তারপরের পরেরদিন আর বৃষ্টি হলো না। রুমি আর নিধির কলেজ আর আর্ট এক্সিবিশনের জন্য ছবি এঁকেই সময়গুলো কিভাবে যে পার হয়ে গেল টেরই পেল না কেউই। রুমি আবারো বেশ কয়েকটি ছবি এঁকেছে তার সেই শিল্পীর শিল্পকর্ম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। অন্যদিকে নিধিও বলতে গেলে সারাদিন শুধু ছবি আঁকার পিছনেই পরেছিল। এর ফলে অন্তত পক্ষে রুমির মাথা জ্বালিয়ে খেতে পারেনি সে। রুমির মনটা বেশ খুশিই ছিল। একদিকে আগেরবারের থেকেও বেশি উৎসাহ নিয়ে এঁকেছে কয়েকটি ছবি। সেইসাথে তার বারবার মনে হচ্ছে সেই ছেলেটি আবারো এক্সিবিশনে আসবে। হয়তো দেখা যাবে এবারো তার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে বেশ অনেক্ষণ ধরে। রুমি নিজেও এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি তার আঁকা ছবি গুলো কি আদৌও কোনো অর্থ বহন করে ? নতুন ছবিগুলো আঁকার সময় বেশ প্রফুল্ল মন নিয়েই এঁকেছে বিধায় ছবিগুলোর মধ্যে আনন্দময় অর্থই ফুটে ওঠাটা স্বাভাবিক।
---
রুমির মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। তবে তার মনে হচ্ছে সেই শিল্পীর শিল্পকর্ম গুলোর মধ্যে কেমন একটা যাদু আছে। বারবার সেগুলোর দিকে আকৃষ্ট করে। সেটাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই বললেই চলে। সেটা আসলে শিল্পের বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য, নাকি শিল্পের গভীরে অবস্থিত এমন কোনো মায়াময়ী জগত যা তাকে সেগুলোর দিকে আকৃষ্ট করছে !? শিল্পীর অস্তিত্ব নাকি তার শিল্পকর্মের মধ্যে। এটা নেহাতই মুখের কথা মাত্র। কিন্তু রুমির মনে হচ্ছে কথাটা আসলেই সত্য। হয়তো দেখা যাবে যেই শিল্পীর সাথে দেখা করার ইচ্ছে পোষণ করছে, সেই শিল্পীর আদৌও কোনো পার্থিব অস্তিত্ব নেই। তার বিচরণ ওই শিল্পকর্ম গুলোর মধ্যে। রুমির ইচ্ছে করে এমনি এক জগতে হারিয়ে যেতে। যেখানে কেউ আর তার খোঁজ করতে আসবে না।
---
---
কথায় আছে মরার উপর খাড়ার ঘা। কিংবা আরেকভাবে বলতে গেলে পরিশ্রমে জল ঢেলে দেওয়া। রুমির মেজাজ এবার একটু বেশিই গরম। আর কেনই বা হবে না !? বিষয়টা জল ঢেলে দেওয়ার মতোই। কেননা এক্সিবিশনের আগের দিন আবারো মুষলধারে বৃষ্টি। এমনভাবে যদি এক্সিবিশনের দিনেও বৃষ্টি হয়, তাহলে এই বৃষ্টির মধ্যে কেইবা আসবে এক্সিবিশনে !? স্বাভাবিকভাবেই কেউ বৃষ্টিতে ভিজে আসবে না এক্সিবিশন সেন্টারে। সেইসাথে শুরু হলো ঝড়। রুমি এক প্রকার নিশ্চিত এক্সিবিশন এবার হবে না। তাই এক প্রকার মনমরা হয়ে থাকলো সেদিন। কিন্তু তারপরের দিন আর মুষলধারে বৃষ্টি হলো না। দেখা গেল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পরছে। এমন সময়েও বা কে আসবে এক্সিবিশনে !? রুমির উপর আবারো দায়িত্ব পরল স্টোর রুমে রাখা আগেকার ছবি গুলো এনে পুনরায় এক্সিবিশন সেন্টারে রাখার। এবার আর রুমিকে একা একা ছবিগুলো আনতে হয়নি। তার সাথে নিধিও ছিল। দুজন পাতলা মানুষ এতো সব ছবি একসাথে এনে রাখতেও বেশ কষ্টকর। তবুও এতে কারোরই আপত্তি ছিল না। কেননা একজন শিল্পী হয়ে যদি শিল্পকে মর্যাদা না দেয়, তবে শিল্প কখনো শিল্পীর আয়ত্তে আসে না। বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও বেশ ঠান্ডা বাতাস বইছে। এক্সিবিশন সেন্টার কেবলই খোলা হলো।
YOU ARE READING
দি আর্টিস্ট
Mystery / Thriller(গল্পের চরিত্র, ঘটনা, স্থান, কাল, সময় প্রত্যেকটি বিষয় কাল্পনিক। গল্পের সাথে বাস্তবতাকে মেলানোর চেষ্টা করবেন না।) রুমি বেশ অনেক্ষণ ধরে ছেলেটিকে লক্ষ্য করছে। তার আর্ট কলেজের এক্সিবিশন সেন্টারে এখন তেমন কেউ নেই। বলতে গেলে অনেকেই চলে গেছে। কয়েকজন যদিও...