মনোসমীক্ষণ মতবাদ :০৩

0 0 0
                                    

সিগমুন্ড ফ্রয়েড (মে ৬,১৮৫৬-সেপ্টেম্বর ২৩,১৯৩৯) ছিলেন একজন অস্ট্রিয় মানসিক রোগ চিকিৎসক এবং মনস্তাত্ত্বিক। তিনি মনঃসমীক্ষণ (Psychoanalysis) নামক মনোচিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবক। ফ্রয়েড “মনোবীক্ষণের জনক” হিসেবে পরিগণিত। যেসব ব্যক্তি তাদের তত্ত্ব দিয়ে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছেন ফ্রয়েড তাদের মধ্যে অন্যতম। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব।
#ফ্রয়েডের_মনঃসমীক্ষণ_তত্ত্ব :-
মানুষের মন প্রচন্ডভাবে গতিশীল এবং এই মন নামক মানবিক উপাদানটি সহজাত প্ৰবৃত্তির তাড়না,বিরোধ, গূঢ়ৈষা,অবদমন ইত্যাদির মতো কিছু ইচ্ছামূলক ক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মনোবিদ্যায় সচেতন মনের ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে আলোচনার পাশাপাশি অবচেতন মনের ক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনারও বিস্তৃতি হয়েছে। অবচেতন মনের অস্তিত্বে বিশ্বাসী মনোবিদরা মানুষের সমস্ত আচরণের নির্ধারক হিসেবে অবচেতন মনকে বিবেচনা করছেন। মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিদের আচরণ ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের ফলে মনবিদ্যার এক বিশেষ শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যাকে বর্তমানে বলা হয় মনঃসমীক্ষণবাদ। এই মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ফ্রয়েডের নাম উল্লেখ করা যায়। মানুষের আচরনের প্রকৃত স্বরূপ বিশ্লেষণে মনোবিদ্যার এই শাখা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। ফ্রয়েডের মতে আমাদের মনোজগতে যত ভাব,অনুভূতি, আবেগ ইত্যাদি আছে, তা তিনটি শ্রেণিভুক্ত। ফ্রয়েডের পূর্ব পর্যন্ত মনের অন্যান্য অংশের ক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের বিজ্ঞানসম্মত ধারণা ছিল না। তিনি বলেছেন তিনটি স্তর আছে-
ক.চেতন(Conscious),
খ. অবচেতন( Subconscious)বা প্রাকচেতন (pre-conscious) এবং
গ. অচেতন(Un-conscious)।
(০১). চেতন মন (Conscious Mind) :-
মনের যে অংশের সঙ্গে বাস্তব জগতের সম্পর্ক বর্তমান বা মনের যে অংশের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা সচেতন, তাকেই তিনি বলেছেন চেতন মন(Conscious Mind)। যখন আমরা কোনো কাজ করি বা কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করি,কোনো কিছু উপলব্ধি করি,কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তখন আমাদের মনের এ অংশ কাজ করে থাকে।

(০২) অবচেতন মন ( Subconscious Mind) :-
এটি মনের সবচেয়ে বৃহত্তর অংশ। অবচেতন মনে অবস্থিত বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও অবচেতন মনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই থাকে না। এক কথায় আমাদের অবচেতন মনের দরজা হলো আমাদের সচেতন মন;যার মাধ্যমে আমাদের অর্জিত স্মৃতি,অভিজ্ঞতা আমাদের অবচেতন মনে সংরক্ষিত হতে শুরু করে। এই অবচেতন মনই কিন্তু মানুষের ব্যক্তিত্ব নির্ধারণ করে থাকে। চেতন মনের সাথে অবচেতন মনের পার্থক্য হল চেতন মনকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও অবচেতন মনকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। অবচেতন মন- ই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ফ্রয়েডের মতে, মানব মনের প্রায় ৯০ শতাংশই অবচেতন বাকী কেবল ১০ শতাংশ চেতন অবস্থায় থাকে।
(০৩) অচেতন মন (Un-conscious Mind) :-
মনের যে অংশটি আমাদের জাগ্রত চেতনার আড়ালে অথবা সরাসরি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাকে অচেতন মন বলা হয়।অচেতন মন আমাদের জৈবিক প্রয়োজনগুলি যেমন ক্ষুধা, পিপাসা,যৌনতা ইত্যাদির বার্তা আমাদের চেতন মন থেকে সংগ্রহ করে । আবার , মানুষ সচেতন অবস্থায় যেসব চিন্তা, ভাবনা , অনুভূতি উপলব্ধি করে সেই সবকিছু প্রাক-চেতন মনের স্তর পেরিয়ে অচেতন মনে সঞ্চিত হয়।

ফোকলোর তত্ত্ব ও বাংলা লোকসাহিত্য Where stories live. Discover now