আমাদের পরিবারটা অনেক বড় পরিবার। যদিও এটা জয়েন্ট ফ্যামিলি না আবার একদিকে জয়েন্ট ফ্যামিলিও। কারণ আমার বাবারা চার ভাই একই বিডিংয়ে চারজন চার ফ্লোরে নিজেদের পরিবার নিয়ে আলাদা আলাদা থাকে। নিচ তালায় বড় আব্বু দ্বিতীয় তালা আমরা, তিন তালায় বড় চাচ্চু আর চার তালায় ছোট চাচ্চু থাকে। তবে আমাদের চাচাতো ভাই বোনদের জন্য কোনো ঘরে ধরা বাধা নাই। যার যেখানে মন চায় খাই। যেখানে মন চাই ঘুমাই। আমার আব্বু চাচারাও একি যাই হোক, এলাকায় আমাদের পরিবারে আবার বেশ নামডাক আছে। সে সব বলা যাবে আগে আমার পরিচয় দিয়ে নিই। আমি জিবরার জামান। অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি। এবার আমার পরিবার সম্পর্কে একটু ধারণা দেই। আমরা ভাই বোন চার জন দুই ভাই দু বোন। আমি সবার ছোট । আমি ছাড়া সবাই বিবাহিত। এখন আমাদের ঘরে আব্বু-আম্মু, ভাইয়া-ভাবি আর আমি ছাড়াও একটা ছোট্ট বুড়ি আছে আমার ভাইয়ার মেয়ে নাম রাইসা। আমার বড় আব্বুর এক ছেলে নাম রাকিব এক মেয়ে নিশি দুই জনই বিবাহিত। আমার বড় চাচ্চুর দুই মেয়ে একজনের নাম রিয়া অন্যজন দিয়া আর এক ছেলে রিসাদ। রিয়া আমার সমবয়সী কিছুদিন আগেই ওর বিয়ে হয়েছে। দিয়া এবার ইন্টার পরিক্ষা দিবে আর রিসাদ পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। রিসাদ আবার বইপোকা নামে পরিচিত সারাদিন এই পোলা কেমনে যে এই বই নিয়ে বসি থাকতে পারে আমার মাথাই ডুকে না, আমিতো বই নিয়ে বসলেই ঘুম আসি যায়। ছোট চাচ্চুর একমাএ মেয়ে রুহি, এবার ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছে। বলা যায় ছোট চাচ্চুর কলিজা। মেয়ে যা চাইবে ছোট চাচ্চু নিয়ে হাজির। আমার আব্বু চাচ্চুরা সবাই ব্যবসায়ী। সবাই নিজ নিজ ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বড় আব্বু সাথে রাকিব ভাই ব্যবসায় সহায়তা করে আর আব্বু অফিসে ভাইয়া আগে থেকে বসত আমি অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আব্বুর জোরাজুরি তে পড়াশুনা ফাকে ফাকে অফিসেও বসি। যাই হোক, ছোট থেকে আমাদের চাচাত ভাই বোনদের একজন আরেক জনের বাসায় অবাদ আসা যাওয়া। আগে যখন বড় আপু আর ভাইয়ারা ছিল তখন খুব মজা হতো এখন অবশ্য সেটা অনেক কমে গেছে কারণ আপুরা সবাই শশুর বাড়িতে আর ভাইয়ারা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। আজাইরা আছি খালি আমি। তবে আজাইরা থাকিও শান্তি নাই। বাসায় দুই রাক্ষসী আছে দিয়া আর রুহি সারাদিন আমারে নিয়ে গুতাগুতি। এই দুইটা আমার জীবনরে তেজপাতা বানাই ফেলছে। দুই মাইয়ার কারণে আমি একটা প্রেমও করতে পারি না। তাদের একটাই কথা ওরা বেচে থাকতে আমারে প্রেম করতে দিবে না। তবুও আমি ওদের কে ফাঁকি মাইরা তিনটা মাইয়া পটাই ছিলাম কিন্তু রাক্ষসী গুলা কেমনে কেমনে জানি জেনে গেছে পরে আমার প্রেমের বারটা বাজাইছে। এদের জালায় অতিষ্ট হয়ে প্রেম করার চিন্তা বাদ দিলাম কারণ আমি জানি তারা আমারে প্রেম করতে দিবে না। মাঝেমাঝে চিন্তা করি আল্লাহ এই রকম চাচাত বোন যাতে আমার শএুকে ও না দেয়। ছোট থেকে এই দুইটা আমারে জালাইয়া মারতেছে। তবে মাইয়াগুলা যতই আমারে জালায় আমার চাচা চাচিরা আমাকে অনেক আদর করে । অবশ্য এর কারণও আছে প্রথমত ছোট চাচার কোনো ছেলে নাই। ছোটবেলা কার কথা তখন ছোট চাচির নতুন বিয়ে হয়েছে রূহির তখনো জন্ম হয়নি। আমি তখন মাএ কথা বলতে শিখেছি, ছোট চাচির বাচ্চা খুব পছন্দ ছিল তাই ছোট চাচি আমাকে নিয়েই বেশি সময় কাটাতো, একদিন আমি চাচির কোলে খেলতে খেলতে আম্মু আম্মু বলে চাচির মুখে আদর করতে ছিলাম, আমার মুখে আম্মু ডাক শুনে চাচি এত খুশি হয়েছিল যে বলার বাইরে। তখন থেকে আমাকে ছোট চাচি আমাকে অনেক আদর করে। ছোট চাচি এখনো সবাই এটা গর্ব করে বলে এটা। ছোট চাচি সামনে কেউ আমাকে কিছু বলতে পারে না। আমাকে যদি আম্মু কিছু না নিয়ে দিত আমি সোজা ছোট চাচির কাছে হাজির, গিয়ে খালি একটু চোখের পানি ফেলতাম ব্যাস আর কাজ হয় যাইতো। ছোট থেকে রুহিও আমার উপর হিংসা করত যে ওর আম্মু ওর থেকে বেশি আমাকে আদর করে। রুহি ওর আম্মুকে আমার কথা উল্টাপাল্টা কিছু বললেই চাচি বলত, "আমার ছেলের নাম একটা বাজে কথাও বলবি না, ওকে আমি চিনি তোর আগে জিবরান আমারে মা ডাকছে"। এটা শুনতে শুনতে রুহি এখন বিরক্ত। ছোট চাচা একই রকম আমাকে অনেক আদর করে তবে চাচির মত না উনি আবার উনার মেয়ের সামনে বিড়াল। এতো গেল ছোট চাচা-চাচি। এবার আসি সেজু চাচা চাচির কথায়, সেজু চাচাদের প্রখম দু বাচ্চা মানে রিয়া আপু আর দিয়া দুজনই মেয়ে সে হিসাবে ছেলেদের প্রতি উনাদের একটু টান ছিল সে হিসাবে আমাকে ছোট থেকে অনেক আদর করতো উনারা একদম নিজের ছেলের মত। যদিও আমাদের বংশে তখনো ছেলে হিসাবে আমি ছাড়াও ভাই আর রাকিব ভাইয়াও ছিল তবু আমাকেই বেশি আদর করত কারন একে তো আমি ছিলাম ছোট তার উপর আমার স্বভাব ছিল একটু অন্য রকম ওই যে বলে না যার কাছে যায় তার। আমি ছোট থেকে এমন ছিলাম । যার কারণে সবাই আমাকে অনেক আদর করতো। সেই সুবাদে আমি অবশ্য অনেক সুবিধা পেতাম। যেমন ধরেন আমি কোনো দুষ্টমির জন্য আম্মু আমাকে মারতে আসলে চাচিদের জন্য মারতে পারতো না। রিশাদের জন্মের পরও ওই আদর কমেনি এতটুকুও। যাই হোক গল্পে আসা যাক,
গত বছরে শেষ দিকে সারাদেশে তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে, আমার তখন সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল চলছিল। প্রথম পরিক্ষা দিয়ে আমি একা ফির ছিলাম বাসে করে, বাস থেকে নামার সময় হুড়াহুড়ি করতে গিয়ে পা পিছলে বাস থামার আগে আমি নিচে পড়ে যায়। মাথায় একটু আঘাত লাগে তবে রক্ত বের হয়নি হাত পা ছিলে গেছে অনেক জায়গায়। আমি পাশেই একটা পরিচিত ফার্মেসিতে গিয়ে দেখি বা কাধের উপরে শার্ট চিরে ভেতরেও ছিলে গেছে। হঠাৎ সেখানে আমি অজ্ঞান হয়ে যায়। ওরা আমার মুখে পানি দিয়ে আমার জ্ঞান ফেরায় পরে আমার ছোট চাচাকে খবর দেয়। চাচা আমাকে একটা ডাক্তার দেখায়। ডাক্তার দেখে কিছু ওষুধ লিখে দেয় বলে আঘাত ততো ঘোরতোর নই। চাচা আমাকে বকা দিতে দিতে বাড়ি নিয়ে যায়। বাড়িতে আসি পড়লাম আরেক বিপদে সবাই তো কান্নাকাটি করি শেষ আর বকা দিতে ছিল আমাকে। দিয়া আর রুহি তো আমাকে জড়ায় ধরে সে কি কান্না।
আমাকে এমন ভাবে দুটা জড়ায় ধরছে যে আমার তো দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম পরে অনেক কষ্টে ছাড়ালাম। ছাড়ছে ঠিকি কিন্তু আমার আসে পাশে ঘুর ঘুর করছিল। আমি ওষুধ খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। রাতে হঠাৎ আমার জ্বর উঠলো একদম একশ চার ডিগ্রী, রাত প্রায় তখন একটা। বাড়িতে আবার কান্না কাটি শুরু হয়ে গেল। চাচু ডাক্তার কে ফোন দিয়ে আমাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ার অনেকক্ষন পরও যখন জ্বর কমলো না ডাক্তার আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলল। রাত দুটায় আব্বু-চাচারা আমাকে হাসপাতলে নিয়ে গেল। ওখানে আমার অনেক টেস্ট করানো হলো শেষে রিপোর্টে দেখা গেলো মোর ডেঙ্গু পসিটিভ সাথে সাথে আমাকে ভর্তি করানো হলো, আমাকে একটা কেবিনে নিয়ে হাতে স্যালাইন লাগানো হলো। সেদিন রাতে কোনো ভাবে কেটে গেল। পরদিন খুব সকালে রাকিব ভাইয়ার সাথে দিয়া আর রুহি হাসপাতালে হাজির। দেখে মনে হলো সারা রাত ঘুমাই নি চোখে গুলো লাল হয়ে আছে দু-জনের মনে হয় সারা রাত কান্না করছে। এখনো কান্না করছিল এসেই আমাকে জড়ায় ধরলো । আমি বললাম, চোখের পানিতে তো মনে হয় তোরা আমারে ডুবাই ফেলবি।
.
চলবে...
KAMU SEDANG MEMBACA
জোড়া বিবাহ
Romansaএকই বিয়ের আসরে আকস্মিক ভাবে এক বরের সাথে দুই বধুর তিন পরিবারও অনুমতি নিয়ে বিবাহ হওয়ার কাহিনি নিয়ে লিখা। এটা আমার লিখা প্রথম বড় গল্প। আশা করি পড়ে মজা পাবেন। দয়া করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।