অধ্যায় দুই

7.2K 104 5
                                    

তৃষার কথা

বিয়ের দিন কনের ঘরে সবসময় মানুষের সমাগম থাকে খুব বেশি । কনের মহিলা আত্মীয় স্বজন আর বান্ধরীরা ঘিরে রাখে তাকে । আমার বেলাতে এই সব কিছুই হচ্ছে না আপাতত । আমি সেই কখন থেকে একা একাই রুমের ভেতরে বসে আছি । আমি আসলে কাউকে ঘরের ভেতরে আসতে মানা করেছি । বান্ধবীরা অবশ্য একটু নাখুশ হয়েছিলো, আমি বলেছি যে আপাতত আমার কিছুটা একা সময় দরকার । জীবনের এতো বড় একটা সময় সামনে চলে এসেছে, নিজের মত করে শেষবার কিছু বোঝাপোড়া করা দরকার !

পরে অবশ্য ওরা আর আমাকে ঘাটায় নি । নিজেদের মত করে আনন্দ উৎসব করছে । আমি ঘরের ভেতরে বসে আছি একা !

অবশ্য এখন আমি বসে নেই । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে আছি । নিজেকে কেমন যেন অচেনা লাগছে ! আমি কি দেখতে এতো সুন্দর ! অবশ্য এখন কে সুন্দর আর কে অসুন্দর, বিয়ের দিন এসব কারো মাথায় থাকে না । ব্রাইডাল মেকাপে দুনিয়ার সবাইকে সুন্দর লাগে । এইজন্য হয়তো আমাকেও সুন্দর লাগছে ।

নিজের ভেতরেই একটা আনন্দের অনুভূতি টের পেলাম । একটা সময় আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে আমার হয়তো আর কোন দিন বউ সাজা হবে না । এমন একটা অপরাধের শাস্তি আমাকে দেওয়া হচ্ছে যেটার জন্য আমি কোনভাবেই দায়ী নই । আশেপাশের মানুষ আর সমাজের উপর আমার খুব রাগ হত ! বারবার যখন বাবার হতাশা মাখা চেহারাটা আমি দেখতাম তখন নিজেকে এতো ছোট মনে হত ! মনে হত যেন মরে যাই । আমি মরে গেলেই বোধ হয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ।

কিন্তু সেই বাবার দিকে তাকিয়েই আমি কিছু করতে পারি নি । আমি চলে গেলে বাবাকে কে দেখে রাখবে । মনে মনে আমার নিজের এই পরিস্থিতির জন্য নিজেকেই দায়ী করে সব কিছু মেনে নিয়েছিলাম । মেনে নিয়েছিলাম যে সবার কপালে আসলে সব কিছু থাকে না । সবাই সব কিছু পায় না ।

অবশ্য সব কিছুর পেছনে যেমন একটা ভাল দিক থাকে, এটার পেছনেও একটা ভাল দিক ছিল । আমার বাবা আমাকে ঢাকায় পড়তে পাঠাতে রাজি হয়েছিলো । আমাদের গ্রাম থেকে আমি এক মাত্র মেয়ে যে কি না ঢাকা পড়তে গিয়েছি । এটার যে সাইড ইফেক্ট ছিল না সেটা বলবো না তবে আমি অন্তত মানসিকভাবে শান্তিতে ছিলাম । সব চেয়ে ভাল হত যদি এই গ্রামে আর ফিরে না আসতে হত । কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না ।

দ্বিতীয় বাসরHikayelerin yaşadığı yer. Şimdi keşfedin