#৩৩

380 15 2
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৩৩

কেনাকাটা শেষে বাড়ি ফিরতে গিয়ে ঝামেলা বাধালো দ্যুতি। মৌমির সাথে সে একই রিক্সায় যাবেনা। তার যা মৌমিকে বলার ছিল, বলা শেষ৷ তবে কেনো আবারও ওর সাথে যাবে? মাঝে থেকে বিপদে পড়লো ইশতিয়াক। মৌমিকে একা রিক্সায় ছাড়া ঠিক হবে কিনা ভেবে উদ্বিগ্ন হলো। আর যদি ঠিক নাই হয় তবে কি মৌমির সাথে সাথে গিয়ে দ্যুতিকে একা ছাড়বে? একদিক দিয়ে দ্যুতিকে একা ছাড়লেও সমস্যা নেই। একা চলে ফিরে অভ্যস্ত সে। তবে এখানেও সমস্যা। একথা মুখ দিয়ে বের করলেই তুলকালাম বাজিয়ে দেবে দ্যুতি। মৌমিকে তার সঙ্গে জড়িয়ে নানান বাজে কথা শোনাবে। তাই সব ভেবে মৌমিকে একটি রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে দ্যুতির সাথে একই রিক্সায় উঠে বসলো ইশতিয়াক।
-ছোটবেলায় একবার রিকশা থেকে পড়ে আমার মাথা ফেটে গিয়েছিল.. সেই থেকে আমি রিক্সায় উঠতে প্রচুর ভয় পেতাম। রিক্সায় উঠলেই বুক কাঁপতো আমার.. এই বুঝি পড়ে যাবো! তবে যতদিন বাবা আমার পাশে ছিল, ততদিন রিক্সায় চড়লেই বাবা আমাকে আঁকড়ে ধরে বসতো। মা বলতো, কিচ্ছু হবেনা। আয়তুল কুরসি পড়তে পড়তে যাবি আসবি।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো দ্যুতি। কপালের চুল সরিয়ে ইশতিয়াকের দিকে তাকিয়ে আবারও বললো,
-তবে একসময় আমার এই ভয়টা কেটে গিয়েছিল। তখন টিউশনি থেকে বেরিয়েই সারজিমের সাথে রিক্সায় করে রাতের ঢাকা দেখতাম। সারজিম আমার কোমড় শক্ত করে চেপে ধরে থাকতো। আর আমি নিশ্চিন্তমনে অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্নের জাল বুনতাম। তবে একসময় তা পূরণ করার জন্য মরিয়া হয়ে ভুল করে ফেললাম.. তারপর থেকে আবারও আমার রিক্সায় চড়তে ভয় লাগা শুরু হলো। বুক কাঁপতো আমার.. চলার পথে রিক্সার সঙ্গী হিসেবে কখনোই কাওকে চাইতাম না।
কী এমন হয়েছিল দ্যুতি? প্রশ্নটি করতে চেয়েও করলো না ইশতিয়াক। নীরবে তাকিয়ে রইলো ফুটপাতের দিকে।
-আজ রিক্সায় আপনার পাশে বসে পথ চলতে আমার ভয় লাগেনা। কেনো বলতে পারেন? আপনি তো বাবা বা সারজিমের মতো আমায় আঁকড়ে ধরেন না.. তারপরও কেনো ভয় করেনা?
কিছুটা ইতস্তত করে ইশতিয়াক বললো,
-সারজিম তোমার ভয়টা কাটিয়ে দিয়েছিল বলে বোধহয়।
-আপনি আমার কথা মন দিয়ে শোনেননি.. অথবা শুনলেও বোঝার চেষ্টা করেননি। আপনি কি আদৌ আমার অতীত কখনো বোঝার চেষ্টা করবেন?
ক্ষীণ স্বরে বললো দ্যুতি। তবে দ্যুতির সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ইশতিয়াক তাকালো পেছনের রিক্সার দিকে। চিন্তা হচ্ছে তার। রিক্সা চালকটি মৌমিকে ঠিকঠাক ভাবে আনছে তো!
-বারেবারে কেনো আপনি ওদিকে তাকাচ্ছেন? মন বসছে না আমার পাশে? নাকি আমি পঁচে গেছি। শরীর থেকে উদ্ভট গন্ধ বেরুচ্ছে? ওর পাশে বসতে চান আপনি?
-কোনোটাই না.. মেয়েটিকে নিয়ে টেনশন হচ্ছে।
-টেনশন হবার কী আছে? আপনার মনে হয় ও দুধের শিশু? চলতে ফিরতে পারেনা?
বিরক্ত হলো ইশতিয়াক। দ্যুতিকে উপেক্ষা করে পিছন ফিরে চাইতেই দ্যুতি বললো,
-নাকি আমার বুক আপনার পছন্দ না? ও বুক দেখিয়ে বেড়ায় বলে ওর টা ভালোলাগে?
কপাল কুঁচকে ফেললো ইশতিয়াক।
-তুমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়েকে নিয়ে এত বাজে কথা কিভাবে বলো দ্যুতি?
-যে মেয়ে বাজে তাকে নিয়ে বাজে কথা বলতে আমার বাঁধে না।
-তাহলে তো তোমাকে নিয়েও অনেক কথাই বলা যায়। কী? যায়না?
-আপনি মৌমিকে ডিফেন্ড করতে আমাকে শোনাচ্ছেন?
-না..
-শুধুশুধু মিথ্যা বলবেন না। আমি বাজে মেয়ে, তবে আমি নিজের ইচ্ছেতে কাউকে শরীর দেখিয়ে বেড়াই নি। তারপরও আমি বাজে মেয়ে। কারণ আমাদের সমাজ ধর্ষককে নয় ধর্ষিতা কে খারাপ চোখে দেখে।
ইশতিয়াক থেকে সামান্য সরে বসলো দ্যুতি। নাক শিটকে আবারও বললো,
-মৌমিকে আজ আমি যে ফোমের ব্রা গিফট করেছি তাতে আপনার চোখ সহ আপনার শরীরও তৃপ্তি পাবে। আরও তৃপ্তির দরকার পড়লে সরাসরি আপনার বেডরুমেই নিয়ে যাবেন ওকে। ওর তো সবসময় উঠেই থাকে, আপনার উঠতে কতক্ষণ?
তুমি খুব বাজে মেয়ে দ্যুতি। খুব বাজে মেয়ে। তোমার মুখের ভাষা তোমার থেকেও বাজে.. এমন ভাষা আমি আমার জীবনে কোনো মেয়ের মুখেই শুনিনি। কথাগুলো বলার ইচ্ছে থাকলেও ফোনে আসা রিংটোনের শব্দে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইশতিয়াক। ফোন রিসিভ করে হ্যাঁ হু বলে তা পকেটে রেখে দ্যুতির উদ্দেশ্যে বললো,
-বাসায় তোমার বাবা এসেছে.. খালুজ্বিও এসেছে। আজ সবাই আমাদের নিয়ে আলোচনায় বসবে।
শক্ত গলায় দ্যুতি বললো,
-বসুক.. আমিও চাই সবকিছুর এসপারওসপার হয়ে যাক।

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now