সকালে আমার ঘুম ভেঙে গেল। চোখ ঘষতে ঘষতে বিছানায় উঠে বসলাম। আমি বিছানায় বসে ভাবতে থাকলাম আমি গতকাল কী স্বপ্ন দেখেছি। অনেকক্ষণ বসে বসে ভাবার পরও আমার কিছুই মনে আসছে না তবে আমি নিশ্চিত আমি স্বপ্নে কিছু একটা অবশ্যই দেখেছি আর আজ ঠিক সেইটাই হবে। ঠিক তাই হলো আজ ঝড় হবে এটা আমার মনে ছিল না কিন্তু আমি জানার মতো করে সারা,প্রীতি, নুবাকে বলে দিলাম। ওরা আকাশের এমন স্বাভাবিক অবস্থা দেখে আমাকে বিশ্বাস করলো না প্রথমে। পরবর্তীতে ঝড় হওয়ায় তারা বিশ্বাস করে নেয়।
সারা : তুই কী রাতে ঝড়ের স্বপ্ন দেখেছিলি?
নাশিতা : হ্যাঁ.... তাই তো মনে হয়।
নুবা : মনে হয় মানে? তুই শিওর না?
নাশিতা : আমি সেইটা বলি নি।
প্রীতি : ভাই তোরা কী পাগল?.. এমন কখনো হয় শুনেছিস?.
সারা ও নুবা : না...
প্রীতি : তাহলে কেন এইসব বিশ্বাস করতে চাস?..
নাশিতা : আমি মিথ্যা বলছি না।
প্রীতি : জানি তুই মিথ্যা বলছিস না। কিন্তু তুই যেটা ভাবছিস সেটাও সত্য নয়।
আমি আর প্রীতির সাথে কথা বাড়ালাম না। আমি জানি তাকে কিছু বললেও সে নিজ মতামতের উপরই অটুট থাকবে। তাহলে শুধু শুধুই সময় নষ্ট করার কোনোই মানে হয় না।
আমি প্রতিদিনই স্বপ্ন মনে রাখার চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু কিছুতেই আমার স্বপ্ন মনে আসে না। এইভাবে বেশ কয়েকদিন চলতে থাকে। আমি আমার পরিবারের কাছ থেকে এই বিষয় গোপন করি। আমাকে গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতে দেখে আম্মু আমার কাছে আসে।
আম্মু : কিরে নাশিতা, তুই এত কি চিন্তা করছিস? কয়দিন ধরে দেখছি তুই কি যেন ভেবেই চলেছিস। সব ঠিক আছে তো?
নাশিতা : না আম্মু তেমন কিছু না এমনি।
আম্মু : তাহলে কি তুই স্কুলে যাবি না? বসে আছিস যে?
নাশিতা : যাচ্ছি আম্মু।
আমি রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হব তখনই ডেইজি আমার কাছে আসল। আর তার শরীর আমার পায়ের সাথে ঘষতে লাগলো।
নাশিতা : কি হয়েছে?
মিয়াও
নাশিতা : আমি এখন স্কুলে যাব আম্মু কে গিয়ে বল তোকে হাঁটতে নিয়ে যেতে।
মিয়াও
নাশিতা : আহা যা না।
আমি দরজা লাগিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাই।
তখন চলছে ফিজিক্স ক্লাস। আমার কোনো মনোযোগ নেই৷ ফিজিক্স এ আমি রীতিমতোই কাঁচা। আমি টিচারের কথায় মনোযোগ না দিয়ে কী স্বপ্ন দেখেছি তাই নিয়ে ভাবছি। হঠাৎই আমার মনে পরে আমি স্বপ্নে কী দেখেছিলাম। আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠি। তখন টিচারসহ সবাই ই অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
/ কি হয়েছে নাশিতা?
নাশিতা : না মানে... কিছু না।
/ অনেকক্ষণ যাবৎ ই দেখছি কি যেন ভাবছো। বাচ্চা কাচ্চা আর সংসারের চিন্তা করছো তাইতো?
নাশিতা : না। আসলে ব্যাপার তা নয়।
/ আমি কিছু শুনতে চাই না। ক্লাসে মনোযোগ না থাকলে এখনি বেরিয়ে যাও।
আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দিল। আমি যদিও খুশি ছিলাম কারণ এমনিতেও আমার ফিজিক্স ভালো লাগে না। ক্লাস শেষে সারা, নুবা, প্রীতি আমার কাছে আসলো।
নাশিতা : আমি পেরেছি।
সারা : কী পেরেছিস?
নাশিতা : আমার স্বপ্ন আমার মনে আছে।
নুবা : তা কি দেখলি?
প্রীতি খুবই বিরক্তিসূচক ভাবে আমার দিকে তাকালো।
প্রীতি : তোকে না বললাম এইসব বাদ দে। আজকে নিশ্চয়ই তুই স্বপ্নের কথা ভাবছিলি। কেন এইসব করছিস এইসবের কোনো মানে হয়?
নাশিতা : আমার উপর বিশ্বাস রাখ।
নুবা : তো বল কি স্বপ্ন দেখলি।
নাশিতা : আজকে জাহিদ আর তুই মারামারি করবি
সারা : ধুর এটা জীবনেও সম্ভব না।
নাশিতা : তুই দেখ।
সেদিন ঠিকই জাহিদ সারার সাথে কথা বলেছিল। শুধু কথা বলেনি ওরা মারামারি ও করেছিল। আমার বেস্টফ্রেন্ড মুবিন। আমি ওকে এইসব খুলে বলি। ও রীতিমতো এমনভাবে তাকিয়েছিল যেন ভূত দেখছে। ওতো আমাকে পাগল ভাবছিল। পরে ও একদিন আমাকে বিশ্বাস করে। আরো কিছু ঘটনার পর নুবা আর প্রীতিও আমাকে বিশ্বাস করে....