#২২

430 18 0
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_২২

রাতের অন্ধকারে নির্জন রাস্তা ধরে হেটে চলছে ইশতিয়াক। গরমের উত্তাপে ঘেমে উঠেছে তার পুরো শরীর। মনের ভেতরে চলছে নানান জল্পনাকল্পনা। পায়ে একদম শক্তি পাচ্ছে না। ধীরেধীরে তা অবশ হয়ে আসছে.. দ্যুতি তাকে মিথ্যা বলেনি। তবে লুকিয়েছে। লুকিয়েছে শব্দটিও সঠিক নয়.. দ্যুতির কাছে জানতে চাইলে অবশ্যই দ্যুতি তাকে সবটা খুলে বলতো। দ্যুতির স্বভাবের সাথে মিথ্যাবাদী শব্দটি একদম যায়না। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইশতিয়াক। রাত অনেক হয়ে এসেছে। দ্রুত তার বাড়ি ফেরা উচিৎ। তবে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না ওই বাড়িতে। মুখোমুখি হতে ইচ্ছে হচ্ছে না দ্যুতির।

ঠিক ভুল বিবেচনা প্রত্যেকের নজরের উপর নির্ভর করে। হয়তো দ্যুতি ভুল তবে পরিস্থিতি তার প্রতিকূলে ছিল! একজন নারী হিসেবে নিজের ইচ্ছেতে পুরুষদের কাছে শরীর বিলিয়ে বেড়ানোর মতো মেয়ে সে নয়.. দ্যুতির চরিত্র জানতে, বুঝতে তার কাছে একটিদিনই যথেষ্ট ছিল!

তার নিজের উপরে তাথৈকে নিয়ে যেমন মিথ্যা অভিযোগ উঠেছে, হতে পারে দ্যুতির উপর দেয়া অভিযোগ গুলোও মিথ্যা। তাথৈ যেদিন তাকে নিয়ে সিনক্রিয়েট করতে চাইছিল, সেদিনই তার বোঝা উচিৎ ছিল মেয়েটি মারাত্মক রকমের ঝামেলা বাঁধাতে পারে। তবে দ্যুতির সাথে দেখা করে তার মনে আজেবাজে কথা ঢুকিয়ে দেয়ার মতো সাহস কিভাবে পেল মেয়েটি? সে চুপচাপ থাকে বলে? ছাত্রীদের সম্মানের চোখে দেখে বলে? আরও একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল ইশতিয়াকের বুকচিরে.. হাত ঘড়িতে সময় দেখে গেট খুলে ভেতরে ঢুকলো সে। মনের ভেতরের অস্থিরতা তার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন হয়ে আসছে..

-শেষে কী বলে জানিস? বলে আমি বাবার কাছে যাবো.. কী পরিমাণের বেলজ্জা বেহায়া হলে এই কথা বলতে পারে তা একবার ভাব।
ইশতিয়াককে পাশে বসিয়ে লিলি বেগম সন্ধ্যায় ঘটা ঘটনার সঙ্গে আরও খানিকটা যুক্ত করতেই পাশ থেকে শিপু চৌধুরী বললেন,
-শেষে যখন লিলি আপা বললো, এই ধুরবাজ মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দাও তখন তেজ দেখিয়ে বের হয়ে গেল সে!
-খোঁজখবর নিয়ে বিয়ে করবি না? আজ এক লোক এসেছিল, কাল আরেকজন আসবে। এগুলো ওদের ব্যবসা। শরীর বেঁচেই খায় এরা। একবার হয়েছিলো কী.. তোর ফুপা রাতে বের হয়েছিল বাজার করতে। ঈদের আগের রাতের কথা..
বিরক্ত হলো ইশরাক। ভ্রু কুঁচকে বললো,
-এখন ওসব রাখো। ভাবিকে নিয়ে কথা হচ্ছিলো ওতেই থাকো। আমার মনে হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে.. ভাবি ওমন মেয়ে না!
দরাজ গলায় শিপু চৌধুরী বললেন,
-তুই কী জানিস? কখনো ওর সাথে বসে দুটো কথা বলেছিস যে ও কেমন না কেমন তা তুই জেনে উদ্ধার করেছিস?
-ভাবির সাথে কথা না হলেও ভাবির ফ্যামিলির সাথে হয়েছে.. যথেষ্ট ভদ্র ফ্যামিলির মেয়ে ভাবি।
-ভদ্র ফ্যামিলি হলে এসব লুকিয়ে তোর ভাইয়ের কাঁধে ঝুলিয়ে কেনো দিয়েছে চরিত্রহীন ওই মেয়েকে?
-ওসব ভাষা কেনো ইউজ করছো মা? তাছাড়া হাসানুর রহমান নামে যে লোকটি এসেছিল, ও তোমাদের কোনো প্রমাণ দেখিয়েছে? নাকি তার মুখের কথাতেই বিশ্বাস করে তোমরা ভাবিকে চরিত্রহীনের ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছো?
-তো বিশ্বাস করবো না? মেয়েটাকে বারবার তোর আব্বা জিজ্ঞেস করছিলো.. চেনে কিনা বা লোকটি সত্য বলছে কিনা! বারবার জিজ্ঞেস করছিলো.. তবে ওই ধুরবাজ মেয়ের মুখে কোনো কথা ছিল না। যদি মিথ্যাই হতো.. তাহলে কি চুপ করে থাকতো ও?
-তাই বলে বাড়ি থেকে বের করে দেবে? অপেক্ষা করতে। ভাইয়া আসলে তারপর কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেত! যাই করুক না কেনো উনি হাজার হলেও ভাইয়ার ওয়াইফ তো!
ইশরাকের কথায় খেঁকিয়ে উঠলেন লিলি বেগম।
-আমরা কি বের করেছি নাকি? নিজে থেকেই গেছে.. দেখ গিয়ে বাড়ি না ফিরে ওই হাসানের সাথেই কোথাও গেছে..
কথোপকথনের এই পর্যায়ে সোফা ছেড়ে উঠে পড়লো ইশতিয়াক। বুকের ভেতরটা তার ব্যথায় চিন চিন করছে। চোখজোড়া জ্বলছে.. হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে ভালোবেসে ফেলেছে সে মেয়েটিকে। ক্ষণিকের জন্য তাকে ভুল মনে হলেও মন বারেবারে তাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে হয়তো দ্যুতির ছিল কোনো প্রতিবন্ধকতা। ঘরে ঢুকে দরজা লক করে বিছানার দিকে এগুলো ইশতিয়াক। আজ দ্যুতি নেই.. না বিছানায় তার অস্তিত্ব রয়েছে আর না ব্যালকনিতে। শেষমেশ সবটা এভাবে এলো পরিবারের সামনে? এখন কিভাবে সামলাবে সে সবটা? তাছাড়া দ্যুতি.. সত্যিই বেরিয়ে গেলো বাড়ি ছেড়ে? তার উপর আস্থা রেখে সামান্য সময় অপেক্ষা করতে পারলো না? আর মুখই বা খুললো না কেনো সে? কেনো নিজের দিকটা সকলের সামনে রাখলো না? তবে কি দ্যুতি নিজের ইচ্ছেতেই তার শরীর সঁপে দিত মানুষ নামক কিছু অমানুষদের হাতে?

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now