তানভীর ফুল আর শাড়িটা টেবিলে রেখে আনমনে একটু হাসল। ও আসলেই পুনম দৌড়াতে দৌড়াতে গেটের কাছে চলে আসে, টের পায় ও। মেয়েটা এত শান্ত আর লাজুক যে নিজে থেকে ওকে জিজ্ঞেসও করে না যে ও কখন আসবে। কেবল জানালা ধরে ওর অপেক্ষা করতে থাকে। এই তথ্যটুকু অবশ্য ও নিজে খুঁজে বের করেনি, আমেনা ফুফু বলে একজন সার্বক্ষনিক মহিলা বহুবছর ধরে আছে এবাড়ির রান্নার দায়িত্বে, তিনি বলেছেন। পরে তানভীর নিজেও সেটা খেয়াল করেছে।আসলে পুনমের দোষ না, ও নিজেই তো পুনমকে সে সুযোগ দেয়নি।
কাপড় পাল্টে খাবার টেবিলে গিয়ে দেখে যথারীতি খাবার গুছিয়ে পুনম তৈরী। খেতে বসে ভাতের বোলটা ওর দিকে এগিয়ে দিতেই টুংটাং একটু শব্দ হলো। পুনম আজ চুড়ি পরেছে আবার? এবার তানভীর চোখ তুলে তাকাতে বাধ্য হলো। পুনম আজ কেবল চুড়িই পরেনি, সুন্দর একটা শাড়ি পরেছে, চোখে আলতো করে কাজলও টেনেছে।
ওর চোখের লম্বা লম্বা পাপড়িগুলোতে যেন অন্ধকার রাতের নেশার মতো হাতছানি দিয়ে ডাকছে তানভীরকে। অথচ পুনম একমনে মাথা নিচু করে খাচ্ছে। তানভীর তাড়াতাড়ি চোখ নামাল। ইচ্ছেগুলো হঠাৎ হঠাৎ এতো বেহায়া হয়ে উঠে কেন?
"কিছু বলার ছিল" তানভীর হঠাতই মুখ খুলল।
"জি বলুন... "প্রায় নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দে উত্তর দিল পুনম।
"আব্বু - আম্মু আসছে কাল, আমি বোধহয় কাল আসতে পারব না। আমার... "
"না.. না ঠিক আছে, আমি বুঝতে পারছি।"
"এমন হতে পারে যে তিন চারদিন বা সপ্তাহ খানিক লাগল... আসলে হঠাৎ করে বিয়ের কথাটা শুনলে ওনারা কেমন রি-অ্যাক্ট করবে আমি বুঝতে পারছি না।"
"কোনো সমস্যা নাই.. আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন।"
"আমি অবশ্য প্রতিদিন একবার করে ফোন করব তোমাকে।"
"আপনি প্লিজ যেটাতে আপনার সুবিধা হয় করুন, আমার কোনো সমস্যা নাই।"
"হুমম....."
রাতে বিছানায় শুয়ে পুনম কেবল এপাশ ওপাশ করতে লাগল। কী ভয়নক একটা কথা তানভীর ওকে বলেছে সে জানেনা। এক সপ্তাহ! এক সপ্তাহ তানভীরকে দেখতে পারবে না। ও বলেতো দিল কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু এখনই তো ওর দুচোখের পাতা এক হচ্ছে না। এক সপ্তাহ কী করে কাটবে? আর আদৌ এই এক সপ্তাহতেই ওদের এই দূরত্ব ঘুচবে কী? এমন যদি হয় যে তানভীরের বাবা- মার ওকে পছন্দ না, তখন।