৩
শীতুল এসিটা বাড়িয়ে দিয়ে গলা পর্যন্ত লেপ টেনে দিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে শ্যামলতাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। শ্যামলতা কথাটা চিঠির মাঝখানেই পেয়েছে শীতুল। এছাড়া আর কোথাও অন্য কোনো নাম এখনো চোখে পড়েনি। শুধুমাত্র এতটুকু একটা নাম দিয়ে এত বড় পৃথিবীতে মেয়েটাকে কোথায় খুঁজে পাবে কে জানে। শীতুল ওর কথা ভেবে সারারাত ছটফট করেছে। কল্পনায় একটা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মেয়ের ছবি একে নিয়েছে। শ্যামলতা যেভাবে ওকে নিয়ে ভাবে, শীতুল নিজেও মেয়েটাকে মনের মধ্যে গেঁথে ওকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।হঠাৎ শীতুলের মনে হলো শ্যামলতা ওর পাশে। ও হাত বাড়িয়ে শ্যামলতাকে জাপটে ধরতেই অনাবিল স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলো। মনেহচ্ছে এতদিন পর পূর্ণ হয়ে গেলো সে। নিজেকে কতটা সুখী মনে হচ্ছিলো শীতুল নিজেও তা অনুধাবন করতে পারছে না। ও জোরে জোরে বললো, 'আজ থেকে তুমিও আমার একটা অসুখ। আমার প্রিয় অসুখ। এখন তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলতে বলতে ঘুমাবো আমি। ওকে?'
শীতুল সেটাই করলো। বিড়বিড় করে কথা বলছিলো আর থেকে থেকে শব্দ করে হাসছিলো। হাসতে হাসতে একসময় চোখে ঘুম নেমে এলো। ঘুমিয়েও পড়লো অনায়াসে।
এদিকে শ্রবণা স্থির থাকতে পারছে না। দরজার সামনে বারবার ঘুরঘুর করছে। লোকটা বাইরে গেছে নাকি ভেতরে আছে বুঝতে পারছে না ও। একবার ওর দরজার সামনে বারান্দাতেই বসে পড়লো শ্রবণা। কিছুক্ষণ মনেমনে প্রার্থনা করলো খুব তাড়াতাড়ি যেন লোকটার সাথে দেখা হয়ে যায় আর কথাও হয়। শ্রবণা নিশ্চিত হতে চায় এটাই ওর অসুখ কিনা।
গালে হাত দিয়ে অনেক্ষণ বসে রইলো ও। এখনো দরজা খুলছে না। লোকটাকে রুমে একাই দেখেছিলো, একা একটা লোক এতক্ষণ রুমে কি করছে? আজব ব্যাপার। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাচ্ছে। মানুষ বউ নিয়ে হানিমুনে এলেও তো একবার রুম থেকে বের হয়।
শ্রবণার মনটা বিষন্ন হয়ে আছে। একদিকে ডায়েরি হারিয়ে গেছে আরেকদিকে অসুখ বেড়ে গেছে। প্রিয় অসুখ আজ সামনে এসে হাজির। ওনার মুখটা আরেকবার দেখার জন্য মনটা আকুপাকু করছে উনি সেটা বুঝবেন কি করে। এ যে কেমন জ্বালা, কেবল যার হচ্ছে সেই টের পাবে। ডায়েরিতে লিখলে স্বয়ং ডায়েরিও বুঝবে না মেয়েটার বুকের ভিতর ছিঁড়ে খানখান হয়ে যাচ্ছে। কষ্টে কান্না আসছে শ্রবণার।