শেষ স্মৃতিচারণ

18 1 0
                                    

ছোটবেলা থেকেই চুপচাপ স্বভাবের ছিলাম। বাবা মায়ের কড়া শাসনে বড় হয়েছি। কখনো আগ বাড়িয়ে কোনো ছেলের সাথে কথা বলার সাহস পায়নি। তাই বলে মনকে তো আটকে রাখা যায় না। আমি সুন্দরী ছিলাম কিনা তা বলতে পারবো না। প্রত্যেক মেয়েদের কাছে নিজের সৌন্দর্য নিয়ে আলাদা মতামত থাকে। সব মেয়েরাই নিজেদের সুন্দরী ভাবে। সাধারণত দেখা যায় বাবা মা দুজনেই যখন আর্থিক উপার্জনে ব্যস্ত তখন মেয়ের দিকে লক্ষ্য রাখবে কার সাধ্যি। আমার বেলায় তা ছিল পুরো উল্টো। ছোটবেলা যেমনই কাটুক সেটা যে অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক ছিল তা আমি হলফ করে বলতেই পারি।

একবার স্কুলের এক ঘটনা। তখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি। গণিত বিষয়টি বরাবরই একটু কঠিন ঠেকেছে আমার কাছে। পড়ালেখায় খারাপ ছিলাম না। তবে অংকের হিসাব মিলাতে বেশ সমস্যায় পড়তাম। বুঝতাম না অংকের সমস্যা গুলোতে সবাই এতগুলো ফল কিনে কেন। জ্যামিতি আঁকতে পছন্দ করতাম। মা আমাকে একটা নতুন জ্যামিতি বক্স কিনে দিয়েছিল। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার আগে ভালো করে পড়াশোনা চালাতে পরীক্ষার যাবতীয় সামগ্রী কিনে দেওয়া স্বাভাবিক। এতে বাচ্চারা পড়াশোনায় মনযোগী হবে এটাই মনে করেন বাবা মায়েরা।

তবে যায় হোক জ্যামিতি বক্সটি আমার ভীষণ পছন্দ হলো। সেদিন স্কুলে করে নিয়ে গিয়েছিলাম জ্যামিতি বক্স। বান্ধবীদের সানন্দের সাথে দেখিয়েছিলাম জ্যামিতি বক্সটি। সবাই তখন সেই জ্যামিতি বক্স দেখে একেবারে কৌতুহলী হয়ে উঠলো। হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো একেরপর এক। একজন তো পেন্সিলটা ভেঙেই দিল নাড়তে গিয়ে। ভীষণ কান্না পাচ্ছিল। বাসায় এসে সেদিন প্রচুর কেঁদে ছিলাম। এরপরের বার আরেক ঘটনা। স্কুলের কবিতা লেখার প্রতিযোগিতায় নাম লেখায়। পড়ালেখা বাদ দিয়ে তখন সারাদিন কবিতা লেখা নিয়ে পরে থাকলাম। মায়ের তো খুব বকুনি। পড়াশোনা লাঠে উঠিয়ে মেয়ে এখন আজগুবি কবিতা লিখতে বসেছে। বাবা অবশ্য সায় দিলেন। বললেন, এই তো বয়স এই ধরনের সৃজনশীল কাজ করবার।

কবিতা লেখা শেষ, জমা দেওয়ার পালাও শেষ। আমি কখনো ভাবিনি আমি কোনোদিন জিততে পারব। কিন্তু যখন প্রথম পুরষ্কার হাতে উঠে এলো তখন আমার খুশির যেন সীমা ছিল না। পুরষ্কারের মধ্যে ছিল সুন্দর একটা কলম। একটা কলমে কতগুলো সুইচ টিপে নানা ধরনের রং বের হয়। আমার খুব পছন্দের একটা জিনিস হয়ে উঠলো সেটা। প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতাম। বান্ধবীরা বেশ পছন্দ করল। একদিন টিফিন পিরিয়ডে বাইরে খেলাধুলা করে যখন ক্লাসে ফিরলাম তখন আমার ব্যাগে সেই কলম নেই। আমার কান্না আর দেখে কে। আমার এতো সুন্দর কলম খানা হারিয়ে গেল। আমার কান্না এবার থামার নাম নেই। আমি মাকে বললাম আমার কলমটা যে করে হোক এনে দিতে। মা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিল। আমার গাল ফুলে তখন লাল। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে গোমড়া হয়ে বসলাম।

নিঃসঙ্গ ছায়ার গল্পগুলিDonde viven las historias. Descúbrelo ahora