#৫২

340 15 0
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৫২

-এতবার বার কল কেনো দিচ্ছো? খুব তো সেসময় তাকিয়েছিলে! যাও না এখন.. তাকেই কল করো।
-করবো তাকে কল? ভেবে বলছো তো?
-মানে? তুমি নাম্বারও নিয়ে এসেছো নাকি?
-এই ইশরাকের কারোর কাছে নাম্বার চাইতে হয়না। সবাই সেধে সেধে এসে নাম্বার দিয়ে যায়। কথা ক্লিয়ার নাকি ভেজাল আছে?
-কচু আছে.. শোনো না! আমার প্রচুর অস্বস্তি হচ্ছে। দুইটা মাস হলো পিরিয়ড হচ্ছে না। রিপোর্ট কি সত্যিই নেগেটিভ?
-হ্যাঁ.. মিথ্যা কেনো বলবো? আচ্ছা শোনো ভাইয়া এসেছে। আমি একটুপর কল দিচ্ছি।
ফোন রেখে উঠে বসলো ইশরাক।
ইশতিয়াক ঘরে ঢুকে একটি চেয়ার টেনে তাতে বসে বললো,
-কে? দীপা?
-হ্যাঁ..
-কবে থেকে এসব চলছে? সেদিন আমার সামনে কিছু কিছু হলো.. তবে মাথায় ঢুকলো না।
বালিশ উঠিয়ে কোলের মাঝে নিল ইশরাক। উৎসাহী কন্ঠে বললো,
-বেশি না.. তিনমাস। ওইতো... ও বললো। আমি বিভ্রান্ত করলাম। তারপর ও সামান্য ভাব নিল.. আমি আরেকটু বিভ্রান্ত করলাম। তারপর ও কেঁদে দিল.. আমার যেনো কী হয়ে গেল!
কপাল কুঁচকে ফেললো ইশতিয়াক।
-ওসব রাখ। কিন্তু তিনমাস? মাত্র তিনমাসের প্রেম?
-তিন মাস মাত্র হলো?
-খুব বেশি নাকি? এই.. তবে কি আমি যা ভাবছি সেটাই?
-তুমি কী ভাবছো?
-প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা কোনোভাবে মিথ্যে নয়তো?
-উহু..
সামান্য আশার আলো পেলেও ইশরাকের কথায় আবারও হতাশ হলো ইশতিয়াক। চোখমুখ কুঁচকে বললো,
-তিন মাসের প্রেমেই এসব?
-অসম্ভব কিছু? ভালোবাসার মতো ভালোবাসলে যেদিন প্রেম করবো তার পরের দিনই বাচ্চার বাপমা হওয়া কোনো ব্যপার না।
-আশ্চর্য! তোর সামান্য গিল্টি ফিল হচ্ছে না? তুই কি ভাবছিস তুই যা করেছিস তা খুব গর্বের কাজ?
-গর্বের হবে না কেনো? আমি বাবা হচ্ছি, দীপাকে মা বানিয়ে দিচ্ছি.. তোমাকে চাচা বানাচ্ছি। মা-বাবাকে দাদা-দাদি বানাচ্ছি। আর কী চাও তোমরা?
-আর বিয়ে? বিয়ে করেছিস?
-না.. বাবা-মাকে না জানিয়ে বিয়ে করলে নাকি পাপ হয়। সেই বিয়ে টেকে না.. এটা অবশ্য আমার কথা নয়। দীপার কথা!
-ও আচ্ছা.. বাবা মাকে না জানিয়ে বিয়ে করা পাপ? আর বিয়ে না করে একসাথে থেকে পেটে বাচ্চা আনা পাপ না?
বিরক্ত হলো ইশতিয়াক। তবে তা পাত্তা না দিয়ে ইশরাক বললো,
-আস্ক হার.. লাস্ট কিছু দিন হলো আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। তবে আমিও কি কম? বলেছি নো টেনশন ডু ফূর্তি। রেজাল্ট নেগেটিভ!
হতভম্ব হয়ে গেল ইশতিয়াক।
-মানে? দীপা জানে না?
-এখন জানাইনি। তবে সময় মতো জানাবো.. ওর যে ছিচকাঁদুনে স্বভাব! রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে শুনে এই ক'দিনে কেঁদেকেটে সাগর বানিয়ে ফেলতো। এমনিতেই আমাদের দেশে যে ঘনবসতি! তাতে সাগর মহাসাগর বানিয়ে মানুষকে গৃহহারা করতে চাইনা।
ধমকে উঠলো ইশতিয়াক।
-তোর মাথায় সমস্যা আছে ইশরাক.. ছোট মা ওদিকে কেঁদেকেটে অস্থির! দীপার সাথে তোর বিয়ে কখনোই দেবেন না তিনি.. তখন মেয়েটার কী হবে তা নিয়ে ভেবেছিস? এমনতেই ওদের পরিবার দ্যুতিকে নিয়ে টেনশনে আছে। এর ভেতর দীপার এসব কথা জানতে পারলে উনাদের কী অবস্থা হবে তা ভেবেছিস? তুই একটু ভেবে কাজ কেনো করিস না ইশরাক!
-যা করেছি চিন্তাভাবনা করেই করেছি.. আবেগের বসে কিছু করিনি। তাছাড়া মা কী ভাবছে না ভাবছে তা দিয়ে কী হবে? আমি দীপাকে নিয়ে কী ভাবছি সেটাই কি প্রধান হওয়া উচিৎ না?
সেই মুহূর্তেই ঘরে ঢুকলেন শিপু চৌধুরী এবং ইকবাল চৌধুরী। বিছানার এক কোণায় বসে হালকা কেশে ইকবাল চৌধুরী বললেন,
-যা করেছো তা পাঁচকান হবার আগেই মেয়েটাকে বিয়ে করে নিয়ে এসো..
ইশতিয়াকের দিকে একবার তাকালো ইশরাক। তারপর গম্ভীরমুখে বললো,
-হবে না.. তবে ব্যাপারটা আমাকে হ্যান্ডেল করতে দেবে। এতে তোমার বা ভাইয়ার হেল্প আমি চাইছি না।
-ঠিকাছে.. যা করার করো। তবে এই শেষ। এসমস্ত বাজে কাজ আমি আর মেনে নিব না। একজনের বউ উধাও.. সে তার বিরহে এক পা কবরে দিয়ে বসে আছে। বিয়ে করবে না মানে করবেই না। আরেকজন তো বিয়ের আগেই..
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন শিপু চৌধুরী।
-ওকে কেনো বলছো? ওই মেয়েই দেখো গিয়ে আমার ছেলেটার মাথা খেয়েছে।
-হ্যাঁ.. তোমার ছেলেতো দুগ্ধপোষ্য শিশু!
-তুমি চুপ করো। যাও ঘরে যাও।
স্ত্রীর ধমক খেয়ে ইকবাল চৌধুরী নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতেই ইশরাকের দিকে তাকালেন শিপু চৌধুরী।
-এটা মানলাম.. মানলাম এটা! তবে আমার বংশের প্রদীপের নাক যদি মেয়েটার মতো বোচা হয় তখন খুব করে প্রেমের সাধ মেটাবো আমি। কী? ক্যালাচ্ছিস কেনো? দে.. ওর সাথে একটু কল লাগিয়ে দে। কথা বলি..


   -চলবে

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Où les histoires vivent. Découvrez maintenant