৩১

303 3 0
                                    

জুলিয়েটের সাথে অনেকদিন পর স্কাইপেতে কথা বলে একটা ঘোরে চলে আসলাম। আসলে জুলিয়েট এরকম। একদম আনপ্রেডিক্টেবল। ও কখন কী করে সেটা বুঝা মুস্কিল। মাঝে আমার সাথে অনেকদিন স্কাইপেতে সেক্স চ্যাট করল, তারপর হঠাত সব বন্ধ। কোন কথা নাই। জুলিয়েট কে কিছু জিজ্ঞেস করাও কঠিন ওর মেজাজের জন্য। আবার গতরাতে ও যে আবার এভাবে সাড়া দিবে সেটাও ঘটার আগে বোঝার কোন উপায় ছিল না। এদিকে আবার মিড টার্ম পরীক্ষা চলে আসল। সামনের সাপ্তাহ পুরোটাই পরীক্ষা। সবাই ব্যস্ত হয়ে পরল। চারিদিকে নোট আদান প্রদান আর ফটোকপির ছড়াছড়ি। পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত সবাই। এই সেমিস্টারে পড়াশুনা ঠিকমত করা হয় নায়। এর মধ্যে মিডটার্ম এসে গেছে। বিশেষ করে স্ট্যাটের কোর্সটার অবস্থা খারাপ। কিছুই পড়া হয় নায়। কী করা যায় ভাবছি। স্ট্যাট শেষ পরীক্ষা। এর আগে দুই দিন বন্ধ। এর মাঝে সব কাভার করতে হবে। অনেক কনসেপ্ট একদম নতুন। তাই এক মিডটার্ম শেষে বাকিদের সাথে আলাপ পাড়লাম।
মিলি বলল ও ওর মামা বাসা যাবে মিরপুর। আজকে কালকে থাকবে। আমি বললাম পড়বি না। বলল ফটোকপি করা আছে, আর আগে কভার করা আছে মোটামুটি। ওর আম্মা আসতেছে। জুলিয়েটের অবশ্য উড়াধুড়া ব্যাপার। সে এগুলা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত না। অবশ্য ওর ম্যাথে মাথা ভাল তাই সমস্যাও নাই। ও একটা কাজ আছে বলে উঠে পড়ল। মিলিরও বাসের সময় হওয়ায় চলে গেল। এদিকে আমার, সুনীতির, ফারিয়ার অবস্থা খারাপ। সুনীতি সাধারণত ফাকিবাজি করে না। কিন্তু এইবার ওর বলে স্যারের ক্লাস খুব একটা ভাল লাগে নাই তাই অত মনযোগ দেয় নায়। এখন দেখতেছে অনেক কিছুতে সমস্যা। আর ফারিয়া পড়াশুনার ব্যাপারে একটু নার্ভাস গোছের। তাই আসলেই ও কম পাড়ে না বলতেছে কম পাড়ে বুঝা গেল না। যা বুঝলাম আমার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ফারিয়া কিছুক্ষণ মিলি আর জুলিয়েট কে গালাগাল পাড়ল। সুনীতি বলল ওদের কী দোষ? ফারিয়া বলল ওরা আর কিছুক্ষণ থাকতে পারত। অন্তত কয়েকটা জিনিস বুঝিয়ে দিয়ে যেত। আমি বললাম কিছুক্ষণ থাকলে হবে না আমাকে পুরা সিলেবাস বুঝান লাগবে। সুনীতি বলল পুরা সিলেবাস? আমি বললাম হ্যা। আমি বললাম একে তো স্যারের কথা এত ঘুম ঘুম যে ক্লাসে জেগে থাকা কঠিন আর এইবার কেন জানি এই সাবজেক্টটা কিছুই পড়ি নাই তেমন। এই অবস্থায় আসলে একমাত্র মুশকিলে আসান সাদিয়া। ও পরীক্ষা দিয়েই হলে চলে গেছে। ঠিক হল সাদিয়ার হলে চলে যাব। এরপর ওকে রাজি করাতে হবে আমাদের পড়াতে।
কিছু খাওয়া দাওয়া করে সাদিয়ার হলের সামনে যাওয়া হল। সাদিয়া প্রথমে ক্ষেপে গেল, বলল সারা সেমিস্টার তোরা কি করছিস? এখন পরীক্ষার সময় আমি কেমনে এত কিছু বোঝাবো তোদের। আমি আমার সব নোট আর বই দিই, তোরা ফটোকপি করে নে। আমি বললাম, বই আর নোট সব আছে। আমাদের সমস্যা কনসেপ্টে। স্ট্যাট পরীক্ষায় কনসেপ্ট না বুঝে খালি মুখস্ত করে গেলে ফেল নিশ্চিত। সাদিয়া গাইগুই করে তর্ক চালিয়ে গেলেও আমরা ছাড়লাম না। বিশেষ করে সুনীতির কথা সাদিয়া ফেলতে পারল না। আর আমি ফেলের দোহাই দিলাম। তখন শেষ পর্যন্ত ঠিক হল আগামীকাল সাদিয়া আমাদের কনসেপ্ট গুলা ক্লিয়ার করে দিবে। এরপর প্রশ্ন হল কই বসা যায়। লাইব্রেরিতে সমস্যা। বিসিএস পার্টির জন্য জায়গা সংকট আর বোঝাতে গেলে কথা বলতে হবে এতে অন্যরা বিরক্ত হবে। ডিপার্টমেন্টের সেমিনারেও কথা বললে লোকে বিরক্ত হয়। টিএসসির বারান্দায় এত গরমে বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন। শেষে ঠিক হল আমার বাসায় পড়া হবে। দশটা থেকে বিকাল পাচটার মধ্যে যা বোঝার বুঝে নিতে হবে। আর সাদিয়া সবাই কে কাজ দিয়ে দিল। বলল আজকে পুরা সিলেবাস ঘেটে কার কোন খানে সমস্যা বের করে নিতে হবে। আর দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমি বললাম চিন্তা নিস না, ফারিয়া খাওয়ার ব্যবস্থা করবে। ফারিয়া ক্ষেপে বলল খালি আমার টাকা খসানোর চিন্তা। শেষে নানা হাসা হাসি আর তর্ক শেষে ঠিক হল সবাই মিলে চাদা তুলে খাওয়া হবে তবে সাদিয়া বাদ। ওর কাজের বিনিমনে খাদ্য। আমাদের পড়ানোর বিনিময়ে দুপুরের খাবার জুটবে সাদিয়ার। এই নিয়ে আরেক দফা হাসাহাসি আমাদের।
সাদিয়া হলে ঢুকে যাবার পর জিজ্ঞেস করলাম কে কোথায় যাবে? দুই জনেই বাসায় যাবে। আমি কি করা যায় ভাবছিলাম। মাঝখানে দুই দিন বন্ধ তাই বুয়েটে গিয়ে একটু আড্ডা দিয়ে আসব কিনা ভাবছিলাম। তাই বললাম যাই বুয়েটে যাই একটু আড্ডা দিয়ে আসি। এটা শুনে ফারিয়া আর সুনীতি দুই জনেই না না করে উঠল। বলল এমনিতেই তুই কিছু পড়িস নাই স্ট্যাটে এরপর কালকে সাদিয়া কালকে পড়াতে এসে যদি টের পায় তুই আজকে কিছুই পড়ার চেষ্টা করিস নাই তাহলে ও ক্ষেপে আর পড়াবেই না। ওদের যুক্তির কাছে হার মানতেই হল। বললাম ঠিক আছে, আজকে আর আড্ডা না বাসায় ফিরে যাই। সাদিয়ার হলে নিউ মার্কেট পেরিয়ে বিডিয়ার গেটের কাছে। ফারিয়া আর সুনীতি দুই জনেই ধানমন্ডি যাবে। তাই এখান থেকে রিক্সা খুজতে থাকল। তখন ছয়টা বাজে, অফিস ছুটির পর রিক্সাদের এই সময় বিশাল দাম। সহজে কোন রিক্সাওয়ালা কোথাও যেতে চায় না। তাই আমি আজিজের দিকে না ওরা ধানমন্ডির দিকে রিক্সা কোনটাই পাচ্ছিলাম। শেষমেষ একটা রিক্সা পাওয়া গেল ধানমন্ডির দিকে। সুনীতি বলল চল আমাদের সাথে, সায়েন্স ল্যবের মোড়ে নেমে যাস। ওখান থেকে আজিজ অল্প একটু রাস্তা হেটে চলে যাবি। আমিও ভাবলাম ছোট একটা আড্ডা দেওয়া যাবে রিক্সায় যেতে যেতে।
রিক্সায় উঠার আগে একদফা তর্ক, তিনজনে রিক্সা শেয়ার করলে যা হয়। কে উপরে উঠবে? উপরে উঠা বসা এমনিতেই সহজ না, সারাক্ষণ ব্যালান্স ঠিক রাখতে হয়। তারপর হলের সামনে থেকে ধানমন্ডি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত রাস্তার অনেকখানি খানাখন্দ আছে। এর ফলে রিক্সার ঝাকুনি বাড়ে, ব্যালেন্স রাখা কঠিন হয়ে যায়। গত মাসেই ক্লাসের সজিব এমন তিনজন মিলে রিক্সায় উঠেছিল পরে পড়ে গিয়ে হাত হাড্ডি ডিজলোকেটেড হল। তাই কেউ রিক্সার উপরে বসতে চাইছিল না। ফারিয়া, আমি আর সুনিতি সবাই সবাই কে ঠেলছিলাম। এর মধ্যে রিক্সাওয়ালা মামা সমাধান দিল। বলল, মামা আপনে পোলা মানুষ হইয়া দুইটা মাইয়ার কথা মাটিত ফেলবেন, উঠেন উপরে উঠেন। আমি সাবধানে টানুম নে। এরপর আর কথা থাকে না তাই উপরে উঠতে হল। এক পা সাইডে রিক্সার চাকার যে গার্ড আছে তার উপর আর আরেক পা ফারিয়া আর সুনিতির মাঝ দিয়ে রিক্সাওয়ালার সিটের পিছনে ঠেক দিলাম। ফারিয়ায় বসল ডানে, আমি উপরে বামে আর সুনিতি আমার নিচে।

বন্ধু (১৮+) - সাইমনWhere stories live. Discover now