তার কান্না দেখে যাবো?'
- 'সেটা তখন মনে হয়নি? এই নির্জন দ্বীপে এত বড় প্রাসাদে শুধু দুজন মানুষ। অপর মানুষটার সাথে ভদ্রতার খাতিরেও কথা বলা যায়?'
- 'ওহ আচ্ছা। আমার এটা একদমই মনে হয়নি। অপর মানুষটা তো একাই সাহস করে এসেছে। সে হয়ত একা থাকতেই ভালোবাসে।'
- 'সে যেটাই ভালবাসুক। নিজে থেকে তো আপনার কাছে গিয়েছিল কথা বলার জন্য তাই না?'শীতুল মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, 'ইশ! তাহলে তো অন্যায় করে ফেলেছি। এখন কি মহারাণী ক্ষমা করে দিতে পারেন?'
- 'না পারি না। আপনার উপর আমার অনেক অভিমান জমে গেছে।'
- 'ওহ আচ্ছা।'
- 'আমার সামনে এরকম ওহ আচ্ছা ওহ আচ্ছা করবেন না।'
- 'ওহ আচ্ছা'শ্রবণা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই শীতুল বললো, 'আর বলবো না।'
- 'হুম। আপনি এত রাতে ছাদে কেন?'
- 'আমার কথা ছাড়ুন। আপনি এত রাতে ছাদে কি করছেন?'
- 'কাঁদছি।'
- 'কাঁদুন কিন্তু বেশি না। কারণ বেশি কাঁদলে গালে ঘা হয়।'
- 'বেশি কাঁদলে গালে ঘা হয়? এই অদ্ভুত তথ্য কোথায় পেয়েছেন আপনি?'শীতুল বললো, 'চোখের জলে নুন থাকে। কেঁচোর গায়ে নুন ছিটালে কেঁচো গুলিয়ে মুলিয়ে দলা পাকিয়ে মরে যায়। মেয়েদের গাল আরো বেশি সংবেদনশীল। তাহলে মেয়েদের গালে ইনফেকশন হবে না বলুন?'