পুনমের খুব অস্বস্তি লাগছে। তানভীরের দুইচোখ যে ওর দিকেই সেটা আড়চোখে ও দেখেছে একবার। কিন্তু তারপর থেকেই ওর মনে হচ্ছে ওর কান লাল হয়ে যাচ্ছে, ঘাড়টা গরম নিঃশ্বাসে পুড়ে যাচ্ছে, খুব ভয়নক অবস্থা। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে পুনম মুখটা একদম নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। একদম দেখবে না তানভীরকে এখন, না হলে ওর ওই মুচকি মুচকি হাসি দেখলেই ও ঠিক কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যাবে।
ওরা এই মুহূর্তে একটা লিফটে করে উপরে উঠছে। লিফটে ওদের পরিবারের লোক ছাড়াও আরও অনেক অতিথিরাই আছেন। তাই লিফটে জায়গার স্বল্পতা একটু আছে। সেই সুযোগে তানভীর ওর হাতটা ধরে নিজের একদম সামনে দাঁড় করিয়ে দিল যাতে অন্য লোকের সাথে ধাক্কা না লাগে। তানভীর ওর হাত ধরতেই পুনম তাড়াতাড়ি শাশুড়ির দিকে তাকিয়েছে। কিন্তু ভাগ্য ভালো লিফটে অনেক লোক, সাথে দুই তিনটা বাচ্চাও উঠেছে, তাই ওই ছোট্ট ঘটনাটা বোধহয় শ্বশুর - শাশুড়ির চোখে পড়েনি। কিন্তু তাও পুনম লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিল। একবার দুবার এর মধ্যে তানভীরের পাশে ও বসেছে কিন্তু এরকম করে হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে দাঁড় করানোর মধ্যে ভীষন রকম একটা দাবী আছে, এটা পুনমের খুব ভাল লেগেছে। পুনমের চোখটা ওই মুহূর্তে ভিজে এসেছিল। চট করে আঙুল দিয়ে পুনম সেটা মুছে নিয়েছে।
অনুষ্ঠানটা আফরোজার এক ভাতিজার । একটু পর পর আত্মীয় স্বজন আফরোজাকে জিজ্ঞেস করছে," কেমন আছ? তারপরই জিজ্ঞেস করছে তোমার পাশে এই মেয়েটা কে? একে তো ঠিক চিনতে পারলাম না। "
আফরোজা হেসে বলছেন, "আমার নতুন মা।"
পুনম এই উত্তর শুনে মাথা নিচু করে ফেলেছে আনন্দে। এরা কি সবাই এরকম, এত ভাল!
বাসায় ফিরে পুনম ওর বিছানার চাদর পরিস্কার করছিল আর পরিচিত এক গানের কলি গুনগুন করে গাচ্ছিল।
এমন সময় দরজায় মৃদু ঠকঠক শব্দ শুনে প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেল পুনম। সাথে সাথে ঘড়ির দিকে চোখ গেল ওর। প্রায় সোয়া এগারোটা বাজে। এখন কে আসতে পারে এঘরে!
কে জানতে চাইলে ওপাশ থেকে তানভীরের গলা শোনা গেল।
তানভীর এতো রাতে! নিশ্চই কোন গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে, তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল পুনম।