কিছুদিন যাবৎ অনু ভীষণ চিন্তিত ।দেশে করোনা ভাইরাস চলে এসেছে ।কী ভয়াভহ ব্যাপার ।এতোদিন এটা ছিল বহু দুরের ব্যাপার তাই এটাকে কেউ খুব একটা পাত্তা দেয়নি কিন্তু এখন তো এটা আর দূরের বিষয় রইলো না ,এটা এখন খুব কাছের হয়ে গেছে কিন্তু এখনো মানুষ সচেতন হয় নি। অনুদের স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু বন্ধের আগে বেশিরভাগ পোলাপানই করেনার মত এই ভয়াভহ ব্যাপারটাকে মোটামোটি হেসেই উড়িয়ে দিয়েছ । তবে আশার বিষয় হচ্ছে তাদের পাড়ার মোটামোটি সবাই সচেতন আর এটাকে তারা গুরুত্বের সাথেই নিয়েছে । অনু এই ভাইরাসটা সম্পর্কে কিছুটা জানার চেস্টাও করেছে । এর চারটা প্রোটোটাইপ ।তার মধ্যে কয়েকটা আবার মরাত্মক ভয়াভহ । কিছু মামুলি উপসর্গ নিয়ে শুরু করলেও এটাকে কিন্তু একদমই হেলাফেলা করার জো নেই । এর দ্রুত সংক্রমণ ক্ষমতাই এটাকে আরও শক্তিশালী আর ভয়াভহ করে তুলেছে । সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এর ভ্যাক্সিন বানানো । কারন করোনা ভাইরাসের ক্যাপসিডের স্পাইক প্রোটিনগুলোর মিউটেশন হয় প্রায় ২০০ বারের বেশি ফলে একটা সাবটাইপের ভ্যাক্সিন বানাইলেও আরেকটা সাবটাইপ আক্রমণ করে । তবে এরও একটা সমাধান আছে ।একটা ক্যাপসিডের সবগুলো রিজিয়নে মিউটেশন হয় না কিছু রিজিয়নে হয় ।এখন কোনোভাবে যদি টার্গেট করা যায় কোন রিজিয়নে মিউটেশন কম তাহলে ঐ রিজিয়ন টার্গেট করে ভ্যাক্সিন তৈরি করা যেতে পারে । কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে ভ্যাক্সিন বানানো গেলেও সেটা যে কবে তৈরি হয়ে ল্যাবরেটরির বাইরে আসবে সেটা সম্পর্কে নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা ।এর জন্য দুবছরও লাগতে পারে আবার ১০ কিংবা তার বেশিও লাগতে পারে ।তাই সচেতনতা ছাড়া আর কোন উপায় আমাদের নেই ।
অনুর নিজেদের পাড়া নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তা নেই । কারন তাদের পাড়াটাকে মোটামোটি স্বয়ংসম্পূর্ণই বলা চলে । কাঁচাবাজার আর স্টেশনারি জিনিস সব পাড়ার ভেতরেই পাওয়া যায় ।তাছাড়া পুরো পাড়াটা উচু পাচিল দিয়ে ঘেরা আর বাইরের এলাকা থেকে তাদের পাড়ায় ঢুকার রাস্তায়ও ব্যারিকোড বসানো হয়েছে । সেখানে পানির ট্যাপ বসানো হয়েছে ,তাছাড়া হ্যান্ড সেনিটাইজার ,সাবান ,স্যাভলন সব রয়েছে ওখানে । পাড়া থেকে বাইরে গেলে কিংবা বাইরে থেকে আসলে সেনিট্যাইজার দিয়ে হাত ধোয়া এবং মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক । সাধারণত কেউ খুউব বেশি দরকার না পড়লে পাড়ার বাইরে যায় না ।
বন্ধ পেয়ে অনু প্রথমে ভীষণ খুশি হয়েছিল কিন্তু যখন জানতে পারল যে এখন থেকে বিকেলে বাইরে খেলতে যেতে পারবে না তখন এক নিমেসেই পুরো আনন্দটা দুঃখে পর্যবসিত হল । কিন্তু ভাইরাসের বিরুদ্ধে রাগ করে তো কোন লাভ নেই তাই অনু ঠিক করল এই সময়টা কাজে লাগাবে ।এই বইমেলায় সে এত্তগুলা বই কিনেছে ওগুলো এখনও পড়া হয় নি ।তাছাড়া অনেক এক্সপেরিমেন্টও সে করতে পারে নি ।এখন ঘরে বসে বসে ওগুলো করবে ।তবে এই লকডাউনের মধ্যেও অনু কিন্তু ওর বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে নি। প্রতিদিন বিকেল হলে স্কাইপে বন্ধুদের সাথে সারাদিন কে কি করেছে সেসব বিষয়ে আলাপ আলোচনা করে যদিও সিংহভাগ কথা বাবলুই বলে । বাবলুর আবার বিরাট বিরাট সব প্ল্যান ।করোনা দেশ থেকে গেলেই নাকি সে ডাকাতির প্রজেক্টটা আরও বড় আকারে লঞ্চ করবে । তাছাড়া সে নাকি ইদানিং হাত দেখা অর্থাৎ পামিস্ট্রি নিয়ে পড়ছে ।জ্যোতিষ হওয়ার শখ জেগেছে তার । কিছুদিন পরে যখন সে পামিস্ট্রিতে হাফেজ হয়ে যাবে তখন হাত দেখেই মোটা অংকের টাকা আদায় করবে । বাবলুর সবচেয়ে বড় দুঃখ হচ্ছে সে করোনা ভাইরাসের হাত দেখতে পারবে না । তাহলে করোনার হাত দেখে দেশের সরকারকে বলে দিতে পারত কবে দেশ থেকে করোনা চলে যাবে ।এতে সরকার নিশ্চয়ই সরকার খুশি হয়ে তাঁকে বড়সড় কোন রিউয়ার্ড দিত ।তাই করোনার উপর বাবলুরি সবচেয়ে বেশি রাগ ।এই ভাইরাসটার আরেকটু বড় হলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত ,তাহলে তো অন্তত স্কুলের মাইক্রোস্কোপ দিয়ে এই ভাইরাসটাকে সে দেখতে পারত !
কিছুদিন আবার বাবলুর শখ ছিল ম্যাজিক শিখবে ।তার সবচেয়ে লেটেস্ট প্রজেক্ট হচ্ছে সে সেয়ারবাজার থেকে সেয়ার কিনে স্টক করে রাখবে ।করোনা কান্ডে তো বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা চলছে এই সুযোগে সে কম দামে সেয়ার কিনে রাখবে তারপর যখন করোনা চলে যাবে তখন, এই শেয়ার বেচে সে মোটা অংকের টাকা আয় করবে ।এই প্রজেক্টটা খুব জবরদস্ত হয়েছে ভেবে সে তার মাকে বলতে গিয়ে আচ্ছামত কানমলা খেয়ে এসেছে । ফ্রি হিসেবে তার দুইদিন ইন্টারনেট চালানোও বন্ধ করে দিয়েছে মা। কী আর করা ,বাবলু নিজেকে সান্তনা দিচ্ছে এই বলে যে, মহৎ কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই । এই তো দুনিয়ার নিয়ম ।
YOU ARE READING
অনুর কান্ড
General Fictionঅনু এমন একটা মেয়ে যে বিচিত্র এবং অদ্ভুত কান্ড করে বেরোয়।অবশ্য এ-র জন্য তাকে মায়ের কাছে বকুনিও কম খেতে হয় না। বন্ধুরা এটি আমার প্রথম গল্প।লিখেছি অনেকটা বান্ধুবিদের চাপে।এর আগেও লিখেছি কিন্তু একটাও শেষ করতে পারিনি।সে হিসেবে এটিই প্রথম। প্রথম গল্প হিসে...