ট্রেনের জানালা দিয়ে শিরশির করে হাওয়া আসছে। শ্রবণা একবারও মাথা তুলছে না। জানালায় হাতের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। কতক্ষণ এভাবে কেটে গেছে কেউই জানেনা। হঠাৎ শীতুল শ্রবণা'র বাহু টেনে ধরে ওকে নিজের দিকে টেনে নিলো। আচমকা এরকম আচরণে চমকে উঠলো শ্রবণা। অবাক চোখে শীতুলের দিকে তাকিয়ে রইলো।শীতুল বললো, 'আপনি কি পাগল? এভাবে হাত বাইরে দিয়ে রেখেছেন। এক্ষুনি তো গাছের ডালে হাত ছিলে যেতো।'
শ্রবণা নিষ্পলক ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো। শীতুলের চোখে মুখে যে অন্যরকম আভা মিশে আছে সেটাই লক্ষ করছে ও। শীতুল দেখতে অনেক স্নিগ্ধ। ওর নাম শীতুল না হয়ে স্নিগ্ধ হলে ভালো হতো। স্নিগ্ধ চোখের চাহনিতে শ্রবণা খুন..শীতুল বললো, 'আমি কিছু বলছি। শুনতে পাচ্ছেন না?'
শ্রবণা মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, 'জ্বি।'
- 'এতক্ষণ পর আপনার হুঁশ হলো? আপনি এমন অদ্ভুত কেন বলুন তো?'শ্রবণা ফ্যালফ্যাল করে শীতুলের দিকে তাকিয়েই আছে। এত বছরের কঠিন অসুখটা আবারো কঠিনভাবে জেগে উঠতে আরম্ভ করেছে। এই অসুখে যে পড়েছে, তার আর নিস্তার নেই। প্রেমেই বাঁচন, প্রেমেই মরণ। প্রিয় অসুখের যে জ্বালা, যে এই অসুখে মরেছে সেই জানে। একবার পড়বে তো মরবে। বেঁচে থেকেও মরণ। যে প্রেমে নিজের বলতে কিছুই থাকে না, সমস্ত সত্তাটাই সেই একজনকে নিয়েই পড়ে থাকে। সে প্রেম তো মরণের সমানই।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শ্রবণা। শীতুল কপালে ভাঁজ ফেলে শ্রবণার দিকে তাকালো। অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললো, 'বিশ্বাস করুন, আপনার মত মেয়ে আমি আর একটাও দেখিনি। অদ্ভুত মেয়ে আপনি!'
শ্রবণা নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো, 'অনেক বিরক্তিকর তাই না?'
- 'হ্যাঁ। না মানে বিরক্তিকর না, কিন্তু কেমন যেন। অসহ্য লাগে আমার। গা খিচমিচ করে।'শ্রবণা হেসে বললো, 'আপনিও তো কারো প্রেমে পড়েছেন। নিজেও টের পাবেন এর জ্বালা কেমন। পুড়বে, জ্বলবে, এই দাগ আজীবন থেকে যাবে। কখনো কমবে, ভুলে যাবেন। আবার হঠাৎ কেউ ক্ষতটা খুঁচিয়ে দিলে বুঝবেন এই দহনের ঝাঁঝ কত। এই ক্ষত কখনো পুরোপুরি শুকায় না।'