৮ম

665 37 14
                                    


"দেখি মা মুখটা একটু তোল। "

প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্বেও মুখটা উপরে তুলে ধরল পুনম। তানভীরের বড়ো চাচি মনোয়ারা বেগম এসেছেন টাঙ্গাইল থেকে। উনি সাথে করে প্রায় দশ কেজি পোড়াবাড়ির চমচম নিয়ে এসেছেন। পুনমের বাবার বাড়ির জন্য পাঁচ কেজি আর এই বাড়ির জন্য পাঁচ কেজি। উনি জানতেন না পুনম একদম একা। চাচিমা কেবল জানতেন যে ওর বাবা মারা গিয়েছেন কিন্তু পুনম যে একেবারেই এতিম, এটা জানতে পেরে তিনি খুবই দুঃখিত হয়েছেন । মনোয়ারার নিজের কোনো ছেলে নেই, তানভীরকে তিনি নিজের ছেলের মতোই আদর করেন।

"এটা পরো মা "

পুনমের গলায় সরু একটা সোনার চেইন পরিয়ে দিলেন মনোয়ারা।

" তোমার চাচার অবস্থা তো তেমন ভালো না মা, ভারী হার দেওয়ার শখটা তাই শখই থেকে গেল।"

"যত্তোসব আদিখ্যেতা। কী এমন হাতি- ঘোড়া বিয়ে হচ্ছে যে চাচির একেবারে মোটা মোটা সীতাহার দিতে হবে... ফালতু একটা মেয়ে।"

মিতুর মুখ ভেঙচানো দেখে মন খারাপ হলো আফরোজার। মিতুর এই এক খারাপ স্বভাব, কোনো কিছু একবার মেনে নিতে না পারলে তখন কেবল তার ভিতর থেকে ত্রুটি বের করতে থাকে।

"মিতু এমন বলিস না মা। বড়ো ভাবী শুনলে কিন্তু খুব দুঃখ পাবে।"

"আরে বড়মা ইমোশনাল হয়ে ওকে কতো কিছু দিচ্ছে দেখেছ?।কিন্তুু তোমার ছেলের বউয়ের কি সেই যোগ্যতা আছে? মাঝখান থেকে এখন থেকেই দিয়ে দিয়ে ওনাকে লোভী বানিয়ে ফেলো।"

"যোগ্যতা আছে কী নেই সেটা জানবি কী করে? মানুষের সাথে আলাপ করলে না সেটা জানতে পারবি। কিন্তু তোর তো ওর ছায়া দেখলেও গা জ্বলছে।"

মার কথায় মিতুর রাগ বাড়লো বই কমলো না। চায়ের কাপটা ঠাস করে ডাইনিং টেবিলে নামিয়ে রেখে নিজের রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিল সে।রাজশাহী থেকে এতোদূরে ছুটে এসেই বা কী লাভ হলো? তানভীরটা তো সেই ফকিন্নিকেই বিয়ে করতে ব্যাস্ত।

বড়ো চাচিমার কথাগুলো এতো মায়া জড়ানো যে পুনমের মনে হলো চাচীমার গলা জড়িয়ে ধরে বলে যে, আমার সোনার হার চাইনা চাচীমা, আমাকে শুধু আপনারা নিজের মেয়ের মতো মনে করে আদর করুন,মারুন,বকুন। আমার যে এই আদর আর শাসনের প্রতি বড়ো লোভ। কিন্তু আড়চোখে মিতুকে ডাইনিং টেবিল থেকে রাগ করে উঠে যেতে দেখেছে পুনম। তাই চুপ করে থাকাটাই ভালো মনে করলো ও। নীরবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলা ছাড়া আসলে আর কিছু করার নেই ওর।

সুরের বাঁধনে Where stories live. Discover now