তানভীর নতুন কিনে আনা শেরওয়ানিটা পরে ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল। বোতামগুলো আটকাতে আটকাতে উপরের একেবারে শেষ বোতামটা পর্যন্ত আটকালো, তারপর নিজে নিজেই মুখ বেকিয়ে বললো,
" তানভীর তোরে তো আবুল আবুল লাগতেছেরে ভাই।"স্কুলের বন্ধুরা বলতো, ও নাকি লম্বা রেসের ঘোড়া। কথাটা মনে হতেই হেসে ফেলল তানভীর। জীবন নামের লম্বা এক দৌড় তো সে দৌড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত কিন্তু শেষপর্যন্ত বিজয়ীর তকমাটা কি লাগবে ওর নামে... কিছুদিন আগেও নিজেকে খুব আত্যপ্রত্যয়ী মনে হতো ওর। কিন্তু আজকাল সেই বিশ্বাসেও ভাটার টান ধরেছে।
আসলে শেরওয়ানিটা কেমন হলো পুনমের মুখ দেখে তানভীর কিছুই আন্দাজ করতে পারেনি। ম্যাডাম মুখে একেবারে কুলুপ এটে বসেছিল দোকানে। না পেরে শেরওয়ানি কেনার সময় তানভীর নিজেই সেধে জিজ্ঞেস করেছে শেরওয়ানিটা পুনমের পছন্দ হয়েছে কিনা?
একরকম গা বাঁচানো উত্তর দিয়ে তখন চুপ করে গিয়েছে মেয়েটা। কিন্তু ওর এমন নিরাসক্ত উত্তর তানভীরের মন খারাপ হবার জন্য যথেষ্ট ছিল।
বিয়ে নিয়ে পুনমের কি কোন আগ্রহই নেই? নাকি আপুর কথায় মন খারাপ। কিন্তু তানভীর তো ওকে বলেছে যে এসব ফালতু বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে। নাকি ওর উপর বিশ্বাস নেই পুনমের? কিন্তু স্যারের কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পরও কেন পুনম ওকে বিশ্বাস করবে না? মুখটা আবার অন্ধকার হয়ে এলো তানভীরের।
এটা তো ঠিক না, আমজাদ স্যারের কোনো কাজে পুনম সন্দেহ করলে তানভীর ব্যাক্তিগতভাবে খুব দুঃখ পাবে। পুনমের সাথে মানসিকভাবে ওর কোন দূরত্ব তৈরী হোক এটা তানভীর একেবারেই চায় না। বিয়ে তো দুটো মানুষের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হওয়ার প্রথম সোপান। এখন মানসিকভাবে তানভীর যদি পুনমের সেই বন্ধু হতে ব্যার্থই হয় তাহলে ও আর কেমন কথা রাখল আমজাদ স্যারের। আমজাদ স্যার অনেক বিশ্বাস করে ওর হাতে তার একমাত্র মেয়ের হাত দিয়েছেন। তানভীর যে কোন মূল্যে এই ওয়াদা পালন করবে।
সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পর থেকে ঘরেই শুয়েছিল পুনম। কিছুই ভালো লাগছে না। রাতের খাবার না খেয়েই তাই শুয়ে ছিল ও।