#২০

470 15 0
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_২০

দুপুর হলো দিনের মধ্যভাগ। এসময়ে মানুষের ভেতর অলসতা চেপে ধরে। কেউ কেউ জ্বলন্ত চোখকে শীতল করতে আশ্রয় নেয় ঘুমের। এইসময় পার্লারে ভীড় কম থাকায় দ্যুতি চেয়ার নিয়ে বারান্দায় এসে বসে। বসেবসে ফাঁকা রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঝেমাঝে তার শান্ত দুটো চোখ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তবে মুহূর্তেই ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে আঁতকে উঠতে হয় তাকে। সেসময় সহস্রাব্দের নিষ্ঠুরতা তাকে ক্ষত বিক্ষত করে। অনেক সময় অস্থিরতা গ্রাস করে ফেলে.. পানি পিপাসা পায়। আজ এই অলস দুপুরে চোখজোড়ায় জ্বলণ ধরাতে বিছানায় এসে শরীর মেলে দিল দ্যুতি। ইশতিয়াক ভার্সিটিতে। তার ফুপুও এখনো এসে পৌঁছায়নি বাড়িতে। মহিলাটি কেমন হতে পারে? শান্তশিষ্ট না দজ্জাল প্রকৃতির? মনে তার চিত্র অংকন করতে করতে চোখজোড়া বুজলো দ্যুতি। তবে ইশতিয়াকের ফুপুর পরবর্তীতে বারবার তার চোখের পাতায় ভেসে উঠলো সারজিমের প্রতিচ্ছবি। সেসময় নির্জন সেই বাড়ি সারজিম ছেড়েছিল। হাসানের আনাগোনা যখন খুব বাড়তে শুরু করলো তখন সিদ্ধান্ত নিল এবাড়ি ছেড়ে দ্যুতিকে নিয়ে অন্যকোথাও উঠবে সে। এরই মাঝে এক দুপুরে ঘটলো ঘটনা.. এক কী দুটোর দিকে দলবল সহ হাসান এসে হানা দিল তাদের বাড়িতে। উপর থেকে তাদের চিৎকার শুনে নিচে নেমে গেল সারজিম। তবে ফিরে এল মাথা ফাটিয়ে। রক্ত আঁটকে রাখার চেষ্টায় মাথায় হাত চেপে সে দ্যুতির উদ্দেশ্যে বললো,
-দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নাও.. আমাদের খুব দ্রুত এখান থেকে বেরুতে হবে।
-কেনো?
-কেনো তুমি বুঝতে পারছোনা? ওই শুয়োরের বাচ্চা বড্ড বাড় বেড়েছে.. ডেটল কোথায় রেখেছো?
নড়লো না দ্যুতি। স্থির দৃষ্টিতে বিছানার চাদরের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আসক্ত হয়ে পড়েছে.. শুধুশুধু বাধা কেনো দিচ্ছো ওদের? তোমাকে ঠকিয়েছে বলে তুমিও ওদের ক্ষুধার্ত রাখতে চাইছো?
চোখেমুখে আগুনের ফুলকি নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো সারজিম।
-শালার আমি ডেটল চাইছি এটা তোর কানে ঢুকছে না? ডেটল দে...

পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত হলেই তারা বাড়ি ছাড়লো সন্ধ্যার দিকে। একটি সিএনজি বাড়ির সামনে এনেই দাঁড় করে রেখেছিল সারজিম। অল্প সময়ের মাঝে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র তুলে তাতে উঠে পড়লো দু'জনে। ঘন্টাখানেক সিএনজি চলার পর তা থামলো ছোটমোটো একটি বস্তির মাঝে। দ্যুতিকে দুই রুমের একটি টিনসেট বাড়িতে রেখে জিনিসপত্র নামালো সারজিম। তারপর ভাড়া মিটিয়ে একেএকে সেগুলো ঘরে রেখে ক্লান্ত সুরে বললো,
-বেড করবো এদিকটায়। আর কাপড়চোপড় আপাতত ব্যাগেই থাক.. নামানোর দরকার নেই। ওপাশে ব্যাগ ধরে রেখে দাও।
দ্যুতির দিকে চাইলো সারজিম। তবে তার দিকে থেকে কোনো সাঁড়া না পেয়ে সে আবারও বললো,
-কিছুদিন কষ্ট করে এখানে থাকতে পারবে না?
এবারও দ্যুতিকে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হতাশ হলো সে। ঘামে ভেজা শার্ট খুলে আরেকটি শার্ট পরতে পরতে বললো,
-গেটটা লাগিয়ে দাও। দেখি চাল ডাল কিছু নিয়ে আসি.. খিচুড়ি করে ফেলো।
মুখ খুললো দ্যুতি।
-আমি রান্না করতে পারবো না।
-কেনো? কী সমস্যা?
-পারবো না মানে পারবো না.. আমাকে এসব দায়িত্ব দিয়ে তুমি কী বোঝাতে চাইছো?
-তুমি আমার ওয়াইফ.. তোমাকে দায়িত্ব আলাদাভাবে দিতে কেনো হবে?
-ওয়াইফ? একটা বছর অন্যের শরীরের ঝাঁজ মেটাতে দিয়ে আজ মনে পড়লো আমি তোমার ওয়াইফ?
-দ্যুতি!
-চেঁচিয়ো না.. আমি শুধু রান্না নয় তোমার কোনো দায় দায়িত্বই পালন করবো না।
-তুমি পালন করবে না?
-করবো না.. কখনোই করবো না।
এগিয়ে এল সারজিম। দ্যুতির গালে কষিয়ে এক চড় বসিয়ে দিয়েই চেঁচিয়ে উঠলো সে।
-তুই করবি.. তুই সব করবি। তোকে করতে হবে।
-না করলে কী করবি আমায়? মারবি? মার..
-তুই রাঁধবি না?
-না না না..
গেট খুলে বেরিয়ে গেল সারজিম। ফিরলো রাত একটার দিকে হাতে দুটো পরোটা নিয়ে। শার্ট খুলে হাতমুখ ধুয়ে মেঝেতে বসে দ্যুতির উদ্দেশ্যে বললো,
-এসো.. খেয়ে নাও।
একটি চাদর পেতে শুয়েছিল দ্যুতি। সারজিমের ডাক কানে এলেও নড়লো না সে। চুপচাপ পড়ে রইলো সেখানে। ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া জিনিসটি আজকাল টানে না তাকে.. হয়তো বুকভর্তি কষ্ট নিয়ে থাকতে থাকতে মৃত্যু ঘটেছে তার ভেতরের প্রতিক্রিয়া নামক এক সত্ত্বার।

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Tempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang