লোকসাহিত্য কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্য আলোচনা।

0 0 0
                                    

লোকসাহিত্য কি বা তার সংজ্ঞা নির্ণয় করতে গেলে আমাদের আগে জানা দরকার ‘লোক' বলতে আমরা কি বুঝি।

'লোক' বলতে এখন আর কেবলমাত্র গ্রামের ওই কৃষিজীবী ঐতিহ্যবাহী নিরক্ষর জনগণকেই বোঝায় না। আজ 'লোক'-এর সংজ্ঞার বিস্তার ঘটেছে, এখন 'লোক' বলতে আমরা বুঝি – সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি কোন সূত্রে যদি বেশ কিছু মানুষ একত্রিত বা সঙ্ঘবদ্ধ হন, তখন বিশেষ উদ্দেশ্যে সংহত নির্দিষ্ট ওই জনসাধারণকেই 'লোক' বলি।
এই সংজ্ঞায় 'লোক' বলতে যাদের বুঝি তারা আর কেবল গ্রামীণ কৃষিজীবী সম্প্রদায় নন, নন কেবল নিরক্ষর সংহত সমাজের সদস্য – এখানে গ্রাম-শহরের, শিক্ষিত-অশিক্ষিতের মৌখিক ও লিখিতের, কৃষি ও শিল্পের সকল ভেদাভেদ দূর হয়ে যায়। নিরক্ষরের পাশাপাশি, শিক্ষিত মানুষও হয়ে যান লোক বা Folk.

সেই লোকসমাজের ‘সৃষ্ট' সাহিত্য লোকসাহিত্য, সৃষ্ট কিন্তু লিখিত নয়, এই কারণে যে, লোকসাহিত্য মুখ্যত মৌখিক। লোকসাহিত্য মৌখিক কথা নির্ভর। তার কোন লিখিত রূপ যেমন (সংরক্ষণ ব্যতীত) দরকার হয় না, তেমনি তার কোন নির্দিষ্ট রচয়িতা বা স্রষ্টা নেই।

শিষ্ট সাহিত্য যেখানে ব্যক্তির সৃষ্টি, লোকসাহিত্য সেখানে সমষ্টির সৃষ্টি। লোকসমাজের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য হল এর সামাজিক সংহতি। লোকসমাজ এমনই সংহত যে, এর যে কোন সৃষ্টিতে স্রষ্টা খুঁজে পাওয়া ভার লোকসংস্কৃতির যে কোন দিকেই একথা সত্য। তাই বলে -

লোকসাহিত্য বা লোকসংস্কৃতির যে কোন রূপ কখনই লোকসমাজের সকল মানুষ একজায়গায় বসে আলাপ-আলোচনা করে সৃষ্ট নয়, তার এক একটা ধারার সৃষ্টির পিছনে কোন না কোন একক মানুষের ভূমিকা শুরুতে হয়তো ছিল, কিন্তু সংহত সমাজের সমবেত আওয়াজের ভীড়ে হারিয়ে গেছে সেই একক মানুষের একক চেষ্টার নজির।

তাই সব মিলিয়ে, লোকসাহিত্য কাকে বলে? এর উত্তরে বলা যায় - লোকসাহিত্য হল সংহত একদল মানুষের সমবেত সাহিত্য সৃষ্টি, যা মূলত মৌখিক ও ঐতিহ্যবাহী, যার সৃষ্টি লিখন নয়, মুখের ভাষাকেন্দ্রিক।

ফোকলোর তত্ত্ব ও বাংলা লোকসাহিত্য Where stories live. Discover now