পর্ব ১

50 4 0
                                    

গলায় অদ্ভুত ছোঁয়া অনুভব করে ঘুম ভেঙে গেল। প্রায় ঘুম ঘুম অবস্থাতেই গলায় হাত ঘষে একবার চোখ মেলে তাকালাম। তারপর আবার চোখ বুজে নেয়ার সাথে সাথেই ঠোঁটে কেমন যেন ছোঁয়া অনুভব করলাম। এক ঝটকায় উঠে বসে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে চারপাশে ইতস্ততভাবে তাকালাম।

কেউ নেই! কেউ না থাকাটাই স্বাভাবিক।

আমি জারিফ আহমেদ অভ্র। সবে মাত্র পড়াশোনা শেষ করেছি। আমার বাবা-মা নেই। অনেক আগেই তারা ইন্তেকাল করেছেন। আমি একাই থাকি। একাই ঘোরাঘুরি করি। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আগের মত দেখা হয় না।

মাঝে মাঝেই জুনিয়র একটা মেয়ের সাথে দেখা করি। মেয়েটার নাম মৌলি।

মৌলির সাথে আমার পরিচয় অনেক পুরোনো। আমি তখন কলেজে পড়ি। ও স্কুলে পড়ত। যাবার সময় রাস্তায় দেখা হত। কথা বলতে বলতে যেতাম। দেখা-সাক্ষাৎ বলতে একমাত্র ওই আছে যার সাথে আমার এখনও দেখা হয়।

কফিশপে চুপচাপ বসে থাকি। কখনো কখনো এগুলো তুচ্ছ মনে হয়। মনে হয়, ওর চাহিদা সম্পর্কে আমি অবগত নই।

কিন্তু এমনটা মৌলির সাথে নয়। ও আমাকে খুব ভালভাবে বোঝে যেন আমার জন্যেই তার জন্ম।

মৌলির সাথে আমার সম্পর্কটা কি এটা এখনো ক্লিয়ার না। পছন্দের কথায় আসলে হ্যাঁ ওকে আমি অনেক পছন্দ করি। কিন্তু কখনো প্রপোজ করি নি। আমি শতভাগ নিশ্চিত সে আমায় পছন্দ করে। তবুও কেউ কিছুই বলি না। এভাবেই দিন কেটে যায়।

বিশ্রী একটা শব্দে আমার ঘোরটা ভেঙে গেল। রুমের দরজা জানালা বন্ধ। কাঠের জানালার বাইরের দিকে একটা নারিকেল গাছ আছে। ঝড়ের বাতাসেই হয়ত গাছটার পাতা জানালার পাল্লায় ঠকঠক করে শব্দ করছে। দেয়ালে ঝোলানো ঘড়িটার ব্যাটারীর পাওয়ার শেষ। কাঁটাগুলো একই স্থানে খচখচ করে নড়ছে আর সময় দেখাচ্ছে ১০টা ৫।

মোবাইলে সঠিক সময় রাত ২ টা ৪৪।

আমি উঠে লাইট জ্বালিয়ে এক গ্লাস পানি নিলাম। গ্লাসের পানিতে ঠোঁট ছোঁয়াতেই পানিতে রক্তিম কোনো পদার্থ চোখে পড়লো।

আমার ঠোঁট কেটে গেছে!

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি ঠোঁট থেকে রক্ত ঝরেছে অল্প। আঘাত দেখা যাচ্ছে ওখানটায়। হয়তো কোনোভাবে দাঁত লেগেছে।

একটা টিস্যুপেপার নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে খেয়াল করলাম, আমার গলায় বেশ অদ্ভুত কিছু দাঁতের দাগ!

আমি টিশার্টের গলা টেনে দেখলাম, শুধু গলায় না। আমার বুকেও কামড়ের লাল চক্রাকার দাগ।

কি আশ্চর্য!

ঘড়ির শব্দ আচমকা বদলে গেছে। চলতে শুরু করেছে ওটার সেকেন্ডের কাঁটা। সময় এগিয়ে চলছে দশটা ৫ থেকে সামনের দিকে। আমি টিশার্ট খুলে বুকে পিঠে আর কোনো দাগ আছে কি না দেখে নিলাম। আর কোনো দাগ নজরে আসছে না।

সবকিছু কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে।

ঠোঁটের আঘাতটা না হয় আমার দাঁতে লেগে পেতেই পারি, কিন্তু আমার গলায় আর বুকে আমি নিজেই দাঁত বসাবো -তা কি করে সম্ভব!

ভাবতে ভাবতে আয়নায় ঝুঁকে ঠোঁটের আঘাতটা দেখছি, এমন সময় আয়নার মধ্য দিয়ে দেয়ালের ঘড়িটায় চোখ পড়লো। আয়নার প্রতিবিম্বে দেখা যাওয়া ঘড়ির কাঁটা ১০ টা ৫ এ আঁটকে আছে এখনও।

অথচ ঘরের দেয়ালে ঝোলানো ঘড়ির সময় সামনের দিকে চলছে!

(চলবে)

প্রতিবিম্বWhere stories live. Discover now