#৩০

384 16 1
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৩০

ঈশিতার পাশে বসলো ইশতিয়াক। হালকা কেশে শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে বললো,
-কিছু বলবে?
-হ্যাঁ.. এই যে দ্যুতি তিনদিন ধরে এখানে পড়ে আছে, এটা নিয়ে কিছু কি ভাবছিস?
-কী ভাববো? আগেও কি ছিল না ও এই বাড়িতে?
-আগের আর পরের মাঝে পার্থক্য রয়েছে।
জবাব দিল না ইশতিয়াক। শার্টের হাতা গোঁজায় সে এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়লো যেনো কাজটি এখন না করলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।
বিরক্ত ভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে ঈশিতা বললো,
-তুই কি চাইছিস? তোর মন কি চাইছে আমাকে খুলে বল। আমি এর একটা বিহিত করে যেতে চাই।
-আমি কিছুই চাইছিনা।
-তাহলে যা যেভাবে চলছে সেভাবেই রাখতে চাইছিস?
-না.. তুমি দ্যুতিকে এবাড়ি থেকে চলে যেতে বলো।
এতক্ষণে স্বস্তি পেল ঈশিতা। যাক! শেষমেশ তো ভেতরের ক্ষোভ প্রকাশ করলো ইশতিয়াক।
-আমি কেনো বলবো? দ্যুতির জন্য আমার তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তোর সমস্যা হচ্ছে তুই বল।
আপা আমি প্রচুর অস্থিরতায় আছি। স্বাভাবিক হতে পারছি। দম বন্ধ দম বন্ধ লাগছে। মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কি করবো আমি আপা? মনেমনে দু'বার আওড়ালো ইশতিয়াক। তবে মুখে বললো,
-আচ্ছা।
-মা যেভাবে আমাদের দু'জনের জন্য এই সংসার আঁকড়ে ধরে ছিল, দ্যুতির কিন্তু তেমন কোনো কারণ নেই। তবুও ও তোর পাশে থাকতে চাইছে। সকলের মুখ থেকে তেতো কথা শুনেও সংসারটাকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে। কেন বল তো?
-আম্মা চেয়েছিল বলে..
ক্ষীণ স্বরে বলেই কথা ঘুরিয়ে ফেললো ইশতিয়াক।
-আমি জানি না.. হয়তো নিজের অপরাধবোধ থেকে ও কাজটি করতে চাইছে।
-অপরাধবোধই বা কয়জনের আসে?
-হঠাৎ তুমি এসব কথা কেনো বলছো?
-কারণ আমি চাই তুই দ্যুতির সাথে সব ক্লিয়ার করে ফেল। আম্মা দ্যুতির উপর আস্থা রেখেছিল.. তাহলে আমরা কেনো রাখতে পারছি না রে ইশতি?
-আম্মার মৃত্যুর কারণও কিন্তু ওই ছিল!
শক্ত গলায় জবাব দিল ইশতিয়াক।
-ভুল.. পৃথিবীতে আম্মার সময় এটুকুই লেখা ছিল। হয়তো আম্মার ভেতরের কষ্ট কমাতেই আল্লাহ তাকে দ্রুত আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছেন। ভালো মানুষকে দ্রুত আল্লাহ নিজের কাছে ডেকে নেন.. জানিস তো তা?
এলোমেলো সুরে ইশতিয়াক বললো,
-তুমি নিজের মনকে বুঝ দিতে ওর দোষটা ঢাকতে চাইছো.. ও কেনো অপেক্ষা করলো না আপা?
-ওকে ছোটমা বের করে দিয়েছিল।
-তাতেই ওর বের হয়ে যেতে হবে? এমনিতেই তো দুনিয়ায় বাজে কথা মুখ দিয়ে বের করে.. তো তখন ওর কী হয়েছিল? মুখ কেনো খোলেনি তখন?
-হয়তো ওর অতীত ওকে..
-হ্যাঁ.. অতীত। জঘন্য এক অতীত। সাথে জঘন্য একটা মানুষ ও। আমার বাড়ি থেকে যাবার চব্বিশ ঘণ্টা না যেতেই ও ওর এক্স হাজবেন্ডের কাছে চলে গেল! একটাবার ভাবলো না আমি বা আমার মা সবার কাছে কী উত্তর দেবো!
-হয়তো এর পেছনেও কোনো কারণ ছিল..
-হয়তো নিয়ে আমি ভাবতে চাইনা। ও গিয়েছিল বা করেছিল কিনা সেটা আমার দেখার বিষয়।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো ঈশিতা।
-আমি ওর নোনাস.. চাইলেও ও আমাকে অনেক কিছুই বলতে পারেনা। আমি চেষ্টা করেছিলাম ওর মুখে ওর অতীত সম্পর্কে জানার। তবে ওর সংকোচের কাছে আমি তা পেরে উঠিনি। কিন্তু তুই তো ওর হাজবেন্ড। আমি বলবো তুই ওর উপর আস্থা রেখে ওকে বোঝ। ওর কাছে জানতে চা ঠিক কি ঘটেছিল ওর অতীতে। কিংবা হাসান নামের লোকটির কথায় কতটুকুই বা সত্যতা রয়েছে। বিয়ের মতো পবিত্র একটি সম্পর্ককে তোরা হেলায় ফেলায় শেষ করে দিস না। ছোটমা, বাবা যাই বলুক তোরা দু'জন দু'জনকে বোঝ। সময় দে। মানুষের মুখ আছে.. তারা বলবেই। কিন্তু তুই কেনো তাদের কথায় এফেক্ট হবি? সংসার তোর, স্ত্রী তোর.. তোর মন যা বলবে তাই করবি তুই। বাদবাকি রইলো আমি.. সবসময় আমি তোর পাশে আছি।
শুয়েছি আমি ওদের সাথে। দরকার হলে ভবিষ্যতেও শুবো.. কথাগুলো দ্যুতি নিজের মুখেই বলেছে। এসব কি মিথ্যে আপা? বুকের ভেতরটায় ব্যথায় ভরে উঠলেও মাথা নেড়ে ঈশিতার কথায় সম্মতি জানালো ইশতিয়াক। তার কষ্টের তীব্রতা তার ভেতরেই থাক। সহজসরল হিসেবে সারাজীবন তো মানুষ অনেক সুযোগ নিল। এবার না হয় দূর্বলতাগুলো লুকিয়েই রাখা যাক...

-কথা হয়েছে ইশতিয়াকের সাথে?
লিলি বেগমের প্রশ্নে মাথা নাড়লো মৌমি। মেয়েটি দেখতে শ্যাম। তবে মুখে কতোই না মায়া! মা-বাবার মৃত্যুর সংবাদে তার এই মায়া যেন ঝড়ে ঝড়ে পড়ে। ইশ.. মেয়েটির কপালে কিনা ইশতিয়াক লেখা নেই! ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসে৷ ইচ্ছে হয় ইশতিয়াকের পাশে মেয়েটিকে বসিয়ে দু'জনকে এক করে টেপ দিয়ে লাগিয়ে রাখতে।
-চাচি উনার বউ সত্যিই খারাপ? দেখে তো মনে হয় না।
মৌমির কথায় চিন্তায় ছেদ পড়লো লিলি বেগমের। ভ্রু কুঁচকে তিনি বললেন,
-তো কি আমি তোরে মিথ্যা বলছি? মেয়ে যা যা আকাম করছে সব তোরে বললাম না? আরও বিস্তারিত শুনতে চাস?
-উহু..
-তাইলে এত প্রশ্ন কেন করিস? দেখিস না আমার ছেলেটার জীবন কেমন নরক বানাই দিছে? ইশ! মুখের দিকে তাকানো যায় না। তুই যা.. ওর কাছে যা। পাশে গিয়ে বসে থাক..
-উনি তো উনার ঘরে।
-তুইও যা ঘরে।
-সাথে যে উনার বউ আছে!
-থাকলে থাকবে। তুই যা.. আর যাবার আগে জামার গলা নামাইয়া যা।
মৌমির জামার গলা ধরে খানিকটা নিচে নামিয়ে দিলেন লিলি বেগম। গায়ের ওড়নায় হাত দিয়ে বললেন,
-সুতি ওড়না রেখে জর্জেট লাল ওড়নাটা নিয়ে যা।
-আচ্ছা..
-ঠোঁটের লিপস্টিক হালকা হয়ে গেছে। উপরে আরেকবার ডলা দে।
লিলি বেগমের কথায় আবারও ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক লাগালো মৌমি। তারপর তাকালো আয়নার দিকে। সুন্দর লাগছে.. তবে উনার ভালো লাগবে তো? ভাবতেই বুকের ভেতরটা ধুকপুক করে উঠলো। ইশতিয়াক নামটি শুনলেই বুকের ভেতরের অস্থিরতা ক্রমশ বেড়ে যায়। ইচ্ছে হয় এক দৌড়ে তার বুকে গিয়ে মুখ লুকাতে।
-মেয়েদের কোন জিনিস পুরুষদের কাবু করতে পারে.. জানিস? বুক.. উঁচু বুক। দেখবি খানিকটা বুক বাড়াই থাকলে ফ্যালফ্যাল করে ইশতিয়াক সেদিকে তাকাই থাকবে।
লজ্জায় মুখ লাল হয়ে এল মৌমির। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর চাচা চাচির কাছে আসার পরেই ইশতিয়াক ভাইয়ের সাথে পরিচয়। সেই থেকেই তার ভালো লাগতো ইশতিয়াক ভাইকে। তবে সে ভালো লাগার কথা কখনোই বলা হয়ে উঠেনি। উনি কত্তবড় মাপের একজন মানুষ.. আর সে এতিম একটি মেয়ে। উনার সাথে কোন দিক দিয়ে যায় সে? তবে উনার বিয়ের কথা শুনে মনটা ভেঙে গিয়েছিল তার। সারা রাত বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছিল। যা কখনো হবারই ছিল না তা ভেবে কেনো শুধুশুধু কষ্ট পায় সে? ভেবে নিজেকে বুঝও দিয়েছিল! তবে মন.. সে তো বেহায়া বজ্জাত বালের মন।

   -চলবে

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now