শাস্তি ২

56 10 0
                                    

পল্টু ভাই কিছুদিনের মধ্যেই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করছেন এবং সেখানে অনুদের কাওকে ঘেষতে দেবেন না বলে ঠিক করেছেন । আগেরবার নাকি অনুরা মিলে তার পুরো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাটা মাটি করেছে। বাবলুর খুব ইচ্ছে ছিল সে নাটকে অভিনয় করবে তবে পল্টু ভাইয়ের মতিগতিই বলে দিচ্ছে যে বাবলু এবার কোন পাঠ পাবে না সেই সাথে অনুরাও।এটাই ভালো হয়েছে। বাবলু নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে এই বলে।  কারন নাটকের পাঠ পেলে পল্টু ভাইকে টিট করতে গিল্টি ফিল হত। অনুর বুদ্ধিটাও অসাধারণ।  কেউ ধরতেও পারবে এটা তাদের কাজ।
কয়েকদিন ধরে রিহার্সাল শুরু হয়েছে । প্রথম প্রথম তারা রিহার্সাল দেখতে যেত না কিন্তু অনুর প্ল্যানটার জন্য তারা  ঠিক করল রিহার্সাল দেখাটা মিস করা ঠিক হবে না ।তাছাড়া এতে ওদের কাজের কিছুটা সুবিধাও হবে। এখন তারা প্রতিদিন গিয়ে রিহার্সাল দেখে । প্রথম প্রথম পল্টু ভাই ব্যাপারটা খুব একটা পছন্দ করত না। সারাক্ষন তাদের ভাগিয়ে দেওয়ার তালে থাকত কিন্তু ওদেরকে চুপচাপ থাকতে দেখে এখন আর তেমন কিছু বলে না বরং মাঝে মাঝে ওদের কিছু কিছু কাজ ধরিয়ে দেয়। যেমন যারা রিহার্সাল করছে তাদের রিহার্সালটা ঠিক হচ্ছে কিনা, কোন পাঠ ভুল বলছে কিনা। অনুরা অবশ্য খুশি মনেই এগুলা করে আর মনে মনে হাসে অনুষ্ঠানের দিন পল্টু ভাইয়ের কি অবস্থা হবে সেই কথা চিন্তা করে। এবার নাকি পল্টু ভাই জেলা প্রশাষককে দাওয়াত দিয়েছেন আর সেই জন্যই পল্টু ভাই আরও বেশি ব্যস্ত।  সারাক্ষণ সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এবার যেনোতেনো ভাবে অনুষ্ঠানে করা চলবে না। সবাইকে সর্বোচ্চ দিয়ে চেস্টা করতে হবে। পল্টু ভাইয়ের কথা শুনতে শুনতে অনুদের কান মোটামুটি ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে।
দেখতে দেখতে অনুষ্ঠানের দিন চলে এল আর একদিন পরেই অনুষ্ঠান, তাই আজ পল্টু ভাই সবাইকে নাস্তা খাওয়াবে। এইদিকে অনুরাও সবার জন্য কোক আর কেক নিয়ে হাজির, আজ নাকি তৃনার জন্মদিন। তো সবাই খুব খুশি বড় ভোজ পাবে আজ। অনুই সবকিছু সার্ভ করার দায়িত্ব নিল। সবাই খুব মজা করে খেল কেবল অনুরাই  কিছু খেল না, বাসা থেকে খেয়ে এসেছে বলে।
পরদিন অনুষ্ঠান তাই সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেল। পল্টু ভাইও খুশি কারণ রিহার্সাল ভালো হয়েছে। কাল তার নাটকটা যা ফাটাফাটি হবে না সেই কথা ভেবে তার খুশি আর ধরে না।  এইদিকে দিকে অনুরাও অপেক্ষায় আছে কালকের অনুষ্ঠানের।
পরদিন ৯ টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। পল্টু ভাই সবাইকে রেডি হয়ে ৮টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে বলেছে কিন্তু দেখা গেল পোনে ৯ টার সময়ও পল্টু ভাইয়ের আসার কোন নাম নেই। পল্টু ভাই স্বয়ং নাটকে রাজার ভূমিকায় অভিনয় করছেন।  আর বাকি যারা এসেছে তাদের অবস্থাও খুব একটা ভালো না। একটু পরপরই সবাই বাথরুমে ঢুকছে আর একবার ঢুকতে পারলে তাকে বার করা বেশ মুশকিলই হয়ে দাড়াচ্ছে। উপস্থাপনার দায়িত্বে আছে ফরিদ ভাই।  একটু পরপর তিনি বলছেন বাথরুমে কি কেউ রসগোল্লা ফেলে রেখেছে নাকি যে তোরা একবার ঢুকলে আর বের হতেই চাচ্ছিস না। এদিকে ৯টার দিকে ধুকতে ধুকতে পল্টু ভাই এসে হাজির হলেন। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে তিনিও বাথরুমের  লাইনে দাঁড়িয়ে গেলেন।
এদিকে জেলা প্রষাশক চলে এসেছেন আর নাটকের আগে কয়েকটা অনুষ্ঠান ছিল সেগুলাও শেষ এখন তো আর দেরি করা চলে না। আর প্রথম দৃশ্যেই আবার পল্টু ভাইয়ের পাঠ।  খুব কষ্টে বহুক্ষণ ডাকাডাকি করে শেষ পর্যন্ত পল্টু ভাইকে বাথরুম থেকে বের করে স্টেজে পাঠানো হল। কিন্তু পাঠ বলতে  গিয়ে তারাহুরো করে তিনি সব গোলমাল লাগিয়ে কোন রকমে স্টেজ থাকে নেমেই ছুটলেন বাথরুমে। একদিকে বাথরুমে তখন আরেকজন। পল্টু ভাই ভাই কিছুক্ষণ ধাক্কা ধাক্কির পরও যখন দরজা খুলল না তখন পল্টু ভাই রীতিমতো গর্জন করতে লাগলো।  তিনি বলতে লাগলেন একদম খুন করে ফেলব কিন্তু তাড়াতাড়ি বের হ বলছি।  কিন্তু পল্টু ভাইয়ের হুংকারে খুব একটা কাজ হল বলে মনে হল না। যে ঢুকেছে মনে হয় পণ করেছে যে দরজা খুলবে না আর  পল্টু ভাই সমানে চেচিয়ে যাচ্ছে। এদিকে পল্টু ভাইয়ের তর্জন গর্জনে রিহার্সাল রুমে রীতিমতো মানুষ জড় হয়ে গেছে। তারা স্টেজের নাটকেই চেয়ে এখানকার নাটকেই বোধকরি বেশি মজা পাচ্ছে।
ঐ দিকে স্টেজে পল্টু ভাইয়ের সিন চলে এসেছে কিন্তু পল্টু ভাইকে কিছুতেই টেনে হিচরেও স্টেজে নেওয়া গেলো না। তো পল্টু ভাইকে ছাড়াই অর্থাৎ রাজা ছাড়াই নাটক শেষ করতে হল এবং নাটকটা হল জাচ্ছে তাই। এদিকে অনুরা এসব কান্ডে হেসে একদম কুটিপাটি হয়েছে, শুধু অনুরা না রিহার্সাল রুমে যারা উঁকিঝুঁকি মেরে দেখেছে তারা সবাই।

আসলে এই টাইট দেওয়ার পুরো প্লানটা অনুর।  সে কোকের সাথে কায়দা করে বেশ কয়েকটা  জামাল গোটা মিশিয়ে দিয়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে জাফরোটা কার্কাস। এটা একটু বেশি খেলেই ডিসেন্ট্রি হয়ে যায়।  তখন বাথরুমে যেতে যেতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। সাধারণত কোসঠ্যকাঠিন্যের রোগিদের পথ্য হিসেবে কাজ করে তাও সামান্য পরিমানে। অনুদের বাসার কাছেই জামাল গোটার গাছ আছে। অনু কয়েকটা আগে থেকেই নিজের কাছে রেখেছিল কখন কি কাজে লাগে সেই ভেবে।  এখন একদম মোক্ষম জায়গায় লাগাতে পেরে তার ভীষণ খুশি লাগছে।

অনুর কান্ডWhere stories live. Discover now