শীতুল রিসোর্ট ছেড়ে চলে এসেছে। শ্রবণার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো ওর ভেতরে দহন শুরু করে দিয়েছিলো। তাছাড়া রাতে হঠাৎ শ্রবণার মন খারাপ হয়ে যাওয়া, বারবার ওর কাছে আসা সবমিলিয়ে মন কেমন করতে আরম্ভ করছিলো। তাই চেয়েছিলো আর কখনো শ্রবণা'র সাথে দেখা না করতে। রিসোর্ট ছেড়ে বের হওয়ার পর মায়ের নাম্বার থেকে কল এলে ও রিসিভ করে বললো,
- 'আম্মু, আমি ঘুরতে এসেছি। দুটো দিন আমাকে আমার মত থাকতে দিবে প্লিজ? ফোন বন্ধ করে রাখবো।'
- 'কেন বাবা কোনো সমস্যা?'
- 'আমার মেন্টাল স্ট্রেস লাগছে। প্লিজ আমি দুটো দিন আমার নিজেকে সময় দিই?'মায়ের সাথে কথা বলে ফোন বন্ধ করে রাখলো শীতুল। মনের অবস্থা ভীষণ খারাপ। শ্রবণার কণ্ঠ, চেহারা এখনো চোখে ভাসছে। যেভাবেই হোক শ্রবণার স্মৃতি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। একা থাকলে শ্যামলতাকে নিয়ে ভেবে ব্যস্ত থাকলে শ্রবণা'র স্মৃতি ধীরেধীরে মুছে যাবে।
শীতুল কাছাকাছি আরেকটা রিসোর্টে গিয়ে উঠলো। এখানে দুটো দিন আরাম করে থাকা যাবে। এখানে কোনো মেয়ের সাথে সামান্য কথাটুকুও বলবে না, এরকমই সিদ্ধান্ত নিলো ও। মোবাইল ফোন পুরোপুরি বন্ধ করে রাখলো।
এদিকে শ্রবণা'র মনের ভিতর উথাল পাথাল ঝড় বইছে। শীতুলের হঠাৎ চলে যাওয়াটাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না ও। নিশ্চয়ই ওর আচরণে বিরক্ত হয়ে চলে গেছে শীতুল। এখন কিভাবে যে যোগাযোগ করা যাবে!
ভাবতেই ম্যানেজারের কথা মাথায় এলো। রিসোর্ট বুকিং দেয়ার সময় নাম, ঠিকানা ও ফোন নাম্বার দিতে হয়। ম্যানেজারের কাছে নিশ্চয় শীতুলের নাম্বার আছে।
ছুটে ম্যানেজারের কাছে এলো শীতুল। শীতুলের নাম্বার চাইতেই উনি অবাক হয়ে তাকালেন। শ্রবণা বললো, 'উনি আমার উপর রেগে আছেন। সরি বলতে হবে। প্লিজ ভাইয়া, নাম্বারটা দিন আর মামা কে এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না প্লিজ?'ম্যানেজার আশ্বস্ত করে শীতুলের ফোন নাম্বার দিলো শ্রবণাকে। রিসিপশনে বসেই অনেকবার কল দিলো কিন্তু নাম্বার বন্ধ। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো শ্রবণা'র। সবচেয়ে বড় কথা শীতুলকে হারালে শ্রবণা থাকবে কি নিয়ে? একদিকে ডায়েরি হারিয়ে নিজেকে ভীষণ নিঃসঙ্গ লাগে। প্রিয় অসুখকে পেয়েও হারিয়ে ফেললে এরচেয়ে খারাপ বিষয় আর কিছুই হতে পারে না।