"নভোচারী"

5 0 0
                                    

গল্প: নভোচারী।
লেখা: তাবিয়া তামান্না।

১.
'আমাদের জোকার মনে হচ্ছে বেয়াদপ মেয়ে?' এভাবেই কথাগুলো বললেন মহাকাশ অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহী।

দিলারা দিলেক চুপ করে শুনলো শুধু৷ তার পর বলল-'নো নেভার স্যার। দুঃখিত! আমি বুঝাতে পারিনি'

-'গেট আউট!'বলে উঠলেন তিনি। বাকিরা কিছু বলল না। তার মানে বাকিদেরও একই মত।

দিলারা অসহায় ভাবে সবার দিকে একে একে তাকিয়ে নিলো। আস্তে করে কামরা থেকে বেরিয়ে এলো।

এই মিলে ৩ বার। কিন্তু প্রতিবারই ব্যার্থ সে। কি করবে সে? নভোচারী হবার স্বপ্ন যে আর পুরণ হবার নয়। এখন..? হতাশায় ওর চোখ গেলো তারা খচিত অন্ধকার আকাশের দিকে। হঠাৎ দেখল শূন্য থেকে নামতে থাকা কালো অদ্ভুত ছায়ামূর্তির দিকে। যেনো ওকে ডাকছে। দিলারার অনিয়ন্ত্রিত পা দুটি এগিয়ে চলল.. সম্মোহীতের মত। এই আহবান গ্রাহ্য করার শক্তি ওর নেই...

২.
রান্নাঘরে পেয়াজ রসুন বাটায় ব্যাস্ত দিলারা। ওর স্বামি ওশান অফিস থেকে ফিরে এসেছে মাত্র। ঘেমে নেয়ে একাকার। দিলারা চট করে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত করে এনে দিলো।

ওশানের আবার এই জিনিস টা খুব পছন্দ। দিলারা সব সময় যেন ওর মনের কথাটা বুঝেই চলে। মাঝে মাঝে ওর দিলারাকে মাইন্ড হ্যাকার বলে মনে হয়। কখন কি লাগবে সব কিভাবে যেন আগেই টের পেয়ে যায় মেয়েটা।

দিলারা মুচকি হাসে। ওশানের ক্লান্ত চোখ দুটো দেখলে ওর কেমন মায়া হয়। এই মায়ায় আটকে থাকা যেন ওর রাজকপাল। ওশানের চোখ দুটো যেন সম্মোহনী স্ফটিক। পাগল করে দেয় দিলারাকে। চোখের ভাষার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিতে ইচ্ছা করে।

৩.
রাতের খাবার খেয়ে দুজনেই টিভির সামনে বসেছে। হঠাৎ হেডলাইন দেখল ওশান। "কালো হুডি পরা দুটি অদ্ভুত ছায়ার দেখা মিলছে শহরজুড়ে। ভুতুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে পকেটমার থেকে শুরু করে স্মাগলার দের মাঝেও। গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে এরা নাকি ভীনদেশী প্রাণী। ফুটপাতের ঘুমন্ত লোকেদের কেউ কেউ দাবি করেছে যে ওরা ওদের পাশে টাকা পয়শা রেখে দিয়ে চলে গেছে। আবার কেউ ওদের চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে যাবার বা আকাশে উড়ে তারাদের মাঝে হারিয়ে যাবার দাবি করেছে। চেহারার উপরে কালো মাস্ক পড়ে থাকায় কেউ চেহারা দেখতে পায়না"

হেডলাইন পড়ে ওশানের ভ্রু কুঁচকে যায়। দিলারা ওশানের চোখে দুশ্চিন্তার স্পষ্ট রেখা দেখতে পায়।

৪.
রাত পৌনে একটা বাজে। দিলারা লং হুডি জ্যাকেটটা গায়ে চড়িয়ে বেলকনি থেকে এক লাফে নেমে আসে। বুট পায়ে হাটা শুরু করে। ওর গন্তব্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটাল। জ্যাকেটের পকেটে মোটা মোটা কয়েক বাণ্ডিল টাকা।

হসপিটালের মেঝেতে ঘুমন্ত রোগিদের পাশে পরিমাণ মত নোট রেখে দেয়। যেনো মাইন্ড হ্যাকার। কার কেমন প্রয়োজন সব পড়ে নিচ্ছে। কাজ শেষে বেরোবার জন্য পা বাড়ায়। ওমনি পড়ে যায় একটা নার্সের সামনে...

দিলারা ঘাবড়ে যায়। এই বুঝি ধরা পড়ে গেলো। নার্স চিৎকার করতে যাবে ওমনি দিলারার পেছনে দৃষ্টি গেল তার। একই রকম আরেকটা কালো হুডি পরা লম্বাটে ছায়া মূর্তি বেরিয়ে আসছে। সেই মূর্তিরই শক্তিশালী দৃষ্টিতে বন্দি হয়ে গেলো মহিলাটা। সেই চোখের কঠোর নির্দেশ অমান্য করার মত ক্ষমতা নেই নার্সের। ধীরে ধীরে হেটে চলল। যেদিক দিয়ে এসেছিল সেদিকেই। নার্সের চোখে যেন রাজ্যের ঘুম!

দিলারা মুচকি হেসে পেছনে ফিরতে যায়। তখনি পেছন থেকে একটা শক্ত হাত ওর কোমল দেহ পেচিয়ে ধরে। ঘাড়ের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে "তাকিয়ো না। সেদিনের মত আবার বন্দি হয়ে যাবে ওশানের চোখে..." দিলারা জানে এই লোকটা ওর শেষ আশ্রয়..সমস্ত ভরশার কেন্দ্রবিন্দু!

পুনশ্চঃ রাত একটার পর বারান্দার ফ্লোরে শুয়ে থাকা ছেলেটা দেখতে পায় হসপিটালের গ্রীল ভেদ করে হুডি পরা দুটো অদ্ভুত ছায়ামূর্তি অনেকটা আকাশে উড়ে গেলো। ছেলেটা ভয়ে আরো জড়সড় হয়ে শুতে গিয়ে খসখস শব্দ অনুভব করে শিয়রের কাছে। দেখতে পায় এক হাজার টাকার চকচকে কয়েকটা নোট। গুনে দেখে যা আছে তাতে ওর মায়ের থাইরয়েডের অপারেশন হয়ে যাবে...

শেষ........!!!

"ছোট গল্প সমগ্র"حيث تعيش القصص. اكتشف الآن