পর্ব : এক
সীমার মনের মধ্যে চলতে থাকা প্রশ্নগুলো ঋতুর কাছে গোপন থাকলোনা। কিছুক্ষণ চুপ করে আকাশের দিকে আনমোনা ভাবে চেয়ে থেকে ধীরে ধীরে সীমার কাছে সরে এসে ওর কাঁধের উপর মাথা রেখে আকাশের দিকে চেয়ে হালকা কষ্ট জড়ানো গলায় নিজ মনেই বলতে লাগলো, "প্রেমের অনুভূতিও যে এতো প্রেমাময় হয় সেটা অজানাই থেকে যেত যদি জীবনে তোমার সাথে দেখা না হতো। মানুষ প্রেমে থাকলে ভালোবাসার মানুষটির সামান্য ছোঁয়াও যে মনের মধ্যে এতো ঢেউ এনে দিতে পারে, তার পথের পানে অধীর হয়ে চেয়ে থেকে নিজেকে অস্থির পাগল করে দিতেও যে এতো ভালোলাগে হয়তো এগুলি অজানাই থেকে যেত যদি তোমার সাথে না দেখা হতো।"
একটু থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টানা গলায় বললো, " তুমি কি জানো, জীবনে যদি প্রথমবার কাউকে দেখার জন্য মনটা এতোটা ব্যাকুল হয়ে প্রতীক্ষায় বসে থেকেছে তবে সেটা শুধুমাত্র তোমার জন্য।"
সীমার দিকে ঘুরে ওর কাঁধের উপর একটা আলতো কিস করে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, "একটা-দুটো কেন জীবনের প্রতিটি রাত যদি অন্য কারো সঙ্গে কাটায়, সেক্স করি তবুও আমি সেই তৃপ্তি সেই শান্তি সেই পরিপূর্ণতা কোনদিনও পাবো না যেটা আমি তোমাকে দেখে তোমার হাতের সামান্য একটা স্পর্শে পেয়ে যায়।"
একটু চুপকরে বললো, " জানো, মেসে থাকার সময় যখন আমরা সবাই একসঙ্গে বসে গল্প করতাম তখন আমি কতদিন শুধু এই আসাতেই তোমার পাশে গিয়ে বসেছি যাতে কথার বর্তার মাঝে তোমার হাতটা ভুল করে হলেও যেন আমার হাতকে একবার ছুঁয়ে যায়। মনটাও যে কারো জন্য এতো পাগল হতে পারে এতো অবুঝ হতে পারে সেটাও অজানা থেকে যেত যদি তোমার সাথে জীবনে কোনদিন দেখা না হতো। মাঝে মাঝে নিজেকেও প্রশ্ন করি, এমন কি আছে তোমার মধ্যে? তোমারও তো ঠিক বাকিদের মতো একটা নাক দুটো চোখ একটা মুখ আছে তবে তোমার প্রতি কেন আমি এতো আকৃষ্ট?"
দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সীমাকে এবার একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, "জানো তোমার সাথে যখন প্রথম চেনা পরিচয় হয় তখন তোমাকে আমার একটা রাগী বদমেজাজি ফালতু মেয়েই মনে হয়েছিল আর হবেই বা না কেন তুমি তো ওইরকম মেজাজ নিয়েই ঘুরে বেড়াও। তখন তোমাকে একরকম সহ্যই করতে পারতাম না। তারউপর ওই যে সেদিন আমার উপর রেগে গিয়ে দেওয়ালের উপর আমাকে চেপে ধরে কিস করেছিলে ওইদিন তোমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলে দিয়ে সোজা নিজের রুমের বাথরুমে চলে যায়, তিনবার স্নান করেও নিজের রাগ সামাল দিতে পারছিলাম না। স্নান করি আবার তোমার কিসের কথা মনে আসে আবার স্নান করতে শুরু করি। রাগে তখন মনে হয়েছিল তোমাকে ধরে পেটায় কিন্তু আমার তো সেই ক্ষমতা সেই শক্তি নেই, তার উপর সেদিনই সকালে সবাই প্রজেক্টের জন্য দুদিনের টুরে গেছিল। আমি যায়নি কেন এখন মনে পড়ছেনা। যদি জানতাম তুমিও যাচ্ছোনা তবে কেউ যাক আর না যাক আমি অবশ্যই যেতাম। একা তোমার সাথে পেরে উঠবো না এটা আমাকে আরও অস্থির করে দিচ্ছিল। ক্ষোভে রাগে আমি তোমার নামে সেক্সুয়াল হ্যারাশমেন্টর কেস করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আবার থেমে গেলাম তোমার রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চাপা গলায় তোমাকে কান্না করতে দেখে। ওই থেমে যাওয়াটাই আমার জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসে আর ওই অসহ্য মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায়।"
একটুখানি খিলখিল করে হেসে নিয়ে ঋতু বললো,"ওই রাত্রে তুমি কি কি করেছিলে তোমার মনে আছে সীমা?"
এতোক্ষণ সীমা অনমোনা হয়ে ঋতুর কথাগুলো শুনছিলো এবার ঋতুর মুখে ওর নাম শুনে সীমার ঘোর ভাঙলো, ঋতুর দিকে ঘুরে ওকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললো, "আমার মনে থাকার কথাও না ওই দিন রাত্রে প্রচুর নেশা করেছিলাম। নেশা করে নিজেকে শান্ত করবো ওই ভেবেই তো আমি প্রজেক্টের জন্য যায়নি। তখন জীবনটা এমন হয়ে গেছিল পাশ ফেল নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না। যে কোন উপায়ে শুধুমাত্র ওই কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিলাম।"
শোনো তবে কি হয়েছিল, "আমি তোমার কান্না শুনে হালকা করে তোমার রুমের দরোজাটা খুললাম কিন্তু দরোজাটা প্যাক করে আওয়াজ করে উঠলো, আওয়াজ শুনে তুমি ঘুরে তাকাও তাকিয়েই আমাকে দেখে আমার উপর ক্ষেপে যাও। আমাকে তাড়া করে আসো আমিও রেগে গিয়ে বললাম তোমার নামে আমি সেক্সুয়াল হ্যারাশমেন্টর কেস দিতে পুলিশ স্টেশনে যাচ্ছি। কথাটা শেষ হতে না হতেই তুমি আমার উপর চড়াও হও আমি ভয়ে নিজের রুমের দিকে দৌড় লাগায় তুমিও আমার পেছন পেছন আমার রুমে চলে আসো। বেডের উপর আমাকে ফেলে দিয়ে বলো আমি আজ পর্যন্ত নিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথেই সেক্স করিনি আর তুই যাবি আমার নামে সেক্সুয়াল হ্যারাশমেন্টর কেস করতে। ঠিক আছে যা কেস করতে তার আগে সেক্স তো করি। তারপরে তুমি জোর করে আমাকে সেক্স করার চেষ্টা করো আমি ধাক্কা দিতে দিতে বলি ব্যথা করছে আমাকে ছাড়ো। তুমি পাগলের মতো হাসি দিয়ে বলো ব্যথা করছে ব্যথা। তোকে তো আমি কিছুই করলাম না আর তুই এই সামান্য শারীরিক ব্যথাই সহ্য করতে পারছিস না তবে বল আমি কেমন করে অতো মানসিক ব্যথা নিয়ে বেঁচে থাকবো। আমার তবে মরে যাওয়াই উচিত। হঠাৎ করে আমাকে ছেড়ে উঠে গিয়ে পাগলামী শুরু করে দিলে -- একটা ছু্ঁড়ি চাকু যা পারবে দাও আমি হাতের শিরা কাটবো --আমার আর সহ্য হচ্ছে না, আমি আর এই মানষিক যন্ত্রনা সহ্য করতে পারবোনা --- এটা বলেই বার বার চিৎকার করছিলে, তোমার হাত পা পুরো কাঁপছিল, ড্রাগাডিক্ট ড্রাগ না পেয়ে যেমটা করে তুমিও ঠিক তেমনটাই করছিলে।
তোমার ওই দৃশ্য দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছিলাম। দৃশ্য গুলো মনে পড়ায় ঋতু এখনও একবার ভয়ে কেঁপে গেল।
কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ভাবলাম তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরি, তুমি যদি আবার আমার উপর ক্ষেপে যাও ওই ভয়ে একটু সরে গেলাম। ঠিক ওই মুহূর্তে বাথরুমের দিকে চোখ পড়লো। সাহস করে তোমাকে জোর করে টেনে নিয়ে গিয়ে সাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে সাওয়ার চালিয়ে দিলাম। তোমাকে দাঁড় করানোয় যাচ্ছিলোনা আর আমার শরীরে কি করে যে তখন অতো শক্তি আর সাহস এসেছিল বলতে পারবোনা। তোমাকে সাওয়ারের নিচে দাঁড় করাতে গিয়ে আবার আমাকে ভিজতে হলো। বোধহয় আধা ঘন্টার উপর তোমাকে ওইভাবে চেপে ধরে ছিলাম তারপরে তুমি একটু শান্ত হও। বাপরে বাপ এতো জেদ কার থাকে? আর তুমি ওইদিন কিসের নেশা করেছিলে ? অতো কিছু হওয়ার পরও তোমার নেশা কাটেনি তুমি শুধু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলে।
তোমাকে রুমে এনে চেয়ারে বসিয়ে নিজে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে তোমাকে চেঞ্জ করতে লাগলাম। তোমার ডান বুকের উপর শ্রেয়ার নামের ট্যাটু বানানো আছে। প্রথমবার ট্যাটুটা দেখে ভেতরে কেমন যেন একটা অনুভুতি হয়েছিল। একটু ভেবে নিয়ে বললো, "জানি না ওটা কিসের অনুভূতি ছিল। হয়তোবা শ্রেয়ার জায়গায় শ্রেয়শ্রী নামটা আসা করেছিলাম।" এবার একটু মনমরা হয়ে ঋতু প্রশ্ন করলো, "আচ্ছা সীমা ওটা তো পারমান্যান্ট ট্যাটু, ওটা কি তবে সারাজীবন ওই ভাবেই তোমার সঙ্গে থেকে যাবে?"
ঋতুর কথাগুলো সীমা মন দিয়ে শুনছিলো আর মনে মনে কি যেন সব ভাবছিল। ঋতুর প্রশ্নের সীমিত উত্তর দিলো, শুধু দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,"হ্যাঁ"।
সীমার উত্তর ঋতুর মনের ভেতরে কোথাও যেন জোর একটা ধাক্কা দিলো ঋতুর চোখ ছলছল করতে করতে জল বেরিয়ে আসলো। ঋতু আর নিজের চোখের জলকে বাঁধা দিতে পারলোনা, ওই জল একসময় সীমার জামাকে ভিজিয়ে সীমার গলায় গরিয়ে পড়লো। এতোক্ষণে সীমার জ্ঞান হলো, ঋতুকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে? চাপা কান্নার চাপে ঋতু কোনো উত্তর না দিতে পেরে সীমার বুকের মাঝে নিজের মুখটা লুকিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকলো। সীমা ঋতুকে নিজের বুকের উপর শক্ত করে চেপে ধরে হালকা গলায় বললো, " ওর নাম আদও শ্রেয়া না। এই নামটা আমার খুব পছন্দ তাই আমি ওকে এই নাম ধরে ডাকতাম। হ্যাঁ আবার এটাও ঠিক যে এখন এই নামটার সাথে একটা মুখ জড়িয়ে গেছে।"
সীমার উত্তরে ঋতু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হঠাৎ করে উঠে বসে চোখ মুছতে মুছতে বললো, "তবে ওর আসল নাম কি?"
সী: তোমার ওটা না জানলেও চলবে।
ঋ: বলোনা
সী: কেন নিজে থেকে কষ্ট পেতে চাইছো ।অতীতকে যত কম জানতে চাইবে ভবিষ্যৎ ততো বেশি ভালো হবে। এবার তুমি আমাকে বলো তোমার কেন লেগেছিল ওখানে শ্রেয়ার নাম না থেকে শ্রেয়শ্রীর নামটা বেশি মানানসই ছিল? শ্রেয়াই আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল শ্রেয়শ্রী না।শ্রেয়ার নামটা শুনে ঋতু কটমট করে সীমার দিকে তাকিয়ে বলল, "শ্রেয়া শুধু তোমার প্রীয় নাম না, ওটা শুধু একটা মুখ পেয়ে যায়নি ওই নামটি তোমার জীবনে শুধুমাত্র একজনের অস্তিত্বকে ওর স্মৃতিকে তুলে ধরবে। আমার আর লাগবেনা ওর আসল নাম জানা।"
মনে মনে বললো, " তোমার মনের মাঝে লিখা শ্রেয়া নামটিই যথেষ্ট আমার মনের কষ্ট জন্য, ট্যাটুটা শুধু নিমিত্ত মাত্র।"
সীমা একটু জিভ কেটে চোখটা বন্ধ করে বললো, " কিন্তু তুমি এখনও বললেনা !!"
কোনো ভনিতা না করে ঋতু বললো, "তুমি লেসবিয়ান এটা তুমি বুক ফুলিয়ে প্রকাশ করেছিলে। তোমার সাহসের জবাব দিতে হবে! মেসের বাকীরা যে এই ব্যাপার নিয়ে বিশেষ একটা ঝামেলা করেনি এটাও একটা বড়ো ব্যাপার। তুমি লেসবিয়ান তাই স্বভাবতই তুমি যে একজন মেয়েকেই ভালো বাসবে এটা স্বাভাবিক একটা বিষয়। তোমার সাথে শ্রেয়শ্রীকে অনেকবার দেখেছি আর তোমাদের কেমেস্ট্রী দেখে আমার ভুল ধারণা হয়েছিল শ্রেয়শ্রী তোমাকে ভালোবাসে আর তুমিও ওকে ---- থাক আর বললাম না।"
সীমা বিস্মৃত হয়ে বললো," শ্রেয়া আর শ্রেয়শ্রী যে দুইজন আলাদা মানুষ এটা মেসের কেউ জানেনা, তুমি ওটা জানলে কি করে ? এই তুমি আগে থেকেই আমার উপর গোয়েন্দাগিরি করতে না তো আবার??"
ঋ: আমার গোয়েন্দাগিরি করতে বয়ে গেছে। একদিন তোমাকে দেখেছিলাম সিপি পার্কে ঝোপের ধারে নতুন একজনকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে, মেয়েটা বারে বারে তোমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল তোমার হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিচ্ছিল। একটু ঘুরে থাকায় ওর মুখটা ভালো করে দেখা হয়নি .... কিন্তু সন্দেহ ছিল ওটা শ্রেয়শ্রী না। মেসে এসে দেখি শ্রেয়শ্রী মেসের বাইরে তোমার জন্য অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাই ধারনা হয়েছিল তুমি শ্রেয়শ্রীর সাথে প্রতারনা করছো কিন্তু ভুলটা ভাঙলো ওই নেশার দিন ......To be Continued....