প্রথম অধ্যায় : আমি কে ??

288 8 0
                                    


সীমার পর্ব :

অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছি মনের অব্যক্ত কথা গুলিকে লিপিবদ্ধ করতে কিন্তু প্রতিবারই বিফল হচ্ছি ।
মনের কথা গুলো মনকে কেঁটে কেঁটে খাচ্ছে কিন্তু শব্দ জ্ঞানের অভাবে তা পরিষ্কার একটা রূপ পাচ্ছে না।
যাইহোক আমি নিজের সম্পর্কে একটু ধারনা দিই:
আমি সীমা একটা ছোট্ট গ্রামের মেয়ে, পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে সবেমাত্র গ্রামে ফিরেছি কারন গ্রামটাকে আমি খুব ভালোবাসতাম কিন্তু এখন ঠিক কি যে হয়েছে জানিনা তবে শুধু এটুকু বলতে পারি প্রতিটি মূহুর্ত যেন আমার কাছে এক সাজা।
ভালোবাসাটাই কি আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ালো না আমি ভেতর থেকেই কিছু একটা হারিয়ে ফেললাম ?? হয়তো কিছু একটা হারিয়েই ফেলেছি।
ঠিক কেমন যেন একটা হয়ে গেছি, সুখ দুঃখ গুলোও যেন আমাকে আর ছুঁতে পারেনা, কষ্টটা যত বড়ই হোক না কেন ভূল করেও আমার মনের কাছ ঘেঁষানোর সাহস করেনা অথচ এই আমিই একদিন কারো চোখের সামান্য জলটাও সহ্য করতে পারতাম না, মনের মধ্যে কোথাও যেন একটা জ্বালা দিয়ে উঠত ।
বয়স বেড়েছে তাই হয়তো আজ মন একটু শক্ত ---- সত্যি কথা বলতে আমি কোন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা তাই তো মনের মধ্যে এত প্রশ্ন এত হতাশা যা আমাকে মাঝে মাঝে পাগল করে তোলে।

*******************

কাকুর বাড়িতে আজ নিমন্ত্রণ আছে । যদিও আমি কারো সঙ্গে মেলামেশা করাটা ততটা পছন্দ করিনা তবুও মায়ের ভয়ে আত্মীয়ের বাসার নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে একরকম বাধ্য হয়ে থাকি।
কাকুর বাড়িটা কিছুটা দূরে একটা মাঠ পেরিয়ে যেতে হয়। কাকুর বাড়ি যাওয়ার এই রাস্তাটা আমার একেবারেই পছন্দ না যদিও আমি মাঠের খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে বেশ ভালোবাসি কিন্তু এই রাস্তাটা আমাকে আমার সমস্ত কষ্টের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই, সমস্ত অতীতকে চোখের সামনে মেলে ধরে। শ্রেয়ার সঙ্গে কাটানো স্মৃতিগুলোকে তাজা করে তোলে, কিন্তু আজ আর ওইসব স্মৃতিগুলোকে মনে করার শক্তি আমার মধ্যে নেই, কারণ ঘা গুলো যে আজও তরতাজা। যদিও ওর সাথে আমার কয়েক বছর দেখা নেই আর দূরত্বটা তো আরও অনেক আগেই তৈরি হয়ে গেছিল।

শ্রেয়া, আমার জীবনের একমাত্র ভালোবাসা। রূপে অপরূপা, একটা সময় ছিল যখন ওর ওই হালকা দুটি বাদামি চোখে মধ্যে চেয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যেতাম। এখনও ভূল করে যদি কখনও ওর কথা মনে পড়ে তবে আজও ওর ওই গায়ের পাগল করা গন্ধটা নাকে আসে। তারপর শুরু হয় ওইসব স্মৃতি যা আমাকে একমুহুর্তের মধ্যে শেষ করে দেবার ক্ষমতা রাখে। কখনো কখনো আবার একটা হিংস্র পশুতে পরিণত করে দেয়। কখনো বা নিজেকে আঘাত করি কখনো বা কামুক হয়ে পড়ি।
একবার সিনেমা দেখছিলাম হঠাৎ করে ওর ছবি বিদ্যুতের ঝলকের মতো ভেসে আসলো আর আমি সবকিছু এক মুহুর্তের জন্য ভুলে গিয়ে হাতে রাখা রিমোট টা দিয়ে পাশে বসে থাকা বন্ধুটিকে মারতে যাই বাকিরা ধরে ফেলে তাই ওই যাত্রাই বেঁচে যায় । এইসব কারণে মেসে আলাদা একটা রুম নিয়ে থাকতাম।
এমনিতে আমি খুব শান্ত প্রকৃতির , কাউকে উঁচু গলায় কথা বলাটা একেবারেই পছন্দ করিনা, সবাইকে সম্মান দিয়ে চলি। কারো গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা কারো দিকে কূনজরেও তাকাই না । আর এই আমিই ওর কথা মাথায় আসলে হঠাৎ করে অন্য এক মানুষে পরিনত হই। আসলে হয়তো আমি নিজেও জানি না আমি কে?? কোনটা আমার প্রকৃত রূপ ???

ওর  বিশ্বাস ঘাতকতার জন্যই একদিন মনে হয়েছিল ভালোবাসা হয়তো মাথার সৃষ্টি, পরিকল্পনা করে প্রেমে পড়া যায়। ওর ভালোবাসা ছিল এক পরিকল্পনা ---- এর চেয়ে বেশি কিছু একটা বলে আজ আর বিশ্বাস হয়না। পরিকল্পনা করে অত আবেগ, প্রেম ভালোবাসার কথাগুলো বলতেই বা পেরেছিল কি করে জানি না ।
কখনো কখনো আবার মনে হয় হয়তো সে একদিন সত্যিই আমাকে ভালোবেসেছিল কিন্তু আবার পরক্ষণেই মনে হয় যদি সে ভালো ভেসেই থাকে তবে কি করে আমাকে ওভাবে ছেড়ে রেখে গেছিল যে মূহুর্তে জীবনে ওর দরকারটা সবচেয়ে বেশি ছিল।

চলবে---------

অন্য এক ভালোবাসাWhere stories live. Discover now