পুনম কেবল খাবার হাতড়ে বেড়াচ্ছে সমস্ত প্লেটজুড়ে, কিন্তু আদতে ও কিছুই খেতে পারছেনা। অন্যমনস্ক ভাবে দুই একটা ভাতের দানা খুটে খুটে দুই ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরছে, ব্যাস এই পর্যন্তই। না কোন তরকারী, না ডাল, এক্কেবারে শুধু সাদা ভাত।
পুনম ঠিক কোন খেয়ালে ডুবে ছিল নিজেই জানেনা, হঠাৎ পায়ে সুরসুরি লাগাতে চমকে তাকাতেই দেখে তানভীর মিট মিট করে হাসছে মুখ নিচু করে। ভুলে কি ও ওনার পায়ে পা দিয়ে ফেলেছিল , পুনম ভেবে পেল না। তাড়াতাড়ি পা টানতে যেয়ে দেখে তানভীর নিজের পাটা ওর পায়ের উপর তুলে দিয়েছে । তানভীরের মুখের দিকে তাকাতেই আরও ভড়কে গেল পুনম, নিপাট ভদ্রলোক সে। খুব মনযোগের সাথে খাবার খাচ্ছে, কেবল ঠোঁটের কোনে হাসিটা ঝুলছে আর সেটা যে কেন.... পুনমের বুঝতে অসুবিধা হলো না।
তানভীরের পা তখনও ওর পায়ের উপর দিব্যি রাখা, সেই অবস্থাতেও তানভীর খেয়ে যাচ্ছে, যেন এটা কোন ঘটনাই না, খুবই সাধারন ডাল ভাত মার্কা কোন ব্যাপার। কিন্তু পুনম পারছে না। পায়ে পা লেগে সেখানকার রক্তে প্রচন্ড জোরে ঘুর্ণী তৈরী হচ্ছে, আর এখন সেটার বেগ প্রতি মুহুর্তে কেবল প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। কখন কূলে আছড়ে পড়বে কে জানে আর তখন পুনম স্বাভাবিক থাকতে পারলে হয়।
"কূ ব্যাপার পুনম.. … কোন সমস্যা হচ্ছে? " আফরোজা জিজ্ঞেস করে বসলেন। পুনমের মুখ ততক্ষণে পাকা টমেটোর রং ধরেছে।
"না.. মানে.. না কিছু না, " পুনম হাত নামিয়ে বসে থাকলো। এভাবে কীভাবে কী? এরকম পা এর উপর পা দিয়ে চেপে রাখলে ও মুখে খাবার তুলবেই বা কী করে, আর গিলবেই বা কী?
হৃৎপিণ্ডের চলমান শব্দটা এখন ঢাকের মতো মনে হচ্ছে , গলা শুকিয়ে কাঠ, সাথে পায়ের পাতার দস্যিপনা বাড়ছে নিঃশব্দে, পুনমের সাহস হচ্ছে না মুখে খাবার তোলার। যদি খাবার গলায় বেঁধে যায় ওর, তখন? আড়চোখে পুনম একবার পাশে তাকাতেই তানভীর কথা বলে উঠল।
"আরে পুনম, খাচ্ছো না কেন, খাও প্লিজ। "
তানভীর খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতেই কথাটা বলল। সাথে তখন সে আবার তার সামনের বাটিতে রাখা মাছের তরকারি থেকে কোন টুকরোটা নিবে সেটাও দেখছে।