ট্রাভেল ব্যাগ – এর লাস্ট চেইনটা আটকে মেঘা বললো, “এতদিন পরে তুমি দেশের বাড়ি যাচ্ছো, আমাকে কি বলে পরিচয় দেবে বন্ধু, নাকি গার্লফ্রেন্ড নাকি তোমার বউ, দেখো তোমার মা মানে কয়েকদিন পর আমারও হবে তাহলে তোমার মা আমাকে আবার তোমার বোন না করে দেই”।
আমি মেঘাকে বুকে টেনে নিয়ে বললাম, “আমি যদি বলি তুমি আমার হবু বউ হবে তাহলে ভাবতে পারছো কি কেলেঙ্কারি হবে”
মেঘা আমার বুকে মাথা রেখে আমার শার্টের কলার বোতামটা খুলে বললো, “কিন্তু একদিন তো বলতেই হবে আমি তো আমার বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছি, আর আমার মায়ের তো তোমাকে হেব্বি পছন্দ!”
মেঘা বাম হাতটা আমার জামার ভিতরে প্রবেশ করানোর আগেই হাত চেপে ধরে বললাম, “তুমি থাকো কলকাতা শহরে এখানে এই ব্যাপারটা অনেক সহজ আর সমান দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, কিন্তু আমি কোথা থেকে এসেছি জানো, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর এর প্রতন্ত গ্রাম আনন্দপুর থেকে সেখানে আমি যদি বলি তুমি আমার হবু বউ তাহলে মা সবার আগে আমাকে কল্লোল ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে তুকতাক করবে, ভাবো তখন আমার হাল কি হবে”
“হরিবোল”, একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস সেরে মেঘা আমার বুকে আবার মাথা গুঁজল।
আমিও আমার ফেলে আসা প্রায় বারো বছর আনন্দপুর ও তার লুপ্তপ্রায় স্মৃতিতে ডুব দিলাম।
আমার বয়স তখন বারো কিংবা তেরো, জীবনের যৌবনের দরজায় সবে পা দিয়েছি। সাথে এলো প্রেম অনুভূতি, আমার এলো আবার বিচিত্র ভাবে, ভালো লাগতে লাগলো ঈসা, সুমনাদের গোলাপী ঠোঁট, টোল পড়া গাল, লম্বা চুল, ফুলে ওঠা বুক। জীবনের প্রথম ছোঁয়ায় জানিয়ে দিলো আমার চাপ দাড়ির থেকে নাকে নাকফুল পরা মুখই মন ছুঁয়ে যেতে লাগলো, নিজেকে অনেক ভিন্ন মনে হলেও পড়ার চাপে অত ভাবার সময় কই, তারপর ক্লাস টেন এ আসল ধূমকেতু উদয় হলো। ট্রান্সফার নিয়ে আমাদের স্কুলে এলো নম্রতা, যেমন নাম তেমনি নম্র। আমার প্রথম দেখায় তার বাদামি চোখ যেনো মন সাগরে নাবিক বিহীন জাহাজ হয়ে ভেসে যেতে লাগলো। সে সবার থেকে আলাদা খুবই ডাউন টু আর্থ মানে যাকে বলে অহঙ্কারহীন সবার সাথে ভাব ছিলনা ঠিকই কিন্তু কেউ কথা বলতে গেলে ফিরিয়ে দিতো না। পড়াশুনায় প্রচন্ড বুদ্ধিমতী, অঙ্কের উত্তর যেনো ঠোঁটে লেগে থাকত। আমি নিজে গণ্ডমূর্খ না হলেও পড়াশুনার খাতিরে ওর সাথে ভাব জমাতে হলো, জানিনা কেমন করে বন্ধুত্ব একটু একটু করে গাঢ় হলো। তারপর কয়েকমাস এভাবে চললো, একদিন টিফিনে বাথরুম গেছি আমার পিছু পিছু নম্রতাও হাজির, ঢুকে সটান বাথরুমের দরজা আটকে আমার দিকে ঘুরে, আমি বেশ অবাক হয়ে বলি, “এই দরজা বন্ধ করলি কেনো?”
ও আমার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে এসে বলল, “আমার উত্তর চাই”। গলার স্বর না ভারী না হালকা কেমন যেনো নেশার মতো।
ও এক পা এগোই আমি এক পা পিছাই শেষে আমার পিঠ দেওয়ালে থেকে যায়। আমি থেমে থেমে বলি, “তু… তুই কি..…. বলছিস কি…..সের উত্তর”
“তুমি জানোনা বুঝি”
“তোর আবার কি হলো, তুই থেকে তুমি বলছিস কেনো?”
ও আমার মাথার দু পাশে দু হাত রেখে একটু ঝুঁকে মুখের কাছে মুখ এনে বললো, “আমি তোমাকে নিয়ে যা ভাবছি ওটার পর তোমাকে আর তুই বলা চলেনা”।
আমি ঢোক গিলে বললাম, “কি ভাবছিস তুই খারাপ কিছু?”
“তুমি জানোনা নাকি, আমি সব লক্ষ্য করেছি তুমি কিভাবে আমার চোখ, ঠোঁট আর বুকের দিকে তাকিয়ে থাকো!”
ধরা পড়ে আরো সংকুচিত হয়ে বললাম, “তাকালেই কি প্রমাণ হয় অনেকেই তো তাকাই”
ও বললো, “এটা”, তারপর নম্রতা ওর হালকা লিপস্টিক মাখা ঠোঁট আমার ঠোঁটের বসিয়ে দিল। খুঁজে পেলাম জীবনের না বলা কিছু অধ্যায় আর নিজের অস্তিত্ব। তারপর শুরু হলো কতো প্রতিজ্ঞা, হাতে হাত রেখে সময় কাটানো। কিন্তু কথায় আছে সুখ বড়ো ক্ষণস্থায়ী। কোনো এক দুপুরে নম্রতা এলো আমাদের বাড়ি, দুপুরে খাবার ব্যবস্থা হলো আমাদের বাড়িতে। তারপর দুজনে আমার রুম গিয়ে আদিম খেলায় মেতে উঠলাম, এই সময় মায়ের কিছু দরকার পড়লো, সোজা আমার রুমে এসে না কড়া নেড়ে ঢুকে পড়লো আমার ঘরে, তখন আমি আর নম্রতা দুজনেই আংশিক নগ্ন, ওর হাত আমার বুকের ওপর আর আমার ঠোঁট নম্রতার ঠোঁটে। এরপর আর কিছু বলার অবকাশ থাকলো না, মা মনে করলো আমাকে নম্রতার মা কালো জাদু করে করেছে, তারপর কতো গুনিনগাছা তাও কিছু হলো না, নম্রতার বাবা মা লেখাপড়া জানা মানুষ তারা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলো, তাতে হিতে বিপরীত হলো। আরো বেশি জনাজানির ভয়ে মা আমার মেসোর সাথে পরামর্শ করে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলো উচ্ছবৃত্তির আশায়। আমিও জোর জবস্তি না করে চলে এলাম, নম্রতাকে কথা দিয়ে এলাম আমার জন্য অপেক্ষা করতে। কিন্তু আমি পারিনি কথা রাখতে জীবনে মেঘা এলো নতুন করে ভাবতে লাগলাম, ভুলে গেলাম নম্রতাকে। আজ তেরো বছর পর বাড়ি ফিরছি নম্রতার সেই কান্না ভেজা মুখ আর “আমি অপেক্ষা করবো সারাজীবন” যেনো মনের মধ্যে জীবন্ত হয়ে উঠে এলো।
চোখ চিকচিক করে এক ফোঁটা জল মেঘার গালে পড়লো, মেঘা আমার দিকে মুখ তুলে বললো, “কি হলো, অরু তোমার চোখে জল?”
আমি জল মুছে বললাম, “পুরোনো স্মৃতি আর কি!”
……. To be continued