মুগ্ধকর

118 5 0
                                    

অভিষেক বাবু আগের ওই শোফাটির উপর বসে মাথা নিচু করে পেপার পড়ছেন। আমার পায়ের শব্দে মাথা তুলে চশমাটা মুছতে মুছতে হাসি মুখে বললেন, "আসো আসো এইদিকে আসো, এই যে আমার পাশেই বসো।" বলে হাত ধরে খুব স্নেহের সাথে পাশে বসিয়ে বললেন, "তোমার সঙ্গে তখন কথা বলতে পারিনি, তুমি কিছু মনে করো নি তো? এবার বলো, তুমি কি কোনো কাজে এসেছো না শুধুমাত্র আমার দিদির সাথে দেখা করতে এসেছো?"
একটু আগে বন্ধ দরজার ওপারে যে সব ঘটনা গুলো ঘটেছে তার রেস এখনো কাটেনি, তাই কথা বলার জন্য গলাটা এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার না তবুও ভাঙা ভাঙা গলায় কোনো রকমে কথা বলার চেষ্টা করলাম,"আ..মি.. এক... টা...."

ওঃহো এর মধ্যেই তোমার গলার এরকম বারোটা বাজলো কি করে? রোদ থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা খেলে গলার তো এমন দশা হবে, ঋতু টাও দেখছি দিন দিন কেমন যেন একটা বোকা মার্কা হয়ে যাচ্ছে।
আমি মাথা নাড়িয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম তেমন কিছু না তারপর ইশারাতেই জল চাইলাম।
এক কাজের মেয়ে এসে গ্লাসে করে জল দিয়ে গেল, জলটা এক নিঃশ্বাসে খেয়ে গলাটা ঝাঁকিয়ে পরিষ্কার করে একটু সাহস আর ভয় ভয় হাসি নিয়ে বললাম, "গরমকাল তো তাই গলাটা শুকিয়ে গেছিলো।"

ঠিকই বলেছো বড্ড গরম, এবার বলো কি কাজে আসা হয়েছে। একদম লজ্জা করবে না, তুমিও তো ঋতুর মতো আমার নাতনী।

এবার একটু ধাতস্থ হয়ে সাহস করে বললাম, "আসলে দাদু একটা বড়ো সমস্যায় পড়ে আপনার কাছে আসা। আমি আপনার কেন্দ্রের দূর্গাপুর গ্রামে থাকি। আপনি হয়তো আমার বাবাকে চিনতে পারবেন, রাজদীপ সরকার ...."

চশমাটা চোখ থেকে খুলে ফ্রেমের এক কোণে মুখ লাগিয়ে ভাবতে ভাবতে বললেন, "কোন রাজদীপ সরকার??"

ওই যে যিনি দূর্গাপুরের রেশনের ডিলার আছেন।

বাবাকে আমি বিশেষ একটা পছন্দ করিনা তবুও কারো সামনে নিজের দাম্ভির্য দেখাতে অথবা কোনো কাজ বার করার সময় হলে কারণ না থাকা সত্ত্বেও বাবার নামটা ব্যবহার করি।
বাবার নাম শুনে বিধায়ক বাবু ভ্রু টা কুচকে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে আরও মন দিয়ে শুনতে লাগলেন।
আমি আবার বলতে শুরু করলাম, "গতকাল রাত্রে আগুন লেগে আমাদের গ্রামের দশ বারোটা ঘর একেবারেই পুড়ে গেছে, লোকগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। ওই পোড়া ঘরবাড়ি গুলোর মেরামতের জন্য যে সামান্য কিছু টাকার দরকার সেই সামান্য টাকাটাও জোগাড় করতে হয়তো তাদের কষ্ট হবে। সরকার তো এইসব লোকেদের বাড়িঘর বানিয়ে দেবার জন্য প্রকল্প চালু করেছে। তাই বলছিলাম দাদু আপনি যদি ব্যাপারটা একটু নিজে দায়িত্ব নিয়ে দেখতেন তবে অনেক সুবিধে হতো, অতগুলো লোকের ভোগান্তি দূর হয়ে যেতো।"
আগুন লাগার কারণ কিছু জানতে পেরেছো ??
মাথা নাড়িয়ে বললাম, "না।"
অভিষেক বাবু শোফা থেকে উঠে টেবিলের কাছে গিয়ে ডয়ার খুলে একটা সিগারেট বার করে ঠোঁটে ধরলেন।
লাকিদা বললো আপনার কাছে আসতে..
লাকিদার নাম শুনে তাঁর ঠোঁট থেকে সিগারেট টা ঠাপ করে পড়ে গেল। সিগারেট টা হাত দিয়ে ধরে নিয়ে আরও দ্বিগুন ভ্রু কুঁচকে বললেন, "এই লাকি টা কে? ওই ইঞ্জিনিয়ার বাবু নাকি?"
আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম।
ওঃ, জানতো ছেলেটা বড্ড বেশি ব্রিলিয়ান্ট। আর বেশি ব্রিলিয়ান্ট বলেই এমন পাগল। আমার জামাই মশাইয়ের কোম্পানিতেই চাকরি করতো, ওদের কোম্পানি আমেরিকায় যে হোটেলটি বানালো তার সম্পূর্ণ ডিজাইন টাই বানিয়েছে তোমার ওই লাকিদা। কিন্তু কি যে হলো ছেলেটার কাউকে কোনো কিছু না বলে হঠাৎ করে একদিন দেশে চলে আসলো। জামাই বাবু বারবার ফোন করে পাগল করে দিয়েছিল। তোমার লাকিদাকে ভালো অফারও দিলাম, যত টাকা বেতন চাইবে ওকে দেব, বাকি আর যত সুযোগ-সুবিধা চাইবে ওকে দেব, নিজেস্ব গাড়ি-বাড়ি চাইলে ওটাও দিতে বলতাম, পরিবার নিয়ে থাকতে চাইলে সেটারও অনুমতি করে নিতাম কিন্তু না সে কিছুতেই যেতে রাজি হলো না। ভালো কাজ জানা লোকের বাইরে প্রচুর দাম বুঝলে তো। কিন্তু সে যে ওই একবার গোঁ ধরে বসলো যাবেনা, ওকে কিছুতেই রাজি করাতে পারলাম না। পরে জানতে পারলাম ছেলেটা গ্রামের উন্নয়নের কাজে মন লাগিয়েছে। ওকে অফার দিলাম আমার সাথে রাজনীতি করার কিন্তু না সে এটাও করবে না। তবে বলো এখন কি কাজ করছে তোমার লাকিদা  ??
পর্দার তলা দিয়ে একজোড়া পায়ের চলাফেরা দেখতে দেখতে তাঁর কথা গুলো শুনছিলাম। দাদার কথা শুনে কেন জানিনা নিজেরো খুব গর্ব হচ্ছিলো। পা দুটো ধীরে ধীরে পর্দা পেরিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল। হালকা সোনালী রঙের প্লাজো পরা গাঢ় কালচে নীল রঙের ফিতে লাগানো হালকা হিল উঠানো জুতোর সাথে ওই গাঢ় লাল রঙের নেলপালিশ লাগানো গমের মতো সাদা পা দুটি দেখতে সত্যিই খুব সুন্দর লাগছিলো।

এই যে তোমরা কি খাবার-দাবার খাওয়া ছেড়ে দেবে তাই ভাবছো !!?
ওঃ কি হলো, গলাটা ঠিক ঋতুর মতো শোনাচ্ছে না??
চোখ তুলে দেখি, এতো সত্যিই ঋতু। এ আবার কবে থেকে প্লাজো-কূর্তা পড়তে শুরু করলো? জিন্স-টপ ছাড়া আজ অবধি দ্বিতীয় কোনো পোশাকে ঋতুকে দেখেছি বলে আমার মনে নেই। তবে এই ভেজা খোলা চুলে ওকে দেখতে বেশ মিষ্টি লাগছে, একবার তাকিয়ে অন্য দিকে চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করছে না। সত্যিই মুগ্ধকর এক রূপ ওর।

আদর করে বিধায়ক বাবুর গলাটা জড়িয়ে ধরে আড় চোখে আমার দিকে চেয়ে বলল, "এই যে বুড়ো তুমি যদি সত্যি সত্যিই বুড়ো হয়ে যাও তবে কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না, তোমার সামনেই অন্য কারো হাত ধরে পালিয়ে যাব, আর তুমি নিরুপায় হয়ে জল ভরা চোখে ড্যাবডেবিয়ে দেখতে থাকবে।"
একটু রাগ মাখানো ভঙ্গিমা নিয়ে বললো, "যাও গিয়ে এবার খাবারটা খেয়ে নাও। আর এই যে তুমিই বা কোথায় যাচ্ছো??"
কেন বাড়ি যাচ্ছি।
খাবে না ??
বাড়ি গিয়ে খাবো।
শোনো টেবিলে খাবার দেওয়া আছে, বেশি কথা না বাড়িয়ে চলো খাবে।
ওর এই চোখের শাসনকে এড়িয়ে যেতে কোথাও যেন একটা বাঁধা আসছে আবার ওর কথা শুনে থেমে যেতেও আপত্তি আছে। কাঁধের উপর বসে থাকা মানুষ দুটো পক্ষে বিপক্ষে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করছে।

To be continued......

অন্য এক ভালোবাসাWhere stories live. Discover now