#২৬

435 19 0
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_২৬

-তুমি তাহলে ওই মেয়েকে দিয়েই সংসার করাতে চাইছো?
-ওদের বিয়ে হয়েছে.. একে অপরের সাথে ওরা মানসিক ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। এখন একটি সম্পর্ক চাইলেই তো শেষ করা যায়না।
-একটি সম্পর্কের ইতি ঘটানো কি খুব কঠিন?
-তো খুব সহজ? কই.. আজ পর্যন্ত তো আমার আপনার সম্পর্কের ইতি আমি ঘটাতে পারিনি!
ইকবাল এবং রেহানা চৌধুরীর কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরে যাচ্ছে বুঝে মুখ খুললেন লিলি বেগম। দরাজগলায় তিনি বললেন,
-তোমার মুখ থেকে এই কথা শুনতে হবে তা আমি কখনো ভাবতে পারিনি রেহানা। দেশে মেয়ের অভাব নেই যে একজন চরিত্রহীন মেয়েকে দিয়েই সংসার করাতে হবে।
নীরব হয়ে পড়লেন রেহানা চৌধুরী। দ্যুতি সম্পর্কে এটুকু জেনেই তাকে মানতে নারাজ এই পরিবার। সেখানে ওর একটি বাচ্চাও রয়েছে.. এখবর জানলে বাড়ি যুদ্ধক্ষেত্রতে পরিণত হতে বেশি একটা সময় লাগবে না! তবে এভাবে নীরবে থাকলেও তো কিছু হবেনা.. তার ছেলেকে সুস্থ একটি জীবন তারই দিতে হবে।
-বড়মা তো ভুল কিছু বলেনি.. একটা সম্পর্ক তো এত সহজেই ভাঙা যায় না।
থমথমে গলায় বললো ইশরাক। তা শুনে খেঁকিয়ে উঠলেন শিপু চৌধুরী। কঠিন স্বরে তিনি বললেন,
-তুই চুপ কর। ওই মেয়ে এই বাড়িতে পা দিলে আমি এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবো।
-এটা কেমন কথা মা? তোমার কথার দ্বারা এটা স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে তুমি ভাবিকে হিংসা করো।
-হিংসা করবো আমি? কী আছে ওর ভেতরে? ওর মতো বাজারি এক মেয়েকে করবো আমি হিংসা?
-তাহলে কেনো বারবার এমন কথা বলছো?
পরিস্থিতি ক্রমশ বিগড়ে যাচ্ছে বুঝে রেহানা চৌধুরী বললেন,
-তোমরা থামো.. আমাকে আমার কথা শেষ করতে দাও। দ্যুতিকে আমি ভালো খারাপ কোনোটাই বলছি না। কেননা দ্যুতির মুখ থেকে কিছু না শোনা পর্যন্ত আমি ওকে খারাপ বলতে পারিনা। হয়তো ওর কিছু যুক্তি আছে.. কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। সেগুলো শুনেই আমি দ্যুতি এবং ইশতিয়াককে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই। আমার করা ভুলের জন্য আমি আমার ছেলের জীবন নষ্ট করতে পারিনা।
শিপু চৌধুরী বললেন,
-দ্যুতির মুখ থেকে শোনা মানে কী? ওই তো দ্যুতিকে এই বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা..
-আশ্চর্য! মা তুমি একটু চুপ থাকতে পারোনা?
বিরক্ত হয়ে ইশরাক মুখ খুলতেই তাকে থামিয়ে দিলেন লিলি বেগম। ভ্রু কুঁচকে তিনি বললেন,
-ভুল কী বলেছে শিপু? এতকিছুর পর আবারও ওই মেয়েকে এই বাড়িতে আনলে আমাদের মানসম্মান থাকবে? তাছাড়া কেনই বা নিয়ে আসবো আমরা ওকে এই বাড়িতে? এতকিছু হবার পর ওর মুখ থেকে সাফাই শোনার কোনো মানে হয় না।
-তাহলে তুমি কি চাইছো ফুপু?
-যেভাবে যা চলছে চলুক না.. আগ বাড়িয়ে নিজে থেকে ওদের কাছে যাওয়া মানে ওদের মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেওয়া। তাছাড়া ভুল করলে ওরা করেছে.. আমরা কেনো এসব মিটমাট করতে যাবো?
-আমি তোমার কথার সাথে একমত হতে পারলাম না.. যেভাবে যা চলছে সেটা সেভাবেই চলতে দেয়া যাবেনা। ভাবি আসুক.. নিজের যুক্তি রাখুক। তারপর না হয় মুরুব্বিরা বসে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।
ইশরাকের কথার পিঠে রেহানা চৌধুরী বললেন,
-হ্যাঁ.. এটাই আমি বলতে চাইছিলাম। চাইলেও তো হুট করে একটি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা যায় না। তাহলে তো পারলে আমিও অনেক কিছুই পারতাম..
দাঁতে দাঁত চেপে ক্রোধিত চোখে রেহানা চৌধুরীর দিকে তাকালেন শিপু চৌধুরী। তাকে উদ্দেশ্য করে কি টিপনি কাটলেন তিনি?
-যা ইচ্ছা করো। এই মেয়ে বাজারি মেয়ে। এই সংসারে ফিরে এলে কখনোই আমাদের সংসারে শান্তি আসবে না..
কলিংবেলের শব্দে কথা পুরো করতে পারলেন না শিপু চৌধুরী৷ উঠে দাঁড়িয়ে সদর দরজার দিকে এগুলো সে।

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now